জগন্নাথপুর টাইমস অনলাইন ডেস্ক :
সিডনিতে বাংলাদেশি তরুণ আশরাফের নতুন স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার গল্প।
সিডনির রাস্তায় চকচকে বিএমডব্লিউ বা মার্সিডিজ যখন ছুটে চলে, গাড়ির বুকে ঝলমল করে ‘এমএনএমরাইডজ চাউফার’ (MNMRiDEZ chauffeur)-এর লোগো। অনেকেই জানেন না এই বিলাসবহুল সেবার পেছনে আছে এক বাংলাদেশি তরুণের অদম্য পরিশ্রম, অসমাপ্ত বন্ধুত্বের বেদনা এবং নতুন স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার গল্প।
শুরুটা ছিল হাতেকলমে কাজ দিয়ে। ২০০৭ সালে স্বপ্নভরা ব্যাগ নিয়ে আশরাফ রহমান পা রাখেন অস্ট্রেলিয়ায়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে দিনে ক্লাস, রাতে থালাবাসন ধোয়া কিংবা সাবওয়ের কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা এভাবেই শুরু তাঁর বিদেশজীবন। ‘সেই দিনগুলোই আমাকে কঠিন হতে শিখিয়েছে। আজ যা হয়েছি, তার ভিত্তি তখনই তৈরি হয়েছে,’ বলেন আশরাফ।
২০০৯ সালে এক সিনিয়রের সহায়তায় কোলস সুপারমার্কেটে চাকরি পান আশরাফ। বিজনেস ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা শেষ করে তিনি নির্বাচিত হন কোলসের মর্যাদাপূর্ণ রিটেইল লিডার প্রোগ্রামে যেখানে হাজারো আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ৩০ জন পায় এই সুযোগ। ‘এটা আমার জীবনের প্রথম বড় স্বীকৃতি। মনে হয়েছিল, সব কষ্ট সার্থক হলো,’ স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
সংকটের দিনেও লড়াই চালিয়ে যান আশরাফ। ২০১২-১৩ সালে ভিসা নীতি পরিবর্তনের ফলে তার স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু কোলস তার দক্ষতার স্বীকৃতি দেয়—কোম্পানি সম্পূর্ণ স্পনসরশিপ খরচ বহন করে। তিনি বলেন, ‘ওই মুহূর্তটা আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। আমি বুঝলাম মানুষ যদি নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে, সুযোগ একদিন আসবেই।’
ডারউইন ও পার্থে থাকার সময় তিনি অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর অভিভাবক হয়ে ওঠেন। এসময় তার জীবনে আসে মুন্না, এক ভাইয়ের মতো বন্ধু। কিন্তু হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মুন্নাকে হারিয়ে আশরাফ গভীর শোকে ডুবে যান। ‘মুন্না আমাকে শিখিয়েছে জীবনের সেরা প্রাপ্তি হলো অন্যকে সাহায্য করা,’ বলেন আশরাফ।
একটি বিএমডব্লিউ থেকে শুরু করেন তিনি। ২০১৯ সালে সেই শিক্ষা থেকেই জন্ম নেয় ‘MNMRiDEZ chauffeur’। একটি বিএমডব্লিউ দিয়ে শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি আজ মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেনসহ অস্ট্রেলিয়ার বড় শহরগুলোতে ১০০-রও বেশি চালকের সমন্বয়ে একটি জাতীয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ, আন্তর্জাতিক অতিথি, সেলিব্রিটি, খেলোয়াড় সবাই এখন এমএনএমরাইডজের গ্রাহক।
