মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের লুটন কাউন্সিলের ২০২৫-২৬ খ্রি নতুন ডেপুটি মেয়র হয়েছেন শাহানারা নাসের (মমতা)। তিনিই ব্রিটেনের লুটন কাউন্সিলে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী নারী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়া লুটন বরো কাউন্সিল ২০২৫-২৬ খ্রি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন—কাউন্সিলর এমি নিকলস।
মঙ্গলবার (২০ মে ২০২৫) লুটন কাউন্সিলের বার্ষিক সভায় বিদায়ী মেয়র (২০২৪-২৫ খ্রি) তাহমিনা সেলিমের সভাপতিত্বে নতুন মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত করা হয়।
কাউন্সিলর শাহানারা নাসের এর এই নতুন দায়িত্ব গ্রহণে নি:সন্দেহে বলা যায় এটি একটি মাইলফলক। গ্রেইটব্রিটেনে দিনে দিনে মুলধারার রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের অংশ গ্রহণ আশার আলো জাগিয়েছে। বিশেষ করে নারীদের অংশ গ্রহণে পথকে আরো সুগম করেছে। সরাসরি নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করছেন নারীরা।
যুক্তরাজ্যের লুটন কাউন্সিলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে, বৃহস্পতিবার, লুটন কাউন্সিলের সেইন্টস ওয়ার্ড থেকে প্রথম বারের মতো বাঙালি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহানারা নাসের ( মমতা)। প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল ১৫২৫। তিনি লেবার পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এবার কাউন্সিলর শাহানারা নাসের ( মমতা) এর দায়িত্ব আরেকটু বেড়ে গেল। ২০ জুন ২০২৫ থেকে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করছেন লুটন কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়রের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে এ পর্যন্ত লুটন কাউন্সিলে তিনিই একমাত্র ও প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী নারী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়ে কমিউনিটিতে বাংলাদেশীদের মুখ আলোকিত করেছেন।
তিনি লুটনের কমিউনিটি এক্টিভিস্ট, সাবেক শিক্ষক শাহ আবু নাসের ( সাজন) এর সহধর্মীনি।
লন্ডনের লুটন বরো কাউন্সিলের নবনির্বাচিত ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর শাহানারা নাসের (মমতা) বলেন- লুটন বরো কাউন্সিলের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং প্রতিটি সম্প্রদায়ের নাগরিকের জন্য সেবার মনোভাবে জীবনের বাকী অংশটিকু উৎসর্গ করতে চান। কমিউনিটির মানুষ তাকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে আজ এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।
বর্তমানে কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, নতুন দায়িত্ব পেয়ে তিনি গর্বিত ও আনন্দিত। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও সেবার মনোভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
উল্লেখ্য শাহানারা মমতা ১৯৭৬ সালে ছোটবেলায় যুক্তরাজ্যে আসেন, তার মা খালেদা খানম, চার ভাইবোন এবং তার বাবা জামশেদ আলী(বর্তমানে প্রয়াত) এর সাথে।
তিনি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন, একটি প্রেমময় এবং লালন-পালনকারী পরিবারে। তাঁর বাবার বাংলাদেশের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ জেলার আমকুনা গ্রামে, সেখানেই তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশবকাল পূর্ব লন্ডনে কেটেছে এবং সেখানেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
একসময় আবার পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশে অবস্থান।
বাংলাদেশে তিনি সিলেটের ব্লু বার্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং পরে সিলেট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি (জিসিএসই) সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি সিলেট মহিলা কলেজে তার পড়াশোনা চালিয়ে যান, যেখানে তিনি এইচএসসি (এ লেভেল) ডিগ্রি অর্জন করেন।
যুক্তরাজ্যে ফিরে এসে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ‘উইন্ডসর অ্যান্ড মেডেনহেড কলেজ’-এ ভর্তি হন।
স্বাস্থ্যসেবার প্রতি তার আগ্রহ তাকে নিউ বাকিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের জন্য প্ররোচিত করে।
১৯৯৩ সালে, তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার নয়াবন্দরের শাহ মোদ্দাসির আলী (মানিক মিয়া) (প্রাক্তন চেয়ারম্যান – আশারকান্দি ইউনিয়ন) এর ছেলে শাহ আবু নাসের সাজন (শিক্ষক এবং ব্যবসায়ী) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিন সন্তানের গর্বিত জননী।
কর্মজীবন :
NHS-এ বেশ কয়েক বছর ধরে নিবেদিত প্রাণ, একজন পেশাদার অনুবাদক (২৩ বছর) সহ, তিনি সম্প্রদায়ের অগ্রগতি, কল্যাণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের একজন শক্তিশালী সমর্থক।
দুর্বল ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, তিনি বিভিন্ন পটভূমির বাসিন্দাদের সাথে কাজ করেন, বিশেষ করে যারা ভাষাগত সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদের অধিকার এবং সম্ভাবনার পক্ষে কথা বলার জন্য আজও সোচ্চার ।
একজন নিবেদিত বাঙালি পরিবারের আত্মা হিসেবে, তিনি লুটন সকল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
যার লক্ষ্য যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বাঙালি সংস্কৃতি সংরক্ষণ করা। ডেপুটি মেয়র হিসেবে তার নতুন ভূমিকায় তিনি প্রচুর অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছেন । কমিউনিটির সকল সম্প্রদায়ের জন্য ভাল কিছু উপহার দিবেন এটিই তার প্রত্যাশা।