জগন্নাথপুর টাইমসরবিবার , ৪ জুন ২০২৩, ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশে চায়ের ইতিকথা ও দেশে দেশে প্রচলন

Jagannathpur Times BD
জুন ৪, ২০২৩ ৯:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ডেস্ক রিপোর্ট

 

বাংলাদেশে চায়ের ইতিকথা :

বঙ্গ প্রদেশে কালো চায়ের চাষ ব্রিটিশ শাসনামলের সময় শুরু হয়েছিল। ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা ১৮৪০ সালে এই উপমহাদেশের সর্বপ্রথম চা বাগান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করে, যখন কলকাতা বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে চীনা চায়ের গাছ এনে চট্টগ্রাম ক্লাবের পাশে রোপণ করা হয়।

এরআগে অবশ্য চীনের চা উৎপাদনের একচেটিয়া আধিপত্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ব্রিটিশরা প্রথম ১৮২৪ সালে ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চা ফসল চালু করে। এরপর থেকে এটি দার্জিলিং, নীলগিরি এবং আসামজুড়ে প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়।

বাংলাদেশে  বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা চাষ শুরু হয় ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। সিলেট অঞ্চলের সুরমা নদী উপত্যকা পূর্ব বাংলার চা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়। চা চাষ নিম্ন ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) এবং উত্তর বঙ্গের পঞ্চগড়েও শুরু হয়।

১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই ছিলেন চা বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান।                       তিনি সেসময় চা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত চা শিল্পের পুনর্বাসনে অসামান্য অবদান রাখেন তিনি।

এর প্রেক্ষিতে ৪ জুন জাতীয় চা দিবস পালনের উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। শুধু তাই নয়, দেশের অর্থকারী ফসলের মধ্যে চা অন্যতম। দেশে প্রতি বছর ৯ কোটি কেজির বেশি পরিমাণে চা উৎপাদন হয়। এর বেশিরভাগই বিক্রি হয় দেশীয় বাজারে। ২০২০ সালে ১৯টি দেশে চা রপ্তানি করে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আয় করেছে দেশ। চা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত পানীয়। কিছু মানুষের কাছে চা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশে চাষ হয় এবং খুব সহজলোভ্য হওয়ার পর থেকে ঘরে ঘরে চা পানের অভ্যাস তৈরি হয় । অতিথি এলে চা দেওয়া ছিল সেসময় আভিজাত্যের অংশ।

বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ধরনের দা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মটকা চা বা তন্দুরি চা। এই চা বানানো হয় টিন, সিমেন্টে বানানো ড্রামের মতো দেখতে বিশেষ চুলায়। আবার কোথাও কোথাও মাটির চুলাতে এই চা বানাতে দেখা যায়। এর মধ্যে কয়লার আগুনে পুড়ছে মাটির ছোট্ট মটকা। পাশেই স্টিলের কেটলিতে রাখা বাড়িতে বানানো বিশেষ মশলার দুধ চা। ক্রেতার ফরমাশ এলে তামার পাত্রে জ্বলন্ত মটকা রেখে তাতে চা ঢালা হয়। মটকার তাপে চা ফুটতে থাকে, বের হয় ধোঁয়াটে সুবাস। এভাবেই ভিন্ন স্বাদের মটকা চা বানাতে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

 

দেশে দেশে চায়ের প্রচলন :

পাড়ার চায়ের দোকান কিংবা ক্যাম্পাসের মামার টং দোকান থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁয় যেখানেই যান চায়ের কাপে ঝড় তোলেন নানা তর্কে বিতর্ক। ঘরের-বাইরের, রাজনৈতিক কিংবা আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা সমালোচনা সব কিছুই হয় চায়ের দোকান থেকে।

চা জড়িয়ে আছে বাঙালির প্রতিক্ষণে। সারাদিন নানান স্বাদের চায়ে তৃষ্ণা মেটান চা প্রেমীরা। দুধ, চিনি দিয়ে চা খান অনেকে।সকালে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু করেন অনেকে। এরপর কাজের ফাঁকে নিজেকে চাঙ্গা রাখতে এক-দুই কাপ রং অথবা দুধ চা খান। সন্ধ্যায় বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার।

বাঙালির প্রতিটিক্ষণ রঙিন করে যে চা তা কিছু আবিষ্কার হয়েছিল সুদূর চীনে। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারের সেই জনপ্রিয় পানীয় বাঙালির কাছে এলো কীভাবে। চীনে চায়ের ব্যবহার শুরু হয় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তবে তা পানীয় হিসেবে নয়, সেসময় চায়ের পাতা ব্যবহার হতো কেক তৈরিতে। সেটাও আবার মৃতদের জন্য।

মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে প্রাচীনকালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যেসব নৈবেদ্য দেওয়া হতো তার মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনো কেক দেখা যেতো। এইসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা পাতা যা কি না মৃতদের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হতো তাদের পারলৌকিক জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে।
চীনের প্রচলিত একটি পৌরাণিক গল্প মতে, ১৭ শতাব্দীতে সেখানে বাস করতেন শেন মং নামের এক কৃষক। ঘুরে বেড়িয়ে নতুন ফসল আবিষ্কার করা ছিল তার নেশা। তখন বর্তমান প্রচলিত খাদ্য শস্য যেমন- ধান, গম, যব ইত্যাদির প্রচলন ছিল না। শেন মং একদিন খাবার উপযোগী শস্য এবং লতাপাতা আবিষ্কারের জন্য বনে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। অপরিচিত কোনো শস্য বা লতাপাতা পেলে সেগুলো চেখে দেখছিলেন। যদিও সবগুলোই খাবার উপযোগী ছিল না। এভাবে সারাদিন বিভিন্ন ফসল আবিষ্কার অভিযানে নিজের অজান্তেই শরীরে ৭২ এরও বেশি প্রকারের বিষ প্রবেশ করিয়ে ফেলেন।

সন্ধ্যায় একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মং। বিষক্রিয়া দ্রুত তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। তারপর হঠাৎ কোথা থেকে যেন একটি অপরিচিত পাতা এসে মুখে পড়ল। অবচেতন মনে পাতাটি চিবুতে লাগলেন। এবং সেই ভেষজ পাতার গুণে শরীর থেকে বিষক্রিয়া বিদায় নিল, পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি।

চীনারা দাবি করে, সেই পাতাটি ছিল মূলত চা পাতা। আর এভাবেই হয় সর্বপ্রথম চা এর আবিষ্কার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চায়ের জনপ্রিয়তা পুরো চীনে ছড়িয়ে পড়ে। পানীয় হিসেবে চায়ের প্রস্তুত প্রণালীর ওপরও চলে দীর্ঘদিন গবেষণা। চা পাতাকে তাপ দিয়ে এক বিশেষ ধরনের কেক তৈরি করে, সেটিকে পাউডারের মত চূর্ণ করে গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে মো নামের এক ধরনের পানীয় তৈরির সংস্কৃতি চালু হয়। এমনকি গল্প ও কবিতার বিষয় হিসেবে চা স্থান পায়। চিত্রশিল্পীদের জন্য চা একটি শিল্পমাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। চায়ের উপর ফেনা তৈরি করে তারা অসাধারণ সব চিত্রকর্ম তৈরি করতেন।

এরপর খ্রিস্টীয় নবম শতকে এক জাপানী সন্ন্যাসী সর্বপ্রথম জাপানে চা গাছ নিয়ে আসেন। চায়ে জাপানীরা এতই মজে গিয়েছিল যে তারা নিজস্ব চা উৎসবের আয়োজন করে। চতুর্দশ শতাব্দীতে মিং রাজবংশের শাসনামলে চীনের সেরা তিন রপ্তানি পণ্য ছিল পোর্সেলিন, রেশম ও চা।

ষোড়শ শতকে ডাচরা প্রচুর পরিমানে চীন থেকে চা নিয়ে আসে ইউরোপের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। পৃথিবীব্যাপী চায়ের ব্যাপক বিস্তৃতির জন্য অনেকেই একজন পর্তুগিজ নারীকে কৃতিত্ব দেন, তিনি রানি ক্যাথেরিন অব ব্রাগানজা। রানি ক্যাথেরিন ছিলেন চায়ের অসম্ভব ভক্ত। ১৬৬১ সালে তার সঙ্গে ব্রিটেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের বিয়ে হয়। ব্রিটিশ রাজপরিবারে চায়ের প্রবেশ ঘটে।

 

এরপর বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশরা বিশাল উপনিবেশ সৃষ্টি করার পাশাপাশি সেসব স্থানে চায়ের প্রচলনও ঘটায়। ব্রিটিশরা প্রথমে রুপার বিনিময়ে চীন থেকে চা নিয়ে আসতো। কিন্তু পরবর্তীতে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে তারা আফিম ব্যবহার শুরু করে। এই বিষয়টি চীনে সমস্যা সৃষ্টি করে, কারণ প্রচুর মানুষ আফিমে আসক্ত হয়ে পড়ে তখন। এজন্য ১৮৩৯ সালের দিকে এক চীনা কর্মকর্তার নির্দেশে আফিম ভর্তি সকল ব্রিটিশ জাহাজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ঘটনা থেকেই মূলত ইতিহাসখ্যাত আফিম যুদ্ধের সূত্রপাত! চিং রাজবংশের সময় এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।