জগন্নাথপুর টাইমসসোমবার , ১ মে ২০২৩, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আবুল মাল আবদুল মুহিত : টুকরো স্মৃতির আল্পনা- অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ

Jagannathpur Times BD
মে ১, ২০২৩ ৫:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আবুল মাল আবদুল মুহিত : টুকরো স্মৃতির আল্পনা
……
অধ্যাপক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ

আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ১৯৯৭ সালে। বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক সেমিনার : সিলেট উৎসব উপলক্ষ্যে মুহিত প্রবন্ধ -উপস্থাকরূপে সিলেটে এসেছেন। তিনটি ভেন্যুর দুটো হলো মদনমোহন কলেজ এবং একটি  সিলেট অডিটোরিয়াম।

তিনি রিক্শাযোগে হাফিজ কমপ্লেককস্ থেকে মদনমোহন কলেজে এসেছেন।  একেতো এ কলেজের শিক্ষক এবং আয়োজক কমিটির সদস্য, সেই সুবাদে আমি কলেজ ভেন্যুর দুটোরই দায়িত্বে ছিলাম। অধ্যক্ষস্যারের অফিসকক্ষে ঢুকেই তিনি আমাকে সামনে পেয়ে বললেন, আমি মুহিত, আমার পেপারটি ফটোকপি করাতে হবে। টাকা আমি দেব। আমি তাঁর নামের সঙ্গে পূর্ব থেকে পরিচিত ছিলাম। সাগ্রহে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হলাম। এ কলেজের শিক্ষক শুনে তিনি আমাকে তুমি বলেই আপন করে নিলেন। বিকেলের অধিবেশনে তাঁর প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় স্থিরীকৃত ছিল।

বিকেলে এসেই জনতে চাইলেন, তোমার বিল কত?
আমি টাকার বিল হাতে দিতেই তিনি পরিশোধ করেন। আর এভাবেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপচারিতা। এরপর তো তিনি স্থানীয় সাংসদরূপে কলেজসভাপতি হলেন, অনেক অনুরোধের পর। কালক্রমে আমিও উপাধ্যক্ষ, অধ্যক্ষ পদে আসীন হলাম। পাঁচ বছরের অধিক সময় তাঁর স্নেহসান্নিধ্যে কাটানোর সু্যোগ হয়। বিচিত্র সব স্মৃতি আর অভিজ্ঞতায় পূর্ণ ছিল দিনগুলো। পড়াশোনা ও লেখালেখির সুবাদে তিনি একটু বেশিই স্নেহের চোখে দেখতেন। কলেজের প্লাটিনাম জুবিলি উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বে বাইশ সদস্যের প্রতিনিধি দলের  তিনিই নেতৃত্ব দেন। ওই সাক্ষাৎপর্বে অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজপরিচিতি ও সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেবার দায়িত্ব দেন, আমাকে।

আমরা সংসদভবনে প্রধানমন্ত্রীর পিএস১ সাজ্জাদুল হাসানের কক্ষের সামনে দাঁড়ানো। ইতোমধ্যে মুহিতস্যার, আশফাক আহমদ ও মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ভেতরে চলে গেছেন। বাকিদের একটু দূরে করিডোরে অপেক্ষা করতে বলা হয়। আমরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষমান ছিলাম। কিছু সময় পরে মুহিতস্যার আমাদের খুঁজে করিডোরের এদিক -ওদিক তাকাচ্ছিলেন। হাতের ইশারায় সবাইকে ডাকলেন। আমরা তাঁর পিছু পিছু গেলাম। আমাদের বসিয়ে তিনি এবং সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীকে লিফটে অভ্যর্থনার জন্য ছুটে যান, ফিরে আসেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে আবার বেরিয়ে যান। ফিরে আসেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। স্মিত হেসে সুতি শাড়ি পরা এক বাঙালি নারী কক্ষে ঢোকেন, তিনি শেখ হাসিনা,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। অনেকটা নাটকীয় মুহূর্ত যেন!সবাই চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানালাম।

২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি ধরণিকন্যা আমাদের কলেজে আসেন এবং কলেজ সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। সবার প্রত্যোশা ছিল, ওই সময় থেকেই মদনমোহন কলেজ সরকারি কলেজের মর্যাদা পাবে। কিন্তু প্রক্রিয়াটা পিছিয়ে ২৯৩ টি কলেজের সঙ্গে এ কলেজ যুক্ত হলো, সরকারিকরণ প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত হবার পথে। করোনা মহামারির আগে মুহিতস্যার ফোনালাপে আমাকে কলেজের অবস্থা জানতে চান।আমার কথা শুনে শুধু বলেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বিষয়টি মনে করিয়ে দেবেন। সেই সুযোগ বোধ হয় আর কোনও দিন তাঁর আসবে না।মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শে তিনি এখন চিরনিদ্রায় শায়িত!

