জগন্নাথপুর টাইমসশনিবার , ৬ মে ২০২৩, ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুনামগঞ্জে বাম্পার ফলন : উৎপাদন ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকার ধান

Jagannathpur Times BD
মে ৬, ২০২৩ ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সাইদুর রহমান আসাদ, সুনামগঞ্জ :

সুনামগঞ্জের ধানের বাম্পার ফলন
হাওরে ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা ধান উৎপাদন
কৃষকের মুখে হাসি ।
সুনামগঞ্জের এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে
থাকায় কৃষকরা ধান শুকিয়ে স্বস্তিতেই গোলায় ধান তুলতে পেরেছেন।
১২ উপজেলায় এবার আবাদকৃত জমিতে ধান উৎপাদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা
হয়েছে ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার মে. টন। যা টাকার অংকে ধারায় ৩ হাজার ৮শ’
কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন
হয়েছে ধান।
তীব্র গরম, কাঠফাটা রোদে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।
সূর্য ওঠার পরপরই বাড়তে থাকে তাপমাত্রার পারদ। তবে এই কাঠফাটা
রোদের বৈশাখ কৃষকের আশীর্বাদ হয়েছে।

শনিবার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালিয়াকোটার হাওরের কৃষক ফয়েজ মিয়া এমনটাই ব্যক্ত
করছিলেন।
তিনি বলেন, এবারের বৈশাখে আকাশ থেকে আগুনের মত ঝরে পড়া রোদে
ধান তাড়াতাড়ি পেকেছে, ঠিক তেমনি ধান দ্রুত শুকাতে পেরেছে
কৃষক। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছর বৃষ্টির পানির জন্য হারভেস্টার
মেশিন দিয়ে ধান কাটা বা ধান পরিবহনে কষ্ট হতো। কিন্তু এবছর এই
সমস্যা হচ্ছে না।
জেলার বৃহৎ বোর ফসলি হাওরের উপজেলা তাহিরপুরেও এবার ধানের বাম্পার
ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরে
ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ধানের গোলা এখন
সোনালি ধানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ কম্বাইন্ড
হারভেস্টার থাকায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সুবিধা পেয়েছেন
তারা। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

তাহিরপুরের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর দুই দফা
বন্যার পানির সাথে ভেসে আসা পলিমাটি কারণে এবার ফসল বেশি
হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েক জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান হাওরকে সোনার
ফসলে ভরিয়ে দিয়েছে।
ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী বলেন, এবারের ফসলের
সাথে কোন তুলনাই হয় না, বিগত ১৫ বছরের মধ্যে এবারই ধানের
বাম্পার ফলন হয়েছে।

এদিকে দিরাইয়ে সরজমিনে কালিয়াকোটা, বরামসহ বিভিন্ন হাওরে
ঘুরে দেখা যায়, এ বছর হাওরে বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি দেশজুড়ে
বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদাহ ও গরম হাওরের ধান দ্রুত পাকতে সাহায্য
করেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় হাওরের ধান ছিল শুকনো। কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে
দ্রুত ধান কেটে সহজেই ট্রাক্টর, ট্রলি বা ইঞ্জিনচালিত যান দিয়ে তারা
বাড়ি নিয়ে এসেছেন এবং তা দ্রুত শুকিয়ে গোলায় তুলতে সক্ষম
হয়েছে।

