স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরি তিনটি প্রজন্ম
ড. ইলিয়াছ প্রামানিক ::
স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরি তিনটি প্রজন্ম : জেনারেশন এক্স, জেনারেশন ওয়াই এবং জেনারেশন জেড। এ তিনটি প্রজন্মই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করেছে, যদিও তাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ‘জেনারেশন এক্স’, যারা ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা শিশুকাল থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে জেনারেশন এক্সের বয়স ৪৪ থেকে ৫৭ বছরের মধ্যে এবং এই প্রজন্মের সদস্যরা সবাই কর্মজীবী ও কর্মক্ষম। তারা এখন অভিভাবক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, যারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এ প্রজন্মের মানুষ তাদের শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় এবং সামরিক শাসনের মধ্যে। জেনারেশন এক্সের অভিভাবকরা, যারা বুমারস নামে পরিচিত, স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে সক্ষম ছিলেন।
তারা পরাধীনতার শৃঙ্খল কতটা কঠিন, তা গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন, এবং সেই উপলব্ধি থেকেই তারা এদেশকে স্বাধীন করে বিশ্বমানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি স্বাধীন দেশের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। বুমারস প্রজন্মের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তাদের বিপ্লবী ও স্বাপ্নিক মনোভাব। এ বিপ্লবী বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের নেতৃত্ব ও সংগ্রামের ফলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অধিকাংশ ইতিহাস ও অর্জন সম্ভব হয়েছে।
জেনারেশন এক্স একটি বিশেষ প্রজন্ম হিসাবে চিহ্নিত, যারা বিভিন্ন বৈপ্লবিক পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন। তাদের জীবনকালজুড়ে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রগুলোয় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত অভিযোজন (Technology Adaptation) এ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ছিল। এ সময়কালেই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, যা তাদের জীবনধারার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। জেনারেশন এক্সের সদস্যরা তাদের জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে খাতা ও কলমের ব্যবহার করে কাজ সম্পাদন করলেও বর্তমানে তারা পেপারলেস ও ক্যাশলেস পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ, তারা একসময়ের সাধারণ কাগজ-কলমের মাধ্যমে কাজ করার পদ্ধতি থেকে শুরু করে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার পরিবর্তনকে গ্রহণ করেছে।
ইন্টারনেটহীন সমাজে যাত্রা শুরু করে আজ তারা সামাজিক যোগাযোগের এক স্বর্ণযুগ পাড়ি দিচ্ছে। খাতা-কলমে চিঠি লেখার মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে আজ ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এর ফলে এ প্রজন্মের সামনে প্রযুক্তিগত অভিযোজন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা তাদের জীবনকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করতে বাধ্য করেছে। এভাবে জেনারেশন এক্সের জীবনযাত্রা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর এক বিশেষ অধ্যায়ের প্রতিফলন ঘটায়, যেখানে তারা অতীতের প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে এবং সেই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেছে।
একাডেমিক গবেষণা বলছে, এ প্রজন্ম যেন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের বর্ণময় ক্যানভাসের সাক্ষী। বাংলাদেশে তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক পালাবদলের এক দীর্ঘ যাত্রার নায়ক। বঙ্গবন্ধুর শাসন, তার আদর্শের উজ্জ্বল আলো; জিয়াউর রহমানের শাসন, তার ধারণার কৃত্রিম ঝলক; এবং এরশাদের শাসন, তার অদ্ভুত এক স্বাদ-সবই এ প্রজন্মের চোখের সামনে ঘটে গেছে। যদিও প্রতিটি শাসনামলে আদর্শিক বিচ্যুতি ঘটেছে, তবুও ১৯৭১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ তিনটি দলের নেতৃত্বেই দেশ পরিচালিত হতে হয়েছে। এ প্রজন্ম, যাদের কৈশোর ও যৌবনকাল এ পরিবর্তনের মাঝে কেটে গেছে, তারাই সবচেয়ে সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারবে কোন শাসনামল কেমন ছিল এবং কোন আদর্শের কী মাধুর্য ও ত্রুটি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এ ধরনের পরিবর্তনের প্রভাবে এ প্রজন্মের ব্যক্তিরা পারিবারিক জীবনে অসন্তুষ্টি ও বিবাহবিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
জেনারেশন ওয়াই, যা মিলেনিয়ালস নামে পরিচিত, তাদের জন্ম ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে, বর্তমানে বয়স ২৯ থেকে ৪৪ বছরের সীমায় বাঁধা। গবেষণা বলছে, এ প্রজন্মের হৃদয়ে ভোগবাদিতার মোহ, বাস্তবিকতার দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইতিবাচকতার আলো মিশে আছে। পরিবর্তনের আঙিনায় তারা হাঁটে কিন্তু বাঁধা পথের বাইরে পা বাড়াতে চায় না। এ প্রজন্মের জনসাধারণ মূলত একটা প্রচলিত কাঠামোর মধ্যে থেকে পরিবর্তনে বিশ্বাস করে। যদি আমরা এ প্রজন্মের বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করি, তাহলে তা একাডেমিক গবেষণার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এ প্রজন্ম আগের প্রজন্মের রাজনৈতিক কাঠামোতেই নিজেদের নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছে। এ প্রজন্ম তাদের কৈশর ও যৌবনকালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিতীয় সংস্করণের শাসনামল দেখেছে।
গণতন্ত্রের ধ্রুবতারা হয়ে তারা বড় হয়, কিন্তু কখনো কাঠামো ভেঙে নতুন কিছু গড়ার সাহস দেখায় না। নিরাপত্তার খোলসে মুড়ে রেখে তারা তাদের জীবনকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে চেয়েছে, কিন্তু সমাজ বা রাজনীতিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের ঝড় তোলেনি। ফলে এ প্রজন্মটি তেমন কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। এ প্রজন্ম বাস্তবতার বুননে দক্ষ, নিজের জীবনের উন্নতি সাধনে সফল হলেও সমাজের বুকে নতুন গল্প লেখার তাগিদ অনুভব করেনি। তাদের পথচলা ছিল নীরব, কিন্তু সেই নীরবতার মধ্যেও ছিল এক ধরনের সফলতার সূক্ষ্মতা-বাস্তবিক হওয়ায় বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে থেকেও নিজের জীবনে উন্নতি সাধনে তারা বেশ সফল।
জেনারেশন জেড, যার জন্ম ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, বর্তমানে তাদের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ সদস্যের বয়স ২৮ বছর। এ প্রজন্মকে সংক্ষেপে ‘Gen Z’ বলা হয়। বর্তমানে তারাই সামাজিক মাধ্যম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এদের ‘Net Gen’ ও ‘Zoomers’ নামেও পরিচিত করা হয়। জেনারেশন জেড বেড়ে উঠেছে অটোমেশন, স্মার্ট প্রযুক্তি এবং সামাজিক মাধ্যমের গভীর প্রভাবের মধ্যে, যা তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এ প্রজন্মের সদস্যরা ইন্টারনেট ছাড়া একমুহূর্তও কাটাতে প্রস্তুত নয় এবং এটি তাদের জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে।
জেনারেশন জেড হলো প্রথম সামাজিক প্রজন্ম, যারা শৈশব থেকেই ইন্টারনেট এবং পোর্টেবল ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত। তাদের ‘ডিজিটাল নেটিভস’ বলা হয়, কারণ তারা এ প্রযুক্তির সঙ্গে এতটাই মিশে গেছে যে এটি তাদের জন্য একটি দ্বিতীয় প্রাকৃতিক ভাষার মতো। এ প্রজন্ম তাদের পুরো জীবদ্দশায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রত্যক্ষ করবে। তাদের মানসিকতা অনেকটাই প্রয়োগমুখী ও উদার, যা ভবিষ্যতের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের হৃদয়ে যুক্তির শিখা জ্বলে, তাদের সান্ত্বনা দেয় ন্যায্যতার আলো।
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৩৬ শতাংশকে জেন জেড হিসাবে গণ্য করা হয়, যার একটি বড় অংশ ছাত্রছাত্রী এবং সামান্য কিছু অংশ সম্প্রতি শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেছে। এ প্রজন্মের সদস্যরা ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয় এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত ও মুক্তমনা। তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে সক্ষম এবং প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে আগ্রহী। ফলে মিথ্যার বেড়াজালে তাদের বন্দি রাখা যায় না, কারণ তারা সত্যের আলোয় সবসময় উদ্ভাসিত। জেনারেশন জেড তাদের দৈনন্দিন জীবনে ডিজিটাল ডিভাইসে উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এ প্রজন্ম দৈনিক গড়ে ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসে, বিশেষ করে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও কম্পিউটারে সময় কাটায়। তাদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যম এবং ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরমগুলোর প্রতি বিশেষ আসক্তি রয়েছে, যা তাদের ব্যাপক তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে যুক্ত রাখে। এ তথ্যপ্রবাহের কারণে এই প্রজন্মের কাছ থেকে কোনো ঘটনা বা বিষয় লুকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তখন জেন জেড প্রজন্মের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্যদের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। ফলে এ প্রজন্ম তাদের কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত একটি একক দলের শাসনকালে বেড়ে উঠেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়কালে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ জেন জেডের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট দেওয়ার সুযোগের অভাব এবং স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা তাদের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা দীর্ঘ সময় ধরে পুঞ্জীভূত হয়েছে।
