বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আতাউর রহমান : একজন রাজনীতির ফেরিওয়ালা এবং কিছুকথা
আবুল হোসেন লালন :
রাষ্ট্র, সংগঠন ও রাজনীতির সত্য ঘটনা জানানোর জন্য আর কাউকে বিরক্ত করবেন না তিনি। তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আতাউর রহমান।চলে গেছেন না ফেরার দেশে ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাহ ইলাহি রাজিউন)।
তাকে আমি নানা বলে ডাকতাম, শ্রদ্ধা রেখে আবার অনেক মজাও করতাম কিন্তু একটা বিষয় খুব লক্ষ্য করতাম উনার আলাপের বিষয় ছিল রাষ্ট্র, রাজনীতি, সংগঠন।
স্থানীয় রাজনীতির নেতৃত্বের ভুলত্রুটি,(যদিও রাজনীতিতে এখন আর সমালোচনা আমরা সহ্য করতেই পারিনা) সংগঠনের ভবিষ্যৎ এগুলোই ছিল উনার আলোচনার বিষয়।
আমরা যারা শর্টকাটে নেতা নামের আসলে অযোগ্য সেই মাথামোটা মানুষ হতে চাই তাদের কাছে তিনি ছিলেন বিরক্তিকর!
এখনতো দলীয় অফিস বলেন, সভা সমাবেশ বলেন, কোথাও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দল, দেশ দেশের সঠিক ইতিহাস চর্চা করা এগুলো নিয়ে খুব কমই কথা হয়। নিজে কতটুকু চর্চা করেন সেটা ভাবার বিষয়।
শুধু নিজে নেতার ভাব নিয়ে বসে থাকা, দায়িত্বশীল যারা (যোগ্যতা কতটুকু প্রশ্ন সাপেক্ষ) তারা নিজেদেরকে জাহির করা অধীনস্হদের নিজের মতামত চাপিয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে তাকে নিয়ে যে বেশী তোষামোদি করবে, তার মুল্যায়ন দেখে যাতে নতুন তোষামোদকারী সৃষ্টি হওয়া, আবার যে একটু প্রতিবাদ করে এদেরকে দিয়ে সেই দুষ্টকে আবার সাইজ করা যখন রাজনীতির মুলকাজ যারা মনে করে, এদের কাছে আদর্শিক কথা নেতৃত্ব নিয়ে সত্য বলা মানুষ গুলো বিরক্তিকর!
সৈয়দ আতাউর রহমান অনেকের কাছে ছিলেন সেই রকম সেটা নিজ চোখে দেখেছি নিজ কানে শুনেছি। কিন্তু তিনি একা একা তার মত করে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ এগুলো নিয়েই তিনি পথ চলেছেন কোন স্বীকৃতির আশা করেননি।
অনেকের কাছে তিনি ছিলেন না পারি সরাতে না পারি রাখতে এই পর্যায়ে। যেহেতু তিনি অপমানকে গায়ে না মেখে রাজনীতির আশেপাশেই থাকতেন। তাই সরানোর কোন সুযোগ ছিলনা।
পেশী শক্তিকে যারা রাজনীতি মনে করে তাদের কাছে হালকা অপমানিত হতেও নিজ চোখে দেখারও দূর্ভাগ্য হয়েছে।
পরে আমার সাথে প্রচন্ড অসহায়ত্ব নিয়ে আক্ষেপ করে বললেন এই কি তোমরা রাজনীতি শিখেছো? কিন্তু সেদিন উত্তর দেওয়ার মত আমার কাছে মাথা নীচু করা ছাড়া কোন ভাষাও ছিলোনা! কারণ ইতিমধ্যে কিছু কিছু কথা বলার কারণে নিশানায় আমি আছি।
আর একা একজন মানুষ রাজনীতিকে সঠিক জায়গায় আনতে পারবোনা। ইতিমধ্যে সরাসরি কিছু না বলে ছোট করার জন্য বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করা হয়ে গেছে। তাই আর শত্রু বাড়িয়ে লাভ নাই! এই ভেবে নিজেও সান্ত্বনা খুঁজে নেবার চেষ্টা করেছি।
আজ এই কঠিন সময়ে পরিবার-পরিজন সংগঠন তার চিরদিনের বিচরণের জায়গা রাজনীতির মাঠের পাঠ চুকিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। রাজনীতির এই ফেরিওয়ালা আর কোনদিন আপনার আমার আর কারো বিরক্তের কারণ হবেন না!
আল্লাহ উনাকে ভালো রাখুক । মহান আল্লাহ আতাউর নানাকে জান্নাত দান করুন আমিন।
উল্লেখ্য একাত্তরের রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট রাজনীতিক সৈয়দ আতাউর রহমান গত ১২ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি, শনিবার সকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকা ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো আনুমানিক ৭৫ বছর। ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধুসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। শনিবার স্থানীয় সময় বাদ এশা সৈয়দপুর ঈশানকোনা হালিছাড়া মাটে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে চীরনিদ্রায় শায়িত হন প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধা।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি –
ঐতিহ্যবাহী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন সৈয়দপুর গ্রামের সন্তান সৈয়দ আতাউর রহমান ষাটের দশকে ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেন। এই দীর্ঘ ছয় দশক ধরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ ধারন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে রাজনীতির মাটে কর্মরত ছিলেন তিনি।
সিলেটের এমসি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে প্রথম ছাত্রলীগ গঠন করলে সৈয়দ আতাউর এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। কমিটির সভাপতি ছিলেন আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান। অতঃপর জেলা পর্যায় পেরিয়ে সৈয়দ আতাউর রহমান যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। তিনি ছিলেন একজন রাজনীতির ফেরিওয়ালা ।
লেখক :
আবুল হোসেন লালন,
সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ,
সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান – জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ।
ও
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
জগন্নাথপুর উপজেলা।