মির্জা আবুল কাশেম :
বাংলাদেশে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন বাংলাদেশি এক ‘সমকামী’ তরুণ ৷ কিন্তু তার আশ্রয় আবেদন নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত ৷
বলা হয়েছে, ওই বাংলাদেশি প্রকৃত সমকামী নন, বরং যুক্তরাজ্যে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেতে ভান ধরেছেন তিনি ৷ খবর: মেট্রো ও ইনফোমাইগ্রেন্টস
নিরাপত্তাজনিত কারণে ওই তরুণের নাম পরিচয় প্রকাশ করেনি সংবাদমাধ্যম।
৩৮ বছর বয়সি ওই বাংলাদেশি তরুণের দাবি, নিজের সমকামী সত্তাকে নিজ দেশে প্রকাশ করতে না পারায় ২০০৯ সালে শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে ৷
যুক্তরাজ্যের পৌঁছানোর পর দেশটিতে আশ্রয় চেয়ে আবদেন করেন ওই বাংলাদেশি, নিজের পক্ষে পেশ করেন নানা প্রমাণ ৷
২০১৮ সালের মার্চে দেশটির অভিবাসনবিরোধ সংক্রান্ত প্রথম স্তরের একটি ট্রাইব্যুনাল তার আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন৷ রায়ে বিচারক বলেছিলেন, আবেদনকারী যে একজন সমকামী, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদপত্র মেট্রো জানিয়েছে, এ সংক্রান্ত একটি নথি দেখেছে তারা ৷
সেখানে বিচারক উল্লেখ করেছেন, পরিশেষে আমি বলতে চাই, আপিলকারী প্রকৃতপক্ষে সমকামী নন৷ বরং তিনি নিজেকে সমকামী হিসাবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন ৷
বিচারক আরো বলেছিলেন, আশ্রয় চাওয়ার আগে আবেদনকারী প্রকৃত সমকামী ছিলেন বলে কোনো নথিভুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি ৷
বিচারক আরো জানতে চেয়েছিলেন, কেন ওই তরুণ তার সমকামী বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পরিচিত এমন কোনো ব্যক্তিকে আদালতে আনতে পারলেন না, যিনি তার সপক্ষে প্রমাণ দিতে পারতেন৷ অবশ্য, আদালতে দুইজন সাক্ষী হাজির করেছেন বাংলাদেশি ওই তরুণ ৷ কিন্তু বিচারক বলেছেন, আপিলকারী প্রকৃতপক্ষে সমকামী কি-না, তা প্রমাণে তারা উপযুক্ত ছিলেন না ৷
এলজিবিটিকিউ, প্রাইড ইভেন্ট এবং নাইটক্লাবগুলোতে বাংলাদেশি ওই তরুণের উপস্থিতি নিয়ে প্রমাণ দাখিল করাও বিচারকের কাছে যথেষ্ট ছিল না ৷
এমনকি সম লিঙ্গের পর্ণোগ্রাফি দেখার ছবি দেখানো হলেও আদালত তা আমলে নেয়নি৷ বিচারক বলেছিলেন, আদালতে পেশ করা সমকামী পর্নোগ্রাফি দেখার ছবিটিও ‘সাজানো’ ছিল ৷
বিচারক আরো বলেছিলেন, ‘‘আপিলকারীর নিজেকে সমকামী প্রমাণের লক্ষ্যে এই ছবি পেশ করেছেন৷ কিন্তু ছবিতে বাহুল্য আয়োজন ও সাজানো ভঙ্গি রয়েছে ৷
তাই আমার মনে হয়েছে, তা আবেদনকারীর দাবির বিশ্বাসযোগ্যতাকে দুর্বল করে দেয়৷’’
রায়ের পর, ওই বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোম অফিসের কাছে আশ্রয় চেয়ে আবার আপিল করেন ৷ কিন্তু ২০১৮ সালের রায়ের ভিত্তিতে এ বছরের জুনে তার আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷
এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ওই তরুণ৷ তাকিয়ে আছেন আপিল আবেদনের রায়ের দিকে৷ কারণ, সেটি যদি বিপক্ষে যায়, তাহলে তাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হবে ৷
ব্রিটিশ সংবাদপত্র মেট্রোকে ওই তরুণ বলেন, সামাজিক ও পারিবারিক কারণে নিজের যৌন অভিমুখিতা ও চর্চা বহু বছর ধরে এড়িয়ে চলতেন ৷
তিনি বলেন, আমার যৌন অভিমুখিতার কারণে, বাংলাদেশে আমার জীবনযাত্রা ছিল খুবই চাপের এবং আতঙ্কের ৷’
তিনি আরো বলেন, আমি বাংলাদেশে সমকামী পুরুষ হিসেবে সাধারণ জীবনযাপন করতে পারিনি৷ যদি কেউ এ বিষয়ে জানতে পারত, তবে আমার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তো৷ বাংলাদেশে থাকাকালে কেউ আমার যৌন অভিমুখিতা সম্পর্কে জানতেন না৷ আমি যখন দেশ ছেড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হলাম, তখনই মানুষ এ ব্যাপারে জানতে পারেন ৷
তাই নিজ দেশে ফিরে যাওয়াটা যন্ত্রণার বলছেন তিনি৷ কারণে, বাংলাদেশ সমকামিতাতে এখনও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি৷
লন্ডনে বসবাসরত এই বাংলাদেশি বলেন, বাংলাদেশে সমকামী হওয়া শুধু সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য নয়, অবৈধও বটে ৷
তিনি বলেন, আমাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হলে, আমার জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে৷ যেহেতু আমার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এখন সবাই জেনে গেছেন৷ ফলে, আমি দেশে ফিরে গেলে সহিংসতার মুখে পড়তে পারি, এমনকি আমাকে হত্যাও করা হতে পারে ৷
অভিবাসন অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিটিশ হোম অফিসে একটি অবিশ্বাসের সংস্কৃতি আছে৷ তাই যখনই এলজিবিটিকিউ+ কেউ আশ্রয়ের আবেদন করে তাদের তারা বিশ্বাস করতে চান না৷
হোম অফিসের একটি চিঠি দেখেছে সংবাদমাধ্যম মেট্রো৷ সেই চিঠি উদ্ধৃত করে মেট্রো জানিয়েছে, হোম অফিসের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশি তরুণকে বলেছিলেন, ‘‘আপনি শরণার্থী মর্যাদার জন্য যোগ্য নন৷ কারণ আপনার পেশ করা প্রমাণের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়নি যে আপনি ঝুঁকিতে রয়েছেন ৷