নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :
দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোই এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
মঙ্গলবার (২০ জুন ২০২৩) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। রাজধানীর শেরে বাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন,স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।
মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজারে একটা না একটা পণ্যের দর বেড়েই যায়। কোনো কারণে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেলে সেটা ছিল ভিন্ন কথা। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ায় দর কমেছে। বাজারে নতুন করে চিনি এবং ডিমের দর বেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে এই দুই পণ্য সরাসরি আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে কিনা–সাংবাদিকদের এরকম এক প্রশ্নের জবাবে ওই মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তবে বিষয়টি তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে নয়। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সরকারের পক্ষে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। মূল্যস্ফীতি কমে আসবে এ রকম আশার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি জুন মাসের হিসাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে পারে। কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই কথাটা বললাম। কারণ, না কমলে পরে সমালোচনা হয়।’ কেন মূল্যস্ফীতি কমতে পারে সে ব্যাখ্যা মন্ত্রী বলেন, বাজারে চালের দাম বাড়ছে না। কোনো কোনো মোকামে বরং কমছে।
প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কৃষিতে সেচ সম্পূর্ণ সৌর বিদ্যুতের আওতায় আনতে হবে। সেচ কাজে বিদ্যুতের প্রয়োজনে বছরে ৮১ লাখ লিটার ডিজেল ব্যবহার হয়।সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে এ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক মওকুফসহ সব ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্যানেল স্থাপনে জমির অপচয় রোধে উঁচু জায়গায় প্যানেল স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছন প্রধানমন্ত্রী যাতে নীচে কৃষি কাজ এবং মাছ চাষে কোন অসুবিধা না হয়।
বিদেশি ঋণের প্রবাহ বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি ঋণের ব্যবহার এখনএ কম। পাইপলাইনে থাকা অর্থের ব্যবহার বাড়াতে হবে। যাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে। ঋণ, অনুদান সব ধরনের বিদেশি সহায়তা বাড়াতে অর্থমন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ–ইআরডি এবং অর্থসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ঘি খাওয়ার জন্য সরকার ঋণ নিচ্ছে না। বরং অর্থনীতির জন্য সহায়ক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ নিচ্ছে সরকার–যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। মন্ত্রী বলেন, বাজেট সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক–এডিবি, জাইকাসহ সব উন্নয়ন সহযোগীরা বসে আছে। দেশের জন্য যা কল্যাণকর সে বিবেচনায় সরকার ঋণ নিয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিদেশি ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশের মতো। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যাংক খাত থেকে ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশের বেশি। এ কারণে বিদেশি ঋণ সব সময়ই দেশের পক্ষে লাভজনক। এ সময় শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব আবদুল বাকী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে পাইপ লাইনে আরও ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে। এর আগে পাইপ লাইনে জমার পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন ডলার।
একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, বজ্রপাতে মৃত্যু রোধে খোলা যায়গায় বিশেষ করে হাওরে ছাউনি নির্মাণ এবং সরকারি অফিস ভবন নির্মাণে ভুমির ব্যবহার কমানো। বৈঠকে ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২৪ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে ১২ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ প্রায় ১১ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা এবং ১৬ কোটি টাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নিজস্ব যোগান।