জগন্নাথপুর টাইমসবুধবার , ১২ এপ্রিল ২০২৩, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশে সবুজ বিপ্লবের জনক বঙ্গবন্ধু

Jagannathpur Times BD
এপ্রিল ১২, ২০২৩ ১০:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. এ কে এম শামীম আলম

::

সবুজ বিপ্লব একটি সময়কাল। যে সময়টিতে কৃষিবিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ দ্বারা প্রবর্তিত উন্নত প্রযুক্তি ও কলাকৌশল ব্যবহার বৃহত্তর সবুজ বিপ্লবের প্রচেষ্টার অংশ ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘আরো বেশি খাদ্য ফলান’ স্লোগানে জনগণকে উৎসাহিত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সবুজ বিপ্লব আন্দোলন ছিল খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্যের ‘টার্নিং পয়েন্ট’। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত দক্ষ পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নে দেশ আজ প্রধান প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর এবং বিশ্বে বাংলাদেশের কৃষির সাফল্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

বঙ্গবন্ধুর সবুজ বিপ্লবের পদক্ষেপসমূহের মধ্যে ছিল উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত বীজের ব্যবহার; রাসায়নিক সারের ব্যাবহার; নিবিড় কৃষি কর্মসূচি; ক্ষুদ্র্র সেচ ও কৃষিশিক্ষার প্রসার; উদ্ভিদ সুরক্ষা ও ফসল চক্র অনুসরণ; ভূমি সংরক্ষণ কার্যক্রম; কৃষকদের জন্য ব্যাংক সুবিধা বা ঋণ প্রদান; সেচ সুবিধার জন্য গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ; কৃষি উন্নয়নে তহবিল প্রদান এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার সম্প্রসারণ।

১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তখন যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের কারণে কৃষক মাঠে ফসল ফলাতে সমস্যায় পড়ে। বহু কৃষককে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয় বলে অনেকেই চাষাবাদ করতে পারেনি। ছিল না ফসল আবাদ করার প্রয়োজনীয় বীজ, সার ও কীটনাশক। সেচ সুবিধার ঘাটতিও ছিল প্রকট। কৃষি ও কৃষক না বাঁচলে যে এ দেশ বাঁচবে না এ কথা বঙ্গবন্ধু যথার্থ বুঝতে পেরেছিলেন। যার ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার গঠনের পরপরই তিনি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সবুজ বিপ্লবের ডাক দেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকেই বঙ্গবন্ধু কৃষকদের জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দেশের প্রথম অর্থ বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে কৃষি খাতে ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষক যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য তিনি ১৩ মাসে কৃষকদের মধ্যে ১০ কোটি টাকার তাকাভী ঋণ এবং ৫ কোটি টাকার সমবায় ঋণ বণ্টন করেন। তরিৎ ৮৩ হাজার টন সার, ১৬ হাজার ১২৫ টন ধানের বীজ, ৩ হাজার মণ গমবীজ, এক হাজার ৭০০ মণ আলুবীজ, ৪৫৪ টন পাটবীজ সংগ্রহ করে বণ্টন করেন। সেচের জন্য দুই হাজার ৯০০টি গভীর নলকূপ ও তিন হাজারটি অগভীর নলকূপ স্থাপন করেন। ৪০ হাজার শক্তিচালিত লো-লিফট পাম্প সরবরাহ করে ৮০ লাখ একর জমিতে সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন। বিএডিসিকে ২১টি ট্রাক্টর সরবরাহ করেন। এ ছাড়া নামমাত্র মূল্যে ২১টি পাওয়ার টিলার, হাল চাষের জন্য এক লাখ বলদ, ভর্তুকি মূল্যে ৫০ হাজার দুগ্ধবতী গাভি সরবরাহ করেন। খাদ্য উৎপাদনে সহায়তার অংশ হিসেবে একটানা তিন মাস খাদ্যশস্যসহ ৩০ কোটি টাকার রিলিফও বণ্টন করেন।

উৎপাদনযোগ্য জমি যেন পতিত না থাকে এজন্য জাতির পিতা খাসজমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করেন। বিশ্ববাজারে সারের উচ্চমূল্য যেন কৃষকদের ফসলের জমিতে সার প্রয়োগে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য সারে ভর্তুকি দেন। তা ছাড়া পাকিস্তানি আমলে রুজু করা ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা থেকে কৃষকদের রক্ষা করেন। তিনি ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরতরে রহিত করে দেন। দরিদ্র কৃষকদের রক্ষায় নিম্নমূল্যে রেশনপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়। গরিব কৃষক পরিবারের সন্তান যেন সরকারি খরচে লেখাপড়া করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি সারের ব্যবহার ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। জাতির পিতা উপলব্ধি করেছিলেন, সবুজ বিপ্লব তথা কৃষিবিপ্লব বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রমী চাষিদের সঙ্গে দ্রুত প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রয়োজন হবে। তাই তিনি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের জন্য কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দেন। আজকের কৃষির যতটুকুই উন্নয়ন, সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে তার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ।

স্বাধীনতা-পূর্বকালীন তখন গড়পড়তা ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্যের ঘাটতি দেখা দিত। মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু কৃষি খাতে যে উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন বর্তমানে তার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষ হাতে পিতার দেখানো পথে বাংলাদেশের কৃষি খাতকে পৌঁছে দিচ্ছেন উচ্চতর শিখরে। তার দূরদর্শী চিন্তা, পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের আজ ১৩ খাতে বিশ্বে প্রথম ১০টি স্থানে রয়েছে। কাঁচা পাট রপ্তানি এবং ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। পাটপণ্য উৎপাদন, কাঁঠাল ও ছাগল উৎপাদনে দ্বিতীয়। মিঠাপানির মাছ ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। চাল উৎপাদনে চতুর্থ। আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ। আম ও পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ। তবে এ কথা স্বীকার্য যে, আজকের কৃষির যতটুকুই উন্নয়ন, তার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

ছবি : সংগৃহীত

লেখক : ড. এ কে এম শামীম আলম, উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

drshameem66@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।