বেলাল আহমেদ বকুল, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া—এই তিনটি দেশ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫,রোববার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপরই একই ঘোষণা দেয় পর্তুগাল। শিগগিরই স্বীকৃতি দেওয়ার পথে রয়েছে ফ্রান্স। এর আগে চলতি বছরের ২০ মার্চ মেক্সিকো সরকার জানায়, তারা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর চারটি দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠল। আর জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫১টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল।
গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলের জাতিগত নিধনের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এসব প্রভাবশালী দেশের স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। যথারীতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় নতুন করে নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দুই বছর হতে চলল, গাজায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ২১ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সম্প্রতি গাজার বৃহত্তম শহর গাজা নগরীতে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। উদ্দেশ্য একটাই, জনবহুল এই নগরী পুরোপুরি খালি করে দখলে নেওয়া।
জাতিসংঘ স্বীকৃত রোমভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্যানেল (আইপিসি) গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে গাজায় জাতিগত নিধনের (জেনোসাইড) কথাও বলা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ও জাগিত নিধন বন্ধে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, চাপ আরও বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি।
বিশ্বের ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সদস্যদের মধ্যে প্রথম ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য ও কানাডা।
এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫১টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন ও মধ্য আমেরিকার দেশই বেশি।
বাংলাদেশের স্বীকৃতি :
দূতাবাসের নোটে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর জাতিসংঘের যে ১৩৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার একটি বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালের ১৬ নভেম্বর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ।
ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নোটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বরাবরই উষ্ণ, ভ্রাতৃপ্রতিম ও সৌহার্দ্যপূর্ণ। বাংলাদেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সব সময় সরব ও ইসরায়েলি দখলদারত্বের কট্টরবিরোধী।
ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। দেশটির সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষ বাণিজ্যও নিষিদ্ধ।
দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নোটে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেয়। শুধু তা–ই নয়, ওই যুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য চিকিৎসক দল ও ত্রাণ পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয় ১৯৭৪ সালে। তখন মুসলিম জোট ওআইসির দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন হয় পাকিস্তানের লাহোরে। সম্মেলনে যোগ দিতে যান শেখ মুজিবুর রহমান। এসেছিলেন ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাত। লাহোরে দুই নেতা বৈঠক করেন।
ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন বাংলাদেশের সমাজে এতটাই দৃঢ় হয়ে ওঠে যে ১৯৮০ সালে দেশে ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, যাতে ছিল এক ফিলিস্তিনি যোদ্ধা আর পেছনে কাঁটাতারের আড়ালে আল-আকসা মসজিদ। ইংরেজি ও আরবি ভাষায় লেখা ছিল,‘সাহসী’ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা।
১৯৮০-এর দশক থেকেই আইএমইটি (ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএলও) গভীর সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পিএলও সদস্যরা চট্টগ্রামের বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে এক বছরের প্রশিক্ষণ কোর্সেও অংশ নেন। এখন ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাস বাংলাদেশে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
কোন দেশ কবে স্বীকৃতি দিয়েছে :
১৯৮৮ :
বাংলাদেশ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, ভুটান, বুরুন্ডি, বতসোয়ানা, নেপাল, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, পোল্যান্ড, ওমান, গ্যাবন, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সেপ, মোজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন, উগান্ডা, লাওস, চাদ, ঘানা, টোগো, জিম্বাবুয়ে, মালদ্বীপ, বুলগেরিয়া, কেপ ভার্দে, উত্তর কোরিয়া, নাইজার, রোমানিয়া, তানজানিয়া, হাঙ্গেরি, মঙ্গোলিয়া, সেনেগাল, বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, কমোরোস, গিনি, মালি, গিনি বিসাউ, চীন, বেলারুশ, নামিবিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন, ভিয়েতনাম।
একই বছর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, মিসর, গাম্বিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, সিশেলস, স্লোভাকিয়া, শ্রীলঙ্কা, আলবেনিয়া, ব্রুনেই, জিবুতি, মরিশাস, সুদান, আফগানিস্তান, কিউবা, জর্ডান, মাদাগাস্কার, নিকারাগুয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সার্বিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাম্বিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মৌরিতানিয়া, সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, তুরস্ক, ইয়েমেন, মরক্কো, ইরান।
১৯৮৯ :
ফিলিপাইন, ভানুয়াতু, বেনিন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা।
১৯৯১
ইসওয়াতিনি ।
১৯৯২
বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, জর্জিয়া, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, কাজাখস্তান।
১৯৯৪
উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান।
১৯৯৫
কিরগিজস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাপুয়া নিউগিনি।
১৯৯৮
মালাউয়ি।
২০০৪
পূর্ব তিমুর।
২০০৬
মন্টেনেগ্রো।
২০০৮
আইভরি কোস্ট, লেবানন, কোস্টারিকা।
২০০৯
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র, ভেনেজুয়েলা।
২০১০
ইকুয়েডর, বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা।
২০১১
আইসল্যান্ড, ব্রাজিল, গ্রানাডা, অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, ডমিনিকা, বেলিজ, সেন্ট ভিনসেন্ট, হন্ডুরাস, এল সালভাদর, সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, লাইবেরিয়া, লেসোথো, উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, সুরিনাম, পেরু, গায়ানা, চিলি।
২০১২
থাইল্যান্ড।
২০১৩
হাইতি, গুয়াতেমালা।
২০১৪
সুইডেন।
২০১৫
সেন্ট লুসিয়া, হলি সি।
২০১৮
কলম্বিয়া।
২০১৯
সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস।
২০২৪
আর্মেনিয়া, স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বাহামা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, জ্যামাইকা, বার্বাডোজ।
২০২৫
পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো।