নিউজ ডেস্ক :
’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভায়, হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন- আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পারে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে’ ।
’৭১-এ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
২১ মে (২০২৩) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
সভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল, যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্লাকবার্ন ও সর্ব-ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউরোপীয় ফোরাম ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী আরমা দত্ত, সমাজকর্মী কাজী মুকুল, শহীদ সন্তান ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, শহীদ সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা, শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন, সংস্কৃতিকর্মী ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী, সমাজকর্মী শেখ আলী শাহনেওয়াজ পরাগ, সমাজকর্মী শিমন বাস্কে, সমাজকর্মী সাইফ উদ্দিন রুবেল, চলচ্চিত্রনির্মাতা পিন্টু সাহা, মানবাধিকারকর্মী ফয়সাল হাসান তানভীর, এডভোকেট তানজীর মান্নান রুপম, সমাজকর্মী আব্দুল হালিম বিপ্লব, লেখক ড. এসএম সারওয়ার মোর্শেদ সৈকত, অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট দাইয়ান খান সমীর, সমাজকর্মী তপন দাস, কন্ঠশিল্পী শাহরুখ কবির, আবৃত্তিশিল্পী সুশীল মালাকার, সাংবাদিক সাইফ রায়হান, সমাজকর্মী হারুণ অর রশীদ, সমাজকর্মী তাহজিবুল ইসলাম তানভীর প্রমূখ।
‘বাংলাদেশ সফরকারী গণহত্যাবিষয়ক ইউরোপীয় প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরে স্বাগত জানিয়ে নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির জানান, ১৯৭১-এ সংঘটিত বাংলাদেশের গণহত্যা এবং বিভিন্ন দেশে এখনও চলমান গণহত্যাসমূহের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজনÑ প্রথমত গণহত্যাকারীদের শাস্তি দিয়ে ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য এবং দেশে দেশে গণহত্যার পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য।
১৯৭১-এ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার নির্দিষ্ট রাজনীতি ও দর্শন রয়েছেÑ এটা পশ্চিমাদের অনেকে বুঝতে চান না। ’৭১-এ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল ধর্মের নামে। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা এবং তাদের এদেশীয় প্রধান দোসর জামায়াতে ইসলামী এই গণহত্যা করেছে ইসলামের দোহাই দিয়ে। জামায়াত মনে করে ইসলাম ও পাকিস্তান সমর্থক এবং একে রক্ষার জন্য গণহত্যা সহ মানবতাবিরোধী যে কোনও অপরাধ করা যায়। আমেরিকা, চীন এবং তথাকতিত মুসলিম উম্মাহ-র দেশগুলো ১৯৭১-এ পাকিস্তানের পাশে থেকে ’৭১-এর গণহত্যায় মদদ দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর দর্শন হচ্ছে রাজনৈতিক ইসলাম, যা উপমহাদেশে ‘মওদুদিবাদ’ নামে পরিচিত। গণহত্যাকারী, সন্ত্রাসী জামায়াতে ইসলামীকে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট মনে করে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মডারেট ইসলামী দল। ধর্মের নামে সন্ত্রাসের দুর্গ পাকিস্তান হচ্ছে আমেরিকার তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধনীতি’র অন্যতম অংশীদার। আমেরিকাকে এই দ্বিচারিতা পরিহার করতে হবে। আমেরিকা ও ন্যাটোকে বুঝতে হবে বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি না দিয়ে পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্র বা জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতাপ্রদান অব্যাহত রাখলে অন্তিমে তাদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে এবং আগামীতে ৯/১১-এর মতো বহু সন্ত্রাসী ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বাংলাদেশকে করুণা করার জন্য নয়, নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে পশ্চিমা বিশ্বকে পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামীর মতো রাষ্ট্র ও দলকে সন্ত্রাসীদের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহে আশ্রয়গ্রহণকারী চৌধুরী মঈনুদ্দিন, আশরাফুজ্জামান ও মোবারকের মতো শীর্ষ গণহত্যাকারীদের বাংলাদেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে স্ব স্ব দেশের আইনপ্রণেতা ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য সফরকারী ইউরোপীয় প্রতিনিধিলকে অনুরোধ করেন শাহরিয়ার কবির।