কৃষক রানু পুরকায়স্থ বলেন, খড়া থাকার সুযোগে আমাদের
কালিয়াকোটা হাওরের জটিচর, কাইমা, মধুপুর, দলুয়া, গচিয়া,
অনন্তপুর, মির্জাপুর অংশেই ১১-১২ টি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কৃষক
দিন ও রাতে ধান কেটে প্রায় শেষ পর্যায়ে।
কৃষক মুক্তার মিয়া জানান, গত বছরের অকাল বন্যায় বেশকিছু হাওর ডুবে
গিয়ে শতশত কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবছর এখন পর্যন্ত
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান কাটা ও শুকাতে কোন সমস্যা হয়নি।
তবে ব্যতিক্রম সুনামগঞ্জ সদরের শিয়ালমারা হাওরের কৃষক মইনুদ্দীনের,
তিনি বলেন, এবার ব্রি ২৮ ধানের বেশ কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা
দেয়ায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আগামীতে ব্রি ২৮ এর পরিবর্তে অন্য
কোন ধান চাষ করতে হবে।
সুনামগঞ্জ সদরের গোয়াচোরা হাওরের কৃষাণী ফুলেছা বলেন, সরকারী
গোদামে ন্যায্যমূলে ধান দিতে পারলেই আমরা খুশি হবো।

এদিকে হাওরে ২ লক্ষাধিক পুরুষ শ্রমিক ও এক হাজার হারভেস্টার মেশিনে
ধান কাটলেও খলায় ধান শুকানোসহ গোলায় তোলার জন্য ধান
প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করছেন নারীরা। হাওর ঘুরে দেখা গেছে, নারী
পুরুষের শ্রমেই এবার ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকার ধান গোলায় উঠছে।
সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো
ধান আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে ধান উৎপাদানের লক্ষমাত্রা ধরা
হয়েছে ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার মে. টন। যা চালের পরিমাণে দাড়ায় ৯ লাখ ২
হাজার মে. টন। আর টাকার অংকে প্রায় ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা।
জেলায় মোট ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এই পরিবারগুলো
সরাসরি হাওরে ধান চাষাবাদের সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা
জমিতে বীজ বপন, রোপন ও ধান কাটাতে কাজ করেন। অপরদিকে পরিবারের
নারী সদস্যরা, গবাদিপশুর জন্য খড় শুকানো, খলায় ধান শুকানো, উড়ানোর
(ছাটা হওয়া ধান আলাদাকরণ) কাজসহ গোলায় তোলার
প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করছেন। এভাবেই নারী পুরুষের সম্মিলিত
শ্রমে মজবুত হচ্ছে হাওরের অর্থনীতি।
শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, খরচার হাওর, ঝাওয়ার হাওর ও দেখার হাওরের
কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাওরে ধান কাটতে পুরুষ এবং মাঠে
কাজ করছেন নারী। পুরুষরা ধান কাটলেও নারীরা মেশিনে মাড়াই, খড়
নাড়া, ধানখলা তৈরি, ধান শুকানোসহ নানা কাজ করছেন। তাদের সঙ্গ
দিচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। শুধু চাষী পরিবারের নারীরাই নন,
শ্রমজীবী নারীরাও কাজে নেমেছেন হাওরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশাখী মওসুমে ধান কাটার সময় হাওরের চাষী
পরিবারের নারী পুরুষ সাধারণত বাড়িতে থাকেন না। পুরুষরা হাওরের ধান
কাটার কাজ করেন। নারীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেই ধান মাড়াই,
গবাদিপশুর জন্য খড় সংগ্রহ, ধান শুকানো, খলাঘর তৈরিসহ সকাল থেকে
সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন। অনেক নারী পরিবারের পুরুষের সঙ্গে হাওরের
কান্দায় সাময়িক তৈরি খলাঘরেও অবস্থান করেন। কৃষক পরিবারের

পাশাপাশি দরিদ্র ও শ্রমজীবী পরিবারের নারীরাও শ্রমিক হিসেবে হাওরে
নেমে কাজ করতে দেখা গেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম
বলেন, শনিবার পর্যন্ত (২৯ এপ্রিল) হাওরের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে।
এবছর ১ হাজার হারভেস্টার মেশিনের পাশাপাশি ২ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক
হাওরে ধান কাটছে। ধান মাড়াইয়ের পর শুকানো কাজে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার
কৃষক পরিবারের নারী সদস্যরা কাজ করছেন। এবছর রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া
থাকায় প্রত্যেকে খুশি মনে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি বাম্পার
ফলনে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলন পাবো।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।