জগন্নাথপুর টাইমসবৃহস্পতিবার , ৬ এপ্রিল ২০২৩, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সব বাঙালির জন্য সুস্বাস্থ্য -ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

Jagannathpur Times BD
এপ্রিল ৬, ২০২৩ ৯:৪১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সব বাঙালির জন্য সুস্বাস্থ্য- ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল :

৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বছরজুড়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দিবসের ভিড়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত হাতে গোনা যে কয়টি দিবস আছে, সেগুলোর শীর্ষে এই দিবসটি। কারণটাও স্পষ্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত দিবসগুলোতে আমরা সাধারণত কোনো না কোনো বিশেষ বিষয়ে ফোকাস করে থাকি। যেমন—বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে আমাদের কথা আর কাজের পুরোটাই থাকে ভাইরাল হেপাটাইটিস। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস এই জায়গাটায় একেবারেই ভিন্ন। এই একটি দিবসে মানুষ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবে আর আমরা আমাদের ফোকাসটা কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর নির্দিষ্ট না রেখে বরং কথা বলি জনস্বাস্থ্য নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৫তম জন্মদিনে এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘হেলথ ফর অল’, অর্থাৎ সবার জন্য সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যখন ৭৫, তখন বাংলাদেশের বয়সও ছাড়িয়েছে ৫০। স্বাধীন অস্তিত্বে অর্ধশতক পূরণের পর বাংলাদেশের সব মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জায়গায় আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, আজকের এই দিনে তা মোটাদাগে পর্যালোচনার দাবি রাখতেই পারে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য খাতের যে ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে তা চরম নিন্দুকও স্বীকার করতে বাধ্য হবে। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকায় ছিল সরকারি খাত। সরকার গত এক যুগে দেশে যে শুধু একাধিক নতুন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউটই স্থাপন করেছে তা-ই নয়, বাড়ানো হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোর সক্ষমতাও। দেশের প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন অবকাঠামো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে আরো চারটি বিভাগে স্থাপিত হয়েছে আরো চারটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আর জেলায় জেলায় সরকারি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের কাজও প্রায় গুটিয়ে এনেছে সরকার। একসময় যে চিকিৎসকরা মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবেই অবসরে যেতেন, তাঁরাই এখন কয়টা বছর ঘুরতেই পদোন্নতি না পেলে অস্থিরতায় ভোগেন। প্রশাসনের মতো স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও এখন নিয়মিত প্রমোশন পাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যার শতভাগ কৃতিত্ব শেখ হাসিনার সরকারের। সরকার একদিকে যেমন স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ মানবশক্তি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, তেমনি পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোকেও সুসজ্জিত করে তোলা হচ্ছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতিতে। একসময় যে সরকারি হাসপাতালগুলোয় ছিল শুধু নাই আর নাই, সেখানে এখন প্রায় শতভাগ নিশ্চিত ওষুধের সরবরাহ আর অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারি হাসপাতালে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেয়ে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির আধিক্য দেখা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য খাতে সরকারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য এবং নান্দনিক সংযোজনটি সম্ভবত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। যেকোনো বিবেচনায়ই এটি দেশের সবচেয়ে আধুনিক হাসপাতাল। অবকাঠামো, চিকিৎসা সরঞ্জাম, নান্দনিকতা কিংবা বিশেষজ্ঞ সেবা, এর যেকোনোটির বিবেচনায়ই দেশের অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এর ধারে-কাছেও ঘেষতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসার চাহিদা পূরণে একটি নতুন মাত্রার সংযোজন ঘটিয়েছে এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি। আমি নিয়মিত এখানে বসে আউটডোরে যখন রোগী দেখি, আমার প্রায়ই মনে হয় পরিচিতজনদের বলি চিকিৎসার জন্য না, ঘরে বসে উন্নত বিশ্বের আধুনিকতম একটি হাসপাতালের স্বাদ নিতে একবার হলেও বেড়িয়ে যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল থেকে।

এত প্রাপ্তির ভিড়েও অপ্রাপ্তির গল্পগুলোও আলোচনায় তুলে আনতেই হবে। এখনো প্রতিবছর লাখ লাখ বাংলাদেশের নাগরিক আরো ভালো চিকিৎসার প্রত্যাশায় ছুটে যাচ্ছে ভারত, থাইল্যান্ড আর সিঙ্গাপুরে। এতে যে শুধু তাদের ভোগান্তিই বাড়ছে তা-ই নয়, দেশ থেকে চলে যাচ্ছে মিলিয়ন-বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রাও।

সমস্যা আছে আরো অনেক। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে চলা আমাদের মানুষের আজকের যে সক্ষমতা, বিশেষ করে দেশে অজস্র মানুষের হাতে যখন প্রবাসী আত্মীয়র উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা, তখন পরিবারের অসুস্থ সদস্যটিকে একটিবারের জন্য হলেও ভিনদেশি কোনো হাসপাতালে ঘুরিয়ে আনাটা অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক অবস্থান ও মানমর্যাদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমার প্রায়ই মনে হয়, বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের পাসপোর্টটি প্রথমবার করা বা প্রথম বিদেশ সফরটির উপলক্ষ থাকে নিকট বা দূরসম্পর্কের অসুস্থ কোনো আত্মীয়কে বিদেশ থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনা। তবে এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই যে আমি এসব কথা বলে একজন পেশাজীবী হিসেবে আমার দায়টুকু পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি। এ কথা অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে যে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের এই বাস্তবতা জেনেই এবং মেনেই আমরা একদিন চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের তৈরি করার জন্য দেশের কোনো একটি মেডিক্যাল কলেজের করিডরে আমাদের যাত্রার সূচনা করেছিলাম। আজকের বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের চালচিত্র অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়েই অনেক গুণে ভালো। কাজেই শত সীমাবদ্ধতা আর বৈরী বাস্তবতা সত্ত্বেও আমাদের রোগীদের সন্তু্তুষ্ট রাখার এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজে সীমান্ত পেরোনোর প্রবণতা থেকে দূরে সরিয়ে আনার দায়দায়িত্বটুকু আমাদের ঘাড়েও ঠিকই এসে বর্তায়।

লেখক : অধ্যাপক ও ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্যসচিব সম্প্রীতি বাংলাদেশ

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।