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য যে উদ্যোগ নির্মূল কমিটি নিয়েছে এজন্য নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের গণহত্যাকারীদের বিচার এবং গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এতে আমাদের পরিপূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আমরাও আপনাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করব। বাংলাদেশে যে বর্বর, নৃশংস ও ন্যাক্কারজনক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তা যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় এজন্য ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রয়োজন।
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা মানে গণহত্যায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা।’
সভায় আমন্ত্রণের জন্য নির্মূল কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে নেদারল্যান্ডের সাবেক সংসদ সদস্য ও মানবাধিকার নেতা হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘আপনারা ‘৭১-এর গণহত্যার স্বীকৃতি জন্য বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। আমরা এখানে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনে বুঝতে পারলাম কতটা ভয়ংকর ও নৃশংস ছিল একাত্তরের গণহত্যা। আমরা বুঝতে পারছি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই না এমন গণহত্যা আর সংঘটিত হোক। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিই পারে গণহত্যার নৃশংসতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে।’
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একাত্তরের গণহত্যায় পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরা যে নির্মমতা নৃশংসতা ও বর্বরতার উদাহরণ রেখেছে তা সকলের জানা উচিত। গণহত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে যেন অন্য কেউ একই অপরাধ করতে উৎসাহিত না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডাচ পার্লামেন্টের এমপি থাকাকালীন বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে কথা বলেছি এবং আগামীতেও ডাচ পার্লামেন্টসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এ বিষয়ে কথা বলব।’
বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের সম্মিলিত প্রতিষ্ঠার গুরুত্বারোপ করে সর্ব-ইউরোপীয় নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইউরোপীয় ফোরাম ফর বাংলাদেশ-এর সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সকলে যদি একযোগে কাজ করতে পারি তাহলেই বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় সম্ভব।’
আনসার আহমেদ উল্লাহর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে মানবাধিকারকর্মী হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেন, ‘পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতেই তাদের বিচারকার্য পরিচালিত হতে পারে এক্ষেত্রে তিনি রাশিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ান সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতিতেই তাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী সমাজকর্মী আরমা দত্ত এমপি বলেন, ‘১৯৪৮ সালের ২৫ আগস্ট, পাকিস্তান গণপরিষদে অধিবেশনের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাভাষায় অন্তর্ভুক্ত রাখার দাবি উত্থাপন করে যে তীর ছুড়েছিলেন পাকিস্তানিদের বুকে, তার অসহ্য যন্ত্রণায় হায়েনারা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। মূলত সেখান থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল।
‘২৯ মার্চ, ১৯৭১ সালের দিবাগত রাতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তাঁর পুত্র দিলীপকুমার দত্তসহ গ্রেফতার হন পাকিস্তানি ঘাতকদের হাতে। তাঁদেরকে ময়নামতী সেনানিবাসে নিয়ে অমানবিক অত্যাচারের পর হত্যা করা হয়। পাকিস্তানিরা ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর এতটাই অসন্তুষ্ট ছিল যে, পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে হত্যার পর মৃতদেহগুলোকেও গায়েব করে ফেলেছে, তাঁদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।’
