মুহাম্মদ সালেহ আহমদ :
বিয়ে সবার জীবনেরই গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। বিয়েতে কে কত খরচ করবেন, কত মানুষকে আমন্ত্রণ জানাবেন, ওয়েডিং ডেস্টিনেশন কোথায় হবে, বর-কনের বিয়ের পোশাক, গয়না, মুখোরোচক সব খাবার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বছরখানেক আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়।
সামর্থ্য থাকলে বিয়েতে সবাই হাত খুলেই খরচ করেন। তবে কম খরচে বিয়ে করলেই নাকি তা টেকে বেশিদিন। এমনটিই মত গবেষকদের।
এমরি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা বিয়ের খরচের সঙ্গে বিয়ে স্থায়িত্বের সময়কালের মধ্যে যোগসূত্রতা পর্যবেক্ষণ করেন।
তাদের মতে, যে দম্পতিরা বিয়েতে কম খরচ করেন, অন্যদের চেয়ে তাদের একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ‘অর্থ, বিবাহ ও যোগাযোগ’ শীর্ষক এই গবেষণায় দেখা যায়, জাকজমকভাবে বিয়ে সারতে অনেকেই সাধ্যের বেশি খরচ করেন।
এজন্য অনেকেই ঋণ নেন। যা শোধ করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ে সংসারে চাপ পড়ে। বিয়ের পর ওই ঋণ পরিষোধ করতে গিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। কারণ নতুন সংসারে অনেক খরচ হয়। ফলে বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মনোমালিন্য দেখা দেয়।
অবশেষে আর্থিক সমস্যার কারণে বিচ্ছেদের দিকেও ঝোঁকেন অনেক দম্পতি। তাই বিয়েতে অল্প খরচ হলে আর ঋণ নিতে হয় না। এতে সংসারেও পরবর্তী সময়ে চাপ পড়ে না। তাই বিয়েতে অতিরিক্ত খরচ না করে বরং সামর্থ্য থাকলে ওই অর্থ ব্যয় করতে পারেন হানিমুনের জন্য।
এক সমীক্ষার ৬৩ শতাংশ উত্তরদাতার দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিয়েতে বেশি খরচের চেয়ে পছন্দের গন্তব্যে হানিমুনে যাওয়া দম্পতির মধ্যে বোঝাপোড়া ও ভালোবাসা আরও বাড়ায়।
বিয়ে জীবনের গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তার সঙ্গে মনের মিল হবে কি না কিংবা জীবনসঙ্গী হিসেবে তিনি পারফেক্ট কি না এসব বিষয় মাথায় রেখেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের জীবনে পরিবর্তন আসে।
বিয়ের পর সংসারের চাপ, দায়িত্বশীলতা, সঙ্গীর প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি সন্তান লালন পালনসহ একাধিক বিষয় দেখভাল করতে হয়। সব মিলিয়ে বিয়ের পরের জীবন রোমাঞ্চকর, ঠিক তেমনই হতে পারে চাপের। তাই বিয়ের আগে মানসিকভাবে নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রস্তুত থাকা উচিত।
বিয়ের আগ থেকেই দুই পরিবারসহ বর-কনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিয়ের স্থান , পোশাক, মেকআপ, রূপচর্চা, কেনাকাটা, ক্যাটারিং, হানিমুনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে।
তবে বিয়ের পর আপনার জীবনে কী কী পরিবর্তন আসতে চলেছে সে বিষয়ে আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। এক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া। জেনে নিন কীভাবে-
নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া :
বিয়ের পর সংসারে শান্তি বজায় রাখতে অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে দূরে থাকুন। আমি থেকে আমরার পরিণত হোন।
আদর্শ দম্পতির কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
বিয়ে নিয়ে আপনার মনে যদি নানা ধরনের নেতিবাচক বিষয় থাকে, তাহলে কাউন্সিলরের পরামর্শ নিন এবং উভয়ে কাউন্সিলিং করুন।
আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা-
বিয়ের আগে অথবা পরে দম্পতির উচিত দুজনের আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলে নেওয়া এবং সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে ঊভয়ে এক পথে চলা।
বিয়ের আগেই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলুন দুজনে।
রাগ করে কথা বলা একেবারে বন্দ করুন। ক্ষমা করা শিখুন।
ক্ষমা একটি সফল বিবাহের অন্যতম চাবিকাঠি।
বিবাহিত জীবনের পথ কখনো বন্ধুর হয় না।দীর্ঘ এ সংসার জীবনে পথ চলতে খোলা মনের ও নমনীয় হন।
বিয়ের পর জীবনসঙ্গীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা স্বভাবিক। তবে আপনাদের সম্পর্ক যতেই ঘনিষ্ঠ হোক না কেন নিজেদের লিমিট নির্ধারণ করুন। অনেক দাম্পত্যে অশান্তি বাড়ায় সঙ্গীর চলাফেরা, কথাবর্তা, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা।
বিবাহিত জীবনে সুখী হকে জীবনসঙ্গীকে সেরা বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করুন। শুধু প্রেমিক বা গৃহকর্তা হিসেবেই নয়, বরং তার সঙ্গে যাতে সব বিষয় শেয়ার করতে পারেন এজন্য তাকে বন্ধু ভাবুন। সংসারে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে শিখুন।
সব বিষয়েই খুশি থাকুন, তাহলে দেখবেন সংসারে শান্তি থাকবে।
সূত্র: ব্রাইট সাইড/রামসি সল্যুশন,
ওয়েডিং ওয়্যার/ব্রাইডস্টোরি