নাজমুল সুমন, কার্ডিফ, ওয়েলস :
বৃটেনের ওয়েলস এর রাজধানী কার্ডিফ শহরের জালালীয়া মসজিদ এন্ড ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “মুহাররম ও পবিত্র আশুরার তাৎপর্য ও ফজিলত” উপলক্ষে গত ২১ শে ‘জুলাই এক আলোচনা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
জালালীয়া মসজিদের ইমাম ও খতিব বিশিষ্ট মাওলানা আব্দুল মুকতাদির সাহেব এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা পেশ করেন লন্ডনস্থ দারুল হাদিস মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাহ্হার মহোদয়,ওয়াজের শুরুতেই পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফিজ মাওলানা জালাল উদ্দিন ও গজল পরিবেশন করেন শাহিদুল ইসলাম,
কমিটি ও কমিউনিটির উপস্থিত সবাইকে সহযোগিতার জন্য ধনবাদ জানান জালালীয়া মসজিদ কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান ইউসুফ খান জিমি।
ওয়াজ মাহফিলে উপস্হিত ছিলেন আন্জুমানে আল ইসলাহ ওয়েলস ডিভিশন সভাপতি হাফিজ মাওলানা ফারুক আহমদ,কার্ডিফ বাংলাদেশ এসোসিয়েশন সভাপতি আলহাজ্ব কাপ্তান মিয়া, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের কেন্দ্রীয় ফাউন্ডার্স কনভেনার ও ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর, কার্ডিফ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ হারুন তালুকদার, জালালীয়া মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মুহিবুর ইসলাম মায়া। গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইউকের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আনোয়ার, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইউকের ইয়ুথ সেক্রেটারি ও ওয়েলসের সিনিয়র সহ সভাপতি আবুল কালাম মুমিন, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের ওয়েলসের কনভেনার ও মসজিদ কমিটির এসিষ্টেন্ট সেক্রেটারি মুজিবুর রহমান মুজিব,গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইউকের সাউথ ওয়েলস রিজিওনএর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি খলিলুর রহমান, গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের ওয়েলসের জয়েন্ট কনভেনার সৈয়দ ইকবাল আহমেদ, জয়েন্ট কনভেনার শাহ গোলাম কিবরিয়া, মসজিদের ট্রাস্টি আলহাজ্ব জিলু মিয়া, আলহাজ্ব মুছব্বির আলী, খাদিমুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির ট্রেজারার সুমন আলী, খলিলুর রহমান, সদস্য সৈয়দ আশরাফ আলী, মুসলিম আলী, আব্দুল মালিক, আলমগীর আলম, ইকবাল আহমদ, ফয়েজ মিয়া, কয়েস খান, তায়েফুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান দিলওয়ার আলী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াওর আলী, আন্জুমানে আল ইসলাহ ওয়েলস ডিভিশনের সেক্রেটারি আনসার মিয়া, ট্রেজারার শাহ কারি শাহ মোহাম্মদ তসলিম, বিশিষ্ট সমাজসেবক আকিল আহমদ, আলহাজ্ব আসাদ মিয়া, সৈয়দ শামসুল হক রানু, আহাদ মিয়া, কার্ডিফ আল ইসলাহ্’র সভাপতি কারি নুরুল ইসলাম, সেক্রেটারি সাংবাদিক মুজাম্মিল আলী, মিজানুর রহমান, আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ, শাহিদুল ইসলাম,ও ফারুক মিয়া, সহ বিভিন্ন শহর থেকে আগত নেতৃবৃন্দ।
ওয়াজ মাহফিলে বিশিষ্ট মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল কাহ্হার মহোদয়, তাঁর বয়ানের প্রারম্ভের দিকে মহান রবের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন- আল্লাহ তা’আলা কিছু দিনকে কিছুদিনের উপর, কিছু মাসকে কিছু মাসের উপর এবং কিছু সময়কে সময়ের উপর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আর প্রতিটি ফজিলতমন্ডিত মাস, সময়, দিনকে ইমানদারদের দান করেছেন নাফরমানি থেকে বেঁচে সহজে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি ও পরকালের পুঁজি সংগ্রহের জন্য।তিনি বলেন আরবি মাস সমূহের মধ্যে মহররম মাস সম্মানিত মাস এবং আশুরার দিন বরকতময় দিনগুলোর মধ্যে একটি।
আল্লাহ তায়ালা মুহররম মাসে অনেক ফজিলত দান করেছেন: তন্মধ্যে কিছু উল্লেখ করা হলো।
১) মুহররম এর প্রথম ফজিলত ও তাৎপর্য হলো, হিজরী বছরের ১২ মাসের মধ্যে এটি প্রথম মাস।
২) এই মাসটি বছরের সম্মানিত চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে একটি।আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা তাওবার ৩৬নং আয়াতে বলেন- “নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।
৩) এই মাসে রোজা রাখা অন্যান্য মাসের চেয়ে উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “রামাদানের পর সর্বোত্তম রোজা মুহররম মাসের এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, সুনান আল-তিরমিযী)
৪) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসটিকে “আল্লাহর মাস” বলে উল্লেখ করেছেন, যদিও সমস্ত মাস আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট । কিন্তু এই মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণে আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।আর এটা স্পষ্ট কথা যে আল্লাহ তা’য়ালার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্মানজনক এবং শ্রেষ্ঠতর। যেমন বাইতুল্লাহ, কা’বাতুল্লাহ ইত্যাদি।
৫) এই মাসে আশুরার দিন রয়েছে, যে দিনের রোযা এক বছরের গুনাহের কাফফারা।
এ মর্মে তিনি উল্লেখ করেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আশুরার রোজা সামনের এবং পিছনের এক বছরের গুনাহের কাফ্ফারা।(সহিহ মুসলিম)।
তিনি বলেন এই মহররম মাসের ১০ম তারিখ তথা আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছিলেন। মুসা (আ.)-এর দোয়ায় আল্লাহ তাআলা রেড-সি বা লোহিত সাগরকে বিভক্ত করে দিয়েছিলেন এবং মুসা (আ.) ও তার অনুসারীরা নিরাপদে পার হতে পেরেছিলেন, কিন্তু ফেরাউন ও তার বাহিনী ডুবে যায়। আরো বলেন আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-এর তওবা কবুল করেছিলেন। আশুরার দিনে আল্লাহ তাআলা অনেক নবী ও তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন, অনেক নবী রাসুলদের আল্লাহ পরিক্ষা নিয়েছেন ও তাঁহারা উত্তীর্ন হয়েছেন।
সর্বশেষ যে ঘটনাটি ইমানদার নবী প্রেমিকদের মনে পীড়া দেয় সেটি হচ্ছে আশুরার দিনেই ৬১ হিজরিতে নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) ও তার অনুসারীরা কারবালার ময়দানে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন। এই ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি বলেন
ইসলামের বর্ণনামতে- আশুরার দিন কেয়ামত ঘটবে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তিনি সকলকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, হালাল উপার্জন ও বিশেষত: বাচ্চাদের দ্বীনি শিক্ষা দীক্ষার প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাগিদ দেন।