শহীদ সন্তান ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘যে সমস্ত প্রগতিশীল মানুষেরা নিজেদের চিন্তাধারা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তাঁদেরকেই পাক হানাদাররা বেছে বেছে হত্যা করে কারণ তাঁরাই ’৪৭-এর পর থেকে বাঙালি সমাজকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন স্বকীয় জাতিসত্তা নিয়ে স্বাধীন দেশে বসবাসের জন্য। আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা গত ৫২ বছর ধরে বলে আসছি কিন্তু ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো হয় আমাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে নইলে ঘুমিয়ে থেকেছে। শিকড়ের কথা মনে রাখলে কেউই পথ হারায় না’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, জার্মানি এত এগিয়ে যাবার কারণ তারা দিশেহারা হয়নি- গণহত্যার বিচার তারা করতে পেরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম কোন পথে যাবে এ নিয়ে তারা বিভ্রান্ত কারণ আমরা এখনো বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করতে পারিনি।’
শহীদ সন্তান তানভীর হায়দার চৌধুরী শোভন বলেন, ‘হিন্দু হলে ভারত, মুসলমান হলে পাকিস্তান এই চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে যাঁরা বাঙালি সত্তার ধারক ও বাহক ছিলেন পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা তাঁদের বেছে বেছে হত্যা করে। আমার পিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে একটি গ্রন্থ রচনার কারণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর আল বদর বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে।
‘আশরাফুজ্জামান ও মঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিল। আশরাফুজ্জামান খান ছিল সেই হত্যাকাণ্ডের ‘চিফ এক্সিকিউটর’। আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিল সেই পরিকল্পনার ‘অপারেশন ইনচার্জ’।’
শহীদ সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা বলেন, ‘এদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে বুদ্বিজীবীরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। যার কারণে দিনের পর দিন আন্দোলন ক্রমাগতভাবে বেগবান হয়েছিলো। সেই আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন আমার বাবা। সেই আন্দোলনের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগার। সেজন্যে তিনি খুব চিহ্নিত ব্যক্তি ছিলেন। স্বাধীনতার জন্য আমার বাবা যেহেতু সরব ছিলেন সেজন্য অনেক ভীতু লোক সেসময় আলীম চৌধুরীর গাড়ি দেখলে গেইট বন্ধ করে দিত। আলিম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে এটা যদি প্রকাশ পায়, যদি ওদের সমস্যা হয়। উনি তেমনই চিহ্নিত ব্যক্তি ছিলেন। আগস্ট মাসের শেষের দিকে আমাদের বাসায় পিডিবির মতিন একজন লোককে নিয়ে আসে। তিনি হলেন মাওলানা মান্নান। যিনি ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিল। তিনি মূলত বাবাকে হত্যা করার জন্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। বিজয়ের আগের দিন রাতে আমাদের দরজা নক করেন। বন্ধুকধারী ক’জন এসে বাবাকে নিয়ে যান। আমার মা বাবাকে ফেরত চাইলে তিনি বলেন, তিনি ফিরে আসবেন। হয়তো যুদ্ধে কেউ আহত হয়েছেন সেজন্য তাকে নিয়ে গেছেন। সেসময় তিনি নিজেকে আল বদর বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। পাকিস্তানিরা তো আর বুদ্বিজীবীদের চিনতো না, এরাই চিনিয়েছে। বাবার হত্যাকারী সেই খুনি মান্নানকে জিয়াউর রহমান ডেকে নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বানান। গাড়িতে স্বাধীন দেশের পতাকা তুলে দেন। এরশাদ পূর্ণ মন্ত্রী বানান। এই হলো তার পুরস্কার। সে তো মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতো, তেমন উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলো না।’
ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী একাত্তরে খুলনার খালিশপুর এলাকায় মুন্সিবাড়িতে বসবাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে তিনি ছিলেন খুলনার ক্রিসেন্ট জুটমিলের টেলিফোন অপারেটর। যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিনের মাথায় ফিদাহ নামে এক সহকর্মী ফেরদৌসীকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়। হানাদার বাহিনী তাকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হতে থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুটমিলে আগের চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু সহকর্মীরা তাঁকে কটূক্তি করতেন। এ কারণে চাকরি ছেড়ে দেন আমার মা। পরে ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। তিনিই বাংলাদেশের আত্মস্বীকৃত প্রথম বীরাঙ্গনা। তার কারণেই মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীরা এখন কথা বলার ভাষা ও সাহস ফিরে পেয়েছে।’
‘যুক্তরাজ্য যে সমস্ত যুদ্ধাপরাধীরা বিলাসী জীবন যাপন করছেন তাদেরকে যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট বাতিল করলে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য এবং তাদের বিচার করা সম্ভব’ মন্তব্য করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। প্রেস বিজ্ঞপ্তি