মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান :
যুক্তরাজ্যের
উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলে প্রথম বারের মত মেয়র হয়ে ব্রিটেনের বহুজাতিক সমাজে বাংলাদেশের মুখ উজ্বল করলেন কাউন্সিলর আতিকুল হক।
তিনি স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশী মুসলিম মেয়র।
গেল ১৩ মে শনিবার স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বারার ৭৬২তম দ্য-রাইট ওয়ার্শিপফুল দ্য-মেয়র হিসেবে তার নাম ঘোষণা করে।
শনিবার (১৩ মে ২০২৩) ঐতিহাসিক এক ইভেন্টের মাধ্যমে বিদায়ী মেয়র টম করবিন মেয়র আতিকুল হকের কাছে আনুষ্ষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
মেয়রের দায়িত্ব গ্রহন করে কাউন্সিলার আতিকুল হক বলেন, “স্যালিসবারির জনগণ তাদের প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি মুসলিম মেয়রকে বেছে নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে যা প্রমাণ করে যে কীভাবে স্যালিসবারি আরও বৈচিত্র্যময় এবং স্বাগত জানাতে পারে। আমি আশাবাদী আমার মেয়র পদ অন্যদেরকে এগিয়ে আসতে এবং স্যালিসবারি সিটি কাউন্সিলের সাথে যুক্ত হতে উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন “স্যালিসবারি সম্প্রতি একটি কঠিন সময় পার করে এসেছে , নভোচক ঘটনা থেকে শুরু করে মহামারী পর্যন্ত, এখন সময় এসেছে আমাদের এই সবকিছুকে পিছনে ফেলে সামনে অগ্রসর হওয়ার।
আমি আশাবাদি আমাদের সুন্দর প্রাচীন এই শহরটিকে আরও প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে এগিয়ে নেবার। আমি ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবো এবং আমাদের হাই স্ট্রিটকে সমৃদ্ধ করতে আরো কাজ করব।
২০২৩-২০২৪-এর জন্য মেয়রের অন্যতম কাজ হবে দাতব্য সংস্থা স্যালিসবারি রোটারি ক্লাবের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ কাউন্সিলার হক বছরে মেয়র হিসেবে রাইডিং ফর ডিসএবলড অ্যাসোসিয়েশন এবং স্যালিসবারি হসপিসের মধ্যে বন্টন করা।
উইল্টন রোটারি ক্লাবের সাথে সমন্বয় করে এবং মেয়র আ্যপিল রোটারী ক্লাব অব উইলটন ট্রাষ্ট ফান্ড হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই দাতব্য সংস্থাগুলিকে অনুদান প্রদান করা। এই বারায় তার সহযোগী হিসেবে ২০২৩-২০২৪-এর জন্য ডেপুটি মেয়র হয়েছেন কাউন্সিলার সেভেন হকিংল।
উল্লেখ্য যে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নথপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্রীরামসী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয়া কাউন্সিলার আতিকুল হক বাঙালি অধ্যুসিত ইষ্টলন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এর ব্রিকলেনে বেড়ে উঠলেও ব্যবসায়ী এই পরিবারটি পাড়ি জমান উইল্টশায়ারের স্যালিসবারি এলাকায়।
ইংরেজ অধ্যুসিত এলাকায় গড়ে তুলেন নিজেদের আবাসস্থল। জনাব হক ২০১০ সালে মেইনষ্ট্রীম ব্রিটিশ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
২০১৩ সাল থেকে কনজারভেটিভ পাটির কাউন্সিলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনিই এই বারায় একমাত্র বাঙালি কনজারভেটিভ দলীয় কাউন্সিলার বার বার নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
এই স্যালিসবারির সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে আসেন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়াড হিথ। তখনও ব্রিটেন আনুষ্ষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে সম্বর্ধনা দেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়াড হিথ। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধু যখন দশ নাম্বার ডাউনিং ট্রীটে পৌঁছান তার গাড়ির দরজা খুলে দেন স্যার এডওয়াড হিথ। দেড় মাসের মাথায় ব্রিটেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এই স্যালিসবারির সন্তান স্যার এডওয়াড হিথ। এই স্মৃতিকে ধরে রাখতে কাউন্সিলার আতিকুল হক লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করেন।
বর্তমান হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম কাউন্সিলার আতিকুল হকের আমন্ত্রনে স্যালিসবারি কাউন্সিল এবং স্যার এডওয়াড হিথের জন্মস্থান পরিদর্শন করেন। এই স্মৃতিকে স্মরনীয় করে রাখতে এছরে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন চালু করে বঙ্গবন্ধু-এডওয়ার্ড হিথ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড। যার নেপথ্যে কারিগড় এই আতিকুল হক।