সাজিদুর রহমান, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি ডায়াস্পোরা বা প্রবাসী আছেন যারা রাজনীতি, ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং একাডেমিয়াতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এই ডায়াস্পোরাদের সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়নে আরও গভীর ও অর্থবহ সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে অক্সফ্যাম আনুষ্ঠানিকভাবে “ব্রিজ টু বাংলাদেশ”নামে নতুন একটি প্লাটফর্মের উদ্বোধন করেছে।
শনিবার (২৪ মে) লন্ডনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্ল্যাটফর্মটি শুভ সূচনা করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য হলো প্রবাসীদের জ্ঞান, দক্ষতা, বিনিয়োগ ও প্রচারণাকে বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকার যেমন—জলবায়ু সহনশীলতা, জেন্ডার সমতা, মানবিক সহায়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করা।
লন্ডনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য, একাডেমিশিয়ান, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের তরুণরা।
অনুষ্ঠান ও প্লাটফর্ম উদ্বোধনের অন্যতম লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের একটি দীর্ঘমেয়াদি ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের তৈরি করা।
লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, বার্মিংহাম ও লুটন সহ অন্যান্য শহরে বা এলাকায় বসবাসরত এই প্রবাসী সম্প্রদায়টি নীতিনির্ধারক,রাজনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং জননেতাদের নিয়ে গঠিত।
প্রতিবছর তারা বাংলাদেশের দেড় বিলিয়নে মার্কিন ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স বাংলাদেশে পাঠন।
অনুষ্ঠানের আলোচনায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরও কাঠামোগত এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়া উচিত।
ব্রিজ টু বাংলাদেশ সেই শূন্যস্থান পূরণ করতেই যাত্রা শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রবাসীরা কেবল টাকা পাঠান না, তারা এ কমিউনিটিকে গড়ছেন, বাংলাদেশকে প্রতিটি সংকটে সহযাত্রী হয়েছেন। ‘ব্রিজ টু বাংলাদেশ’ এখন তাদের সেই শক্তিকে ভবিষ্যৎ নির্মাণের অংশীদার করবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন -বারোনেস পোলা উদ্দিন, যিনি উদ্যোগটিকে “সমষ্টিগত উন্নয়নে সময়োপযোগী উদ্যোগ” হিসেবে উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া প্রফেসর নাওমি হোসেইন বলেন, “সম্মান ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, এবং প্রবাসী সম্পৃক্ততা অবশ্যই ন্যায় ও মর্যাদার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে অক্সফ্যাম জিবির প্রধান নির্বাহী হালিমা বেগম বলেন, “গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধারে অক্সফ্যাম বাংলাদেশের পাশে থেকেছে, বাংলাদেশের উন্নয়নে। আজ আমরা সেই একই অঙ্গীকার নিয়ে দাঁড়িয়েছি আমাদের প্রবাসীদের পাশে, যাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ সবসময় জায়গা করে আছে।”
ব্রিজ টু বাংলাদেশ একইসঙ্গে দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। এটি একটি বহুমাত্রিক প্ল্যাটফর্ম—যেখানে থাকবে জ্ঞান বিনিময়, বিনিয়োগ সংযোগ, তরুণদের সম্পৃক্ততা, কূটনীতি এবং বৈশ্বিক প্রচারণার সুযোগ।
অক্সফ্যাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশিস দামলে বলেন, “প্লাফর্মটি শুধুমাত্র আবেগ বা স্মৃতির জন্য নয়—এটি জাতি নির্মাণে সহযোগিতা করবে। প্রবাসীদের আছে মূলধন, কিন্তু তার বাইরেও আছে চিন্তা, নেটওয়ার্ক, প্রভাব। আমরা চাই সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে।
“প্রবাসীরা কেবল আর্থিক সহযোগিতা বা বিনিয়োগই নই; একইসাথে জ্ঞান, প্রযুক্তি নেটওয়ার্ক এবং প্রভাবও প্রদান করতে পারে। আমরা সেই সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করতে চাই এবং এটিকে টেকসই প্লাটফর্মে রূপান্তর করতে চাই।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অক্সফ্যাম জিবির প্যাট্রন আজিজ-উর রহমান ।
মূল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ওক্সফ্যাম ইন বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের প্রধান মো শরিফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিরা ব্রিজ টু বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার জন্য সংকল্প ব্যক্ত করেন।
প্ল্যাটফর্মটির ওয়েবসাইট ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। অক্সফ্যাম ও তার অংশীদাররা ইউকে-ভিত্তিক ডায়াস্পোরাদের এই উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য।