মুহাম্মদ সালেহ আহমেদ :
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বার্মিংহামবাসীর ঐতিহাসিক ভূমিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় এবং ইতিহাস বিকৃতি বিষয়ে’ ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠক এবং ২৮ মার্চ ১৯৭১ সালে বার্মিংহামে প্রথম পতাকা উত্তোলনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দ্রুত প্রদানের দাবি জানিয়ে অনাহুত এ বিলম্বের জন্য ক্রমশ ইতিহাস বিকৃতি ঘটছে উল্লেখ করে তারা প্রশ্ন তুলেছেন ইতিহাস বিকৃতির এ দায় কে নেবে।
সোমবার ( ৪ মার্চ ) স্থানীয় এক রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি বশির মিয়া কাদির। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কমরেড মসুদ আহমেদ।অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাংবাদিক কাজী জাওয়াদ, সৈয়দ লুৎফুর রহমান, সয়ফুল আলম, এনামুল হক খান নেপা, এরশাদ আলী, জুনেদুর রহমান জুনেদ, তাজুল ইসলাম, রহমত আলী প্রমুখ।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদকে অকার্যকর সংগঠন বলা এবং সংগঠক না হয়েও সংগঠক দাবির মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ২০১০ সালে ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদ গঠনের প্রসঙ্গে ‘স্বাধীনতর ৪০ বছর পর এই সংগঠন যুক্তরাজ্যে বিশেষ করে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বার্মিংহামবাসীর অবদানগুলো তুলে ধরার প্রয়াসের সূচনা’ বলে উল্লেখ করে তারা আরো বলেন ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বার্মিংহামের প্রবাসীদের ভূমিকা বিস্মৃতির অতল গহ্বর থেকে রক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই দীর্ঘ ১৪ বছরে প্রতি বছর ২৮ মার্চ যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করেছে এই সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে তারা বলেন, ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদ নিয়ে সম্প্রতি কিছু অপপ্রচার ও ইতিহাস বিকৃতির স্বার্থান্বেষী অপপ্রয়াস এবং ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদ বিষয়ক এক প্রশ্নের উত্তরে এই সংগঠনকে অকার্যকর হিসেবে উল্লেখ করার মত অযাচিত-অনাকাংখিত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।’
অকার্যকর সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন,’আমরা হীনস্বার্থ-ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে কাউকে ছোট কিংবা কাউকে বড় করে ইতিহাস বিকৃতির অংশ হতে চাই না। তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই আমরা আমাদের মূল দায়িত্ব তথা ২৮ মার্চ এবং প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে মূল স্রোতে ভূমিকা পালনকারীদের স্বিকৃতি আদায়ে অত্যন্ত সচেতন ও বলিষ্ঠভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মতৎপরতার কথা সবিস্তারে তুলে ধরে তারা বলেন, ‘প্রবাসে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি আদায়ে ২৮ মার্চ উদযাপন পরিষদ অত্যন্ত সক্রিয়। এ সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খুবই সচেতন ও পরিকল্পিতভাবে মু্ক্িতযুদ্ধের সংগঠকদের স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করে আসছে। আমরা আত্মপ্রচার বা কোন ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে কোন উদ্যোগ বা তৎপরতা চালাই না।
নতুন করে সংগঠকের দাবি প্রসঙ্গে তারা বলেন,‘২৮ মার্চ ১৯৭১ সালের সমাবেশে যোগ দেয়া এবং সমাবেশ আয়োজন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে পুরো ৯ মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে মুল স্রোতে ভূমিকা রাখা ভিন্ন বিষয়। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় সংগঠক দাবিদার অনেকেরই সেই সময় মুল স্রোতে জড়িত থাকার কোন প্রমাণ যেমন নেই তেমনি একটি পাউন্ডও দান করেছেন এমন রেকর্ডও নেই।’
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের চ্যানেল আইয়ের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে সেই সময়কার বেঁচে থাকা প্রায় সকল সংগঠক এবং মরণোত্তরও অনেককে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তখন আজকের সংগঠক দাবিদার এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি এমনকি বেঁচে থাকা কোন কোন সংগঠক তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক উত্তরই প্রদান করেছেন।’
স্বীকৃতি আদায় নিয়ে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রধান। তাই আমরা পূর্ণ বিশ্বাসী প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি এ সরকারের সময়েই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই আমরা বিষয়টি বর্তমান সরকারের নজরে নিয়ে আসতে নানামাত্রিক উদ্যোগ-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি অব্যাহতভাবে।’
প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি আদায়ের মূল উদ্দেশ্য সাধন করতে অতীতের মত সংবাদকর্মীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে তারা বলেন,‘ইতিহাস বিকৃতির কবল থেকে বার্মিংহামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এখন সময়ের দাবি। ‘অন্যথায়মূল দাবি আদায় ব্যাহত হবে বলে তারা সংশয় প্রকাশ করেন।
সংগঠনের সভাপতি ড. তজাম্মেল টনি হক শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে উপস্থিত থাকতে না পেরে সহ সভাপতির মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন এবং উপস্থিত সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।