নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট :
সিলেটে কবি বদরুজ্জামান জামান এর কাব্যগ্রন্থ “মুক্তির সংগ্রামে দাঁড়াও” এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিলেটের হলি ইন হোটেলে কথা সাহিত্যিক শামসুল কিবরিয়ার সঞ্চালনায় এবং নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাবেক অধ্যক্ষ লিয়াকত শাহ ফরিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- বুনন প্রকাশনী স্বত্বাধিকারী কবি, সম্পাদক ও প্রকাশক খালেদ উদ-দীন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এম সি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. সাহেদা আক্তার।
মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আঞ্জুমান আরা বেগম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও সম্পাদক পুলিন রায় ।
অনুষ্ঠানে ‘মুক্তির সংগ্রামে দাঁড়াও’গ্রন্থের উপর দীর্ঘ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থ সমালোচক মামুন সুলতান। অনুভূতি ব্যক্ত করেন গ্রন্থের লেখক কবি ও সম্পাদক বদরুজ্জামান জামান।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন- সাবেক অধ্যক্ষ নিয়াজ উদ্দিন,
লন্ডন প্রবাসী কবি ও গীতিকার শাহ সোহেল, লেখক ও সাংবাদিক সালমান ফরিদ, কবি আয়েশা করিম মুন্নি, কবি ও সাংবাদিক তাসলিমা খানম বিথী, সাংবাদিক আব্দুল বাসিত, কবি জালাল জয়, গল্পকার জিম হামজা, কবি ইমামুল ইসলাম রানা, কবি ইলহাম সাদী, কবি সুয়েজ হোসেন, কবি কামাল আহমেদ, বাহাউদ্দিন বাহার, মিজানুর রহমান মিজান প্রমুখ।
“মুক্তির সংগ্রামে দাঁড়াও” গ্রন্থের কবিতাগুলো জুলাই বিপ্লবের পূর্বাপর সময়ে লেখা। তাই কবিতাগুলো অভ্যুত্থানের কবিতা। এ দুঃসময়ে একজন কবির মানসিক অস্থিরতা প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির যুগল সমীকরণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় কবির মানবিক চেতনাবোধ কবির অঙ্গীকার কবির সমর্থন কবির হৃদয়জ আহাজারি বৈপ্লবিক চেতনার উত্থান পতনের রক্তদোলা ইত্যাদি সংগ্রামী মূল্যবোধ বিষয়ক কবিতা এই গ্রন্থের সংযোজিত হয়েছে। জুলাই মাসে বাংলার মানচিত্রে যে রক্তাঙ্কিত রেখাপাত ঘটেছে তারই সচিত্র প্রেক্ষাপট কবি বলার চেষ্টা করেছেন। গ্রন্থটি পাঠে মনে হয়েছে কবি দূর প্রবাসে বসে স্বদেশের নির্মম বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন।
জুলাই আন্দোলন প্রতিদিন যেমন ভিন্ন রূপে গতিশীল হয়েছে কবির কবিতাও সে দিকে ধাবিত হয়েছে।
অধিকার আদায়ে ছাত্র জনতার ন্যায্যতার প্রশ্নে কবিও কাতর ছিলেন। শাসকগোষ্ঠীর নির্মম হিংস্রতাকে কবি বারবার কটাক্ষ করেছেন। সহিংস স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কবি ছিলেন সোচ্চার। কবির সমর্থন ছিল নিষ্কণ্টক। কোন প্রকার আড়াল রাখেননি কোথাও। সরাসরি আঘাত করার মতো শক্তি নিয়ে সাহস নিয়ে কবি চালিয়ে গেছেন কবিতার যুদ্ধ। রক্তে বান আসলে বিপ্লবীরা যেমন জীবন মরণ লড়াই করতে প্রস্তুত কবি বদরুজ্জামান সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দুঃশাসন মোকাবেলা করা সত্যিই কঠিন। কবি সেই কঠিন সত্যের পথ বেছে নিয়েছেন নিষ্ঠার সাথে আঞ্জাম দিয়েছেন কবিতার ভাষায়। দূর প্রবাসে থেকেও প্রতিদিনের রোজনামচার মতো ঘটনাপ্রবণ কবিতা লেখার রসদ জোগাড় করতে পেরেছেন। তাই তিনি প্রবাসী জুলাই যোদ্ধা।
বক্তারা আরো বলেন- কবি বদরুজ্জামান জামান আকস্মিক কোন লেখক নন। কবিতায় তিনি দীর্ঘ পথ হারিয়ে দিয়েছেন। ছাত্র জীবন থেকে কবিতার সাথে তাঁর পথ চলা । কবিতাকে তিনি ভালোবাসেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। অন্যদিকে তিনি বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী সাহিত্যবোদ্ধা লেখক। নাটকে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ছড়া, কবিতা ও ছোট গল্পের বহুমাত্রিক লেখক তিনি। সাহিত্যের ছোট কাগজ ‘স্রোত’ সম্পাদনা করেন। ইতিমধ্যে তাঁর অনেক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ‘অশান্ত সমুদ্র পুষি (২০১৫), বোধের দরজায় খিল (২০১৬), নানা রঙের ছড়া(২০১৭), জলরঙে আঁকা ছবি(২০১৮), জঠরে ক্রন্দন সুর(২০১৯), জেগে আছে রোদ্র ছায়ায়(২০২০), আদিম অরণ্যে মানুষের পৃথিবী(২০২১)।
কবি বদরুজ্জামান জামানের সর্বশেষ গ্রন্থ ‘মুক্তির সংগ্রামে দাঁড়াও । গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘বুনন’ । শফিক মামুনের নজর কারা প্রচ্ছদে ঝকঝক ছাপায় গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়েছে। গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন কবি মামুন সুলতান কে। কবি বদরুজ্জামান জামানের সাহিত্যচর্চা দীর্ঘায়িত হোক । কাল উত্তীর্ণ লেখায় পূর্ণ হোক কবির কাব্যিক জীবন। অনুষ্ঠানে এমনটাই প্রত্যাশা করেন প্রধান অতিথিসহ আগত সকলেই।
অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বুনন প্রকাশন।