মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান :
বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন শুরু হয়েছে একুশে ফেব্রুয়ারি দিয়ে । ঢাকার পর (প্রবাসীদের মধ্যে) লন্ডনে বাংলা ভাষার সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়- যা আর কোনো দেশে হয় না।
কথাগুলো বলেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুর রহমান বেণু ।
তিনি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমিতে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘গৌরবের একুশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
বিলেতে ‘বাংলা সংস্কৃতি চর্চা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে মাহমুদুর রহমান বেণু আরো বলেন, আমরা যখন লিখি বা বলি সব সময় যেন শুদ্ধ বাংলায় তা করি। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারাটাও গৌরবের বলে আমি মনে করি।
লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে “বিলেতের গণমাধ্যমে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা” শীর্ষক বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিবিসি বাংলা’র সাবেক প্রযোজক উদয় শঙ্কর দাশ, চ্যানেল এস-এর জ্যেষ্ঠ সংবাদ পাঠক ডাঃ জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার এবং কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার-ই আলম।
আরো বক্তৃতা করেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদ্য-সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।
এসময় নিজনিজ ধর্ম মতে ভাষা-শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয় ।
এরপর মাহমুদুর রহমান বেণুর নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি।
“বিলেতের গণমাধ্যমে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চা” শীর্ষক বিষয়ে উদয় শঙ্কর দাশ বলেন, সব ভাষাতেই বিবর্তন ঘটে এবং অন্য ভাষার প্রবেশ ঠেকানো কঠিন হয়ে যায় । তবে বাংলা ভাষাকে যদি আমরা আরেকটু বেশি ভালোবাসি তাহলে এতে শুদ্ধচর্চার বিকাশ ঘটবে । এছাড়াও তিনি বাংলা ভাষার শুদ্ধচর্চা নিয়ে কর্মশালার আয়োজনের পরামর্শ দেন।
একই বিষয়ে চ্যানেল এস-এর জ্যেষ্ঠ সংবাদ পাঠক ডাঃ জাকি রেজওয়ানা আনোয়ার প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত বাংলা ভাষার ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলেন । বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত বহুবচন, শুদ্ধ উচ্চারণ, শব্দ বিকৃতি এসব বিষয় তাঁর আলোচনায় প্রাধান্য পায়।
কবি ও সাংবাদিক সারওয়ার-ই আলম তাঁর বক্তব্যে শুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি বেশি জোর দেন। তিনি বলেন, আমরা ব্যাকরণ ঠিকভাবে চর্চা করি না। বাংলা বর্ণমালা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করলে এবং দুই-এক মাস যে কেউ অনুশীলন করলে শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারণে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
অনুষ্ঠানে প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এটিএন বাংলা ইউকের জ্যেষ্ঠ উপস্থাপক উর্মি মাযহার।
তিনি আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একটি লেখার অংশ পাঠ করে শোনান । এরপর আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে শিল্পী ফজলুল বারির কণ্ঠে একটি গান টিভি স্ক্রিনে বাজিয়ে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানে ক্লাবের সিনিয়র সদস্য ও চ্যানেল এস এর জ্যেষ্ঠ সংবাদ পাঠক সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিইকে বাংলা ভাষা শিক্ষা ও ব্রিটিশ বাংলা মিডিয়াতে অবদান রাখার জন্য স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে তাঁর হাতে এই বিশেষ সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
এ সময় সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই তাঁকে সম্মান জানানোর জন্য লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি এই সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি উৎসর্গ করেন।
বিলতে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রয়াত কমিউনিটি নেতা তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই স্মরণে একটি অ্যাওয়ার্ড চালু করার আহবান জানান ।
এছাড়াও দেশে-বিদেশে যাঁরা টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ করেন প্রতি বছর তাদের মধ্য থেকে একজনকে একুশে পদক দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন সৈয়দ আফসার উদ্দিন।
সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন হিমাংশু গোস্বামী, গৌরী চৌধুরী, শ্রেয়সী দাস, ববি রায়, মোস্তফা কামাল মিলন। নৃত্য পরিবেশন করেন সোনিয়া সুলতানা ও নন্দিনী। কবিতা আবৃত্তি করেন মিছবাহ জামাল, কবি দিলু নাসের, শহীদুল ইসলাম সাগর ও মুনিরা পারভীন । সাংস্কৃতিক পর্বটি পরিচালনা করেন ক্লাবের ইভেন্টস অ্যাণ্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারী রূপি আমিন ও নির্বাহী সদস্য পলি রহমান।