প্রমিতের লেখা পড়ে অনেক কথাই এসে গেল।  এখন তিনি শুধু স্মৃতির আঙিনায়।

মুহিতস্যার ছিলেন মুক্তমনা সজ্জন। বিদ্যানুরাগ তাঁর স্বভাবজাত ছিল। সংস্কৃতিবান্ধব সুধীজনরূপে তিনি সবাইকে এক সুশীতল ছায়ায় আপন করে নিতেন। একজন সংবেদনশীল লেখকরূপে তিনি তাঁর গ্রন্থরাজিতে বহুমাত্রিক চিন্তা ও গবেষণার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
ব্যক্তি মুহিত অত্যন্ত প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন। আলাপচারিতায় আন্তরিক, স্মৃতিচারণায় স্বতঃস্ফূর্ত এবং আসর মাতিয়ে রাখার কৃৎকৌশল তাঁর রপ্ত ছিল। বড়ো থেকে ছোটো সবাই তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। বইমেলা থেকে আমার ছোটোভাই আবুল কাশেম, তাঁর মেয়ে সুষমা, ঈষিকা(নিগার ইশরাত ), জারা, আমার কন্যা উপমা, পুত্র প্রমিত আকাশ ও অনিন্দ্য ইশরাকসহ হাফিজ কমপ্লেক্সে মুহিতস্যারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠেন। নিগার ইশরাত ‘হাইস্কুল ডায়েরি ‘নামে উপন্যাস লিখেছে এবং হাইস্কুল পড়ুয়া ছাত্রী অল্পবয়সে কীভাবে সেটা  লিখেছে,  এই নিয়ে তিনি তার সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন। আমার ভাতিজি উপন্যাস লিখেছে বলে তিনি তাকে  অভিনন্দিত করেন।  ফটোসেশনের এক ফাঁকে মুহিত- -ভগিনী জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন ঈষিকার সঙ্গে ফটোপোজে অংশ নেন এই বলে যে, স্কুলপড়ুয়া মেয়ে উপন্যাস লিখেছে, সে ভবিষ্যতে বড়ো লেখক হবে, তাই তার সঙ্গে ছবি উঠতে চাই। সেকি আনন্দ! ওই সময় মুহিতস্যারের আরেক  ছোটো বোনের স্বামী নর্থ- ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস – চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর আতফুল হাই শিবলী(প্রয়াত)স্যারও ফটোসেশনে অংশ নেন। মুহিতস্যারের ঔদার্য ও স্নেহে আমাদের ছেলেমেয়েরা সেদিন প্রাণিত বোধ করে।আপ্যায়নপর্ব শেষে আমরা হাফিজ কমপ্লেক্স ত্যাগ করি।


প্রজ্ঞাদীপ মুহিতস্যার ভেতর -বাহিরে একজন সহজ মানুষ ছিলেন! আপাতদৃষ্টিতে তিনি বেশ মেজাজি মনে হলেও এটা ছিল মুহূর্তের ব্যাপার। পরক্ষণেই তিনি প্রাণখোলা হাসিউল্লাসে আসর মাতিয়ে তুলতেন। কিন্তু এটা মিডিয়ায় দেখার সুযোগ ছিল না। রাগ করে তিনি যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেন, এটা মিডিয়াসুবাদে সবাই জানতেন বলে দেশদেশান্তরে মৃদুসমালোচিতও হতেন। অথচ, শিশুর সারল্যেভরা মনন নিয়ে একটু পরেই সেটা দিব্যি ভুলে যেতেন! এই খবরটি থেকে অনেকেই বঞ্চিত হতেন বলে তাঁর একটা ভুল বার্তা জনমনে প্রথম প্রথম ছিল। পরে অবশ্য অনেকেই সেটা জেনে গিয়েছিলেন! এই হচ্ছেন প্রজ্ঞাদীপ আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ওই কথাগুলো আমি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে খুব সম্ভব ২০১৭সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চন্দ্রাবতী একাডেমির আমন্ত্রণে ও আয়োজনে  আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রণীত ‘স্মৃতিময় কর্মজীবন’গ্রন্থের ওপর আলোচকরূপে বলেছিলাম। প্রকাশনা উৎসবে সভাপতি ছিলেন প্রফেসর এমিরেটাস( পরে জাতীয় অধ্যাপক) আনিসুজ্জামান,আমার শিক্ষক। মুহিতস্যার অতিথি -লেখকরূপে উপস্থিত ছিলেন। অতিথি-বক্তারা সবাই ছিলেন মুহিতস্যারের গুণগ্রাহীজন। মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রফেসর রেহমান সোবহান, এম সাইদুজ্জামান, শিল্পী হাশেম খান, ভাষাবিজ্ঞানী প্রফেসর মনিরুজ্জামান এবং আমি। একাডেমির স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খন্দকার প্রকাশকরূপে স্বাগত ভাষণ দেন। ওই অনুষ্ঠানে মুহিতস্যারের আশিবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এবং আবুল ফতেহ ফাত্তাহ সংকলিত -সম্পাদিত গ্রন্থ ‘প্রজ্ঞাদীপ মুহিতমানস ‘(২০১৫) -এর এক -একটি কপি অতিথিবক্তার ভাষণশেষে  সংশ্লিষ্টজনের হাতে তুলে দেবার জন্য সভাপতির অনুমতি নিই এবং তা – ই করি। পরে জানতে পারি, মুহিতস্যারের ব্যক্তিগত আগ্রহে আমাকে এই অনুষ্ঠানে অন্যতম
অতিথি বক্তা রাখা হয়। এটি আমার জীবনের সুবর্ণস্মৃতি।
এই অনুষ্ঠানের উচ্চতা ও শিল্পমাণ কতো ব্যাপক ও বিশাল ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

লেখক:
ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ
প্রাক্তন অধ্যক্ষ : সরকারি মদন মোহন কলেজ সিলেট।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।