ইতিহাস থেকে দেখা যায়, এ ধরনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রায়ই বিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যা নতুন পৃথিবী ও নতুন সমাজব্যবস্থার সূচনার পথ তৈরি করে। জেনারেশন জেডের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যায়, তারা হয়তো সেই পরিবর্তনের অগ্রদূত হতে চলেছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
আমরা আজ জেনারেশন জেডের হাত ধরে এক নতুন ভোরের আভাস দেখছি, যেখানে সমাজ ও রাজনীতির ধারা পরিবর্তনের বিপ্লবী সুর বাজছে। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের ঘটনাগুলো এদেশের মানুষের হৃদয়ে অঙ্কিত হয়েছে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসাবে। রাজপথে নেমে, বুক পেতে, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যে তরুণ প্রজন্ম দাবি আদায়ে সংগ্রাম করছে, তাদের প্রত্যেক সদস্য যেন একেকজন আবু সাইদ, একেকজন মুগ্ধ-সাহসী, অদম্য, বিপ্লবী। ২০১৮ সাল থেকে আমি জেনারেশন জেডকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছি। বিশেষ করে নুরুল হকের নেতৃত্বে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কাজ করার এবং মতবিনিময়ের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। সে সময়ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতার প্রতি গভীর আকাক্সক্ষা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের তীব্র ইচ্ছা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল।
তবে লক্ষণীয়, ২০১৮ সালের আন্দোলনে ওয়াই প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল এবং মূলত তারাই নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেসময় সরকার আন্দোলন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও আন্দোলন চলাকালে সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল, তবে কোনো প্রাণহানি না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সহজেই শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পূর্ণভাবে জেন জেড নেতৃত্ব দেয়। এ আন্দোলনটি পূর্ববর্তী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠলেও এটি জেনারেশন জেডের প্রজ্ঞা, নেতৃত্বের দক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
জেনারেশন জেডের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাদের নমনীয়তা ও প্রজ্ঞা। ২০১৮ সালের আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের সাম্প্রতিক বিপ্লব পর্যন্ত আমরা দেখেছি এ প্রজন্ম কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে একটি অভ্যুত্থানের রূপ দিতে সক্ষম। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা, যারা বুমার বা এক্স প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত, তারা জেন জেডের মনস্তত্ত্ব ও ভাবনা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরং, তারা এ প্রজন্মকে ‘টিকটক প্রজন্ম’ বলে অবজ্ঞা করেছেন, যা সরকারের বিচক্ষণতার অভাবের প্রতিফলন।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এ প্রজন্ম কেবল প্রজ্ঞাবান নয়, বরং তারা অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সংযুক্ত। জেনারেশন জেড তাদের আন্দোলনকে জাতির সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে, তা বিভিন্ন প্রজন্মের সদস্যদের অকুণ্ঠ সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছে। তাদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা।
গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ থেকে প্রতীয়মান হয়, একটি নতুন পৃথিবী এবং নতুন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এবং আমরা আশাবাদী, জেন জেড আমাদের এক নতুন বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাবে। এ প্রজন্মের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন দেশের নতুন ইতিহাস রচনার ইঙ্গিত দেয়। তারা শুধু পরিবর্তনের স্বপ্নই দেখে না, বরং তা বাস্তবায়নের ক্ষমতাও রাখে। বাংলাদেশের জেন জেড প্রজন্মের হাত ধরে একটি নতুন সূচনা আসন্ন, যা আমাদের একটি প্রগতিশীল, সমতাভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে নেবে। তাদের নেতৃত্বে আমরা দেখতে পাব একটি নতুন বাংলাদেশ, যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত থাকবে।
ড. ইলিয়াছ প্রামানিক : সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
ছবি সংগৃহীত