মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান :
সম্প্রতি একজন প্রচারবিমূখ নিভৃতচারী সফল মানুষ সৈয়দ সামাদ আলী বৃটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস কতৃক এমবিই খেতাব ও পদকপ্রাপ্ত হয়ে পুরষ্কার ও সম্মাননা পদক গ্রহণ করেছেন।
বৃটেনে বাঙালিদের এগিয়ে যাওয়ার গৌরবগাঁথা ও এর ইতিহাস দীর্ঘদিন থেকে অত্যন্ত সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের সাথে বৃটেনে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবউজ্জল ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে।
পোশাক কারখানা, ফুড ইন্ডাষ্ট্রি, ক্যাটারিং থেকে শুরু করে বৃটেনের প্রতিটি সেক্টরে প্রবাসী বাঙালিদের অবদান এবং অবস্থান আজ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। বাঙালিরা এখন বহু দূর এগিয়ে চলেছে মাথা উঁচু করে।
বৃটেনের মূলধারার রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে পার্লামেন্টে ব্রিটিশ বাঙালি বাংলাদেশী প্রতিনিধিত্বকারীর অবস্থান আমাদের গৌরবান্বিত করেছে।বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সগৌরবে কর্মরত আছেন এ প্রজন্মের বাংলাদেশী বাঙালি । শুধু তাই নয় – শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, সাংবাদিকতা, আইনপেশা, বিভিন্ন গবেষণাধর্মী ও সমাজসেবামূলক অবদানের জন্য আমাদের অগ্রজরা ইতিমধ্যে অনেকেই বিভিন্ন জাতীয় সম্মাননা ও এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন সেই ইতিহাস ও অর্জনের গৌরবগাঁথা আমরা প্রায় অনেকেই জানি এবং আমাদের সেই সব কীর্তিমান মানুষদের গৌরবের ইতিহাস আমাদের গৌরবান্বিত করেছে।
আজকে একজন একজন প্রচারবিমূখ মানুষের কথা তুলে ধরছি। প্রথমেই জগন্নাথপুর টাইমস পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর এ খেতাব প্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানাই। আমরা এরকম প্রাপ্তিতে গর্ববোধ করি।
সৈয়দ সামাদ আলী যিনি ২০২২ সালের শেষের দিকে “এমবিই” খেতাবে ভূষিত হয়েছেন এবং ২০২৩ সালের সূচনালগ্নে বাঙালি কমিউনিটির জন্য এক অনন্য গৌরব ও মর্যাদায় আসীন হয়ে নতুন বৎসরের আনন্দের মাত্রাকে আরো গতিশীল, আরো আনন্দঘন করেছেন তিনি। তাঁর এই অর্জন বিলেতে বাঙালিরা গর্ববোধ করে ।
যিনি বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়ে এবং কিছুদিন জগন্নাথপুরের সৈয়দপুর আদর্শ কলেজে অধ্যাপনা করে বৃটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এসেছিলেন।
তিনি ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের হাড়ীকোনা নিবাসী সৈয়দ শামসুল আলীর বড় ছেলে “সৈয়দ সামাদ আলী”।
তিন সন্তানের জনক সৈয়দ সামাদ আলীর দাদা সৈয়দ ইউসুফ আলী পন্চাশের দশকের শুরুতে বৃটেনে পাড়ি জমান।
তার এক ছেলে কয়েকবছর বৃটেনে বসবাসের পর দেশে ফিরে যান এবং অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে দেশেই অবস্থান করেন।
সৈয়দ সামাদ আলীর বড় মামা মনির উদ্দিন আহমদ টাওয়ার হ্যামলেটস এর মেয়র ছিলেন।
সৈয়দ সামাদ আলী বৃটেনে আসার পূর্বে ক্রীড়ামোদী ও শিক্ষানুরাগী হিসাবে দক্ষতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।
এমসি কলেজ থেকে আই এ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (তৎকালীন) থেকে অনার্স ও মাষ্টারস ডিগ্রী শেষ করে সিলেটের একটি বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন।
তিনি ঐতিহ্যবাহী সৈয়দ পুর সাধারণ পাঠাগারের উপ-পরিচালক গ্রন্থ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ক্রীড়ামোদী হিসাবে পরিচিতি ও দক্ষতার জন্য তিনি তৎকালীন এমসি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে “আলী- তাহমীম” পরিষদে ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। (আলী ভাই ভিপি পদে > বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সৈয়দ তাহমীমুল হক সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট সৈয়দপুরের কৃতি সন্তান জিএস পদে নির্বাচন করেন)।
সৈয়দ সামাদ আলী নিম্নোক্ত মূল বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য উক্ত সম্মাননা অর্জন করেন।
প্রথমতঃ বৃটেনে বৃটিশ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদেরকে বাংলা শেখানোর জন্য তার লিখিত জিসিএসই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি মূল্যবান পুস্তক বা গাইডে পরিনত হয়েছে।
একারণে বৃটেনের বিখ্যাত ডারহাম ইউনিভার্সিটিও উক্ত বইটিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
শুধু বৃটিশ বাঙালি শিক্ষার্থী নয় বরং তাদের অভিভাবক এবং পিতামাতাকে বাংলা শিক্ষার তাৎপর্য সহজভাবে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছেন সেই সাথে বাংলা শিক্ষার কার্যক্রমকে সকলের জন্য সহজলভ্য করেছেন।
তিনি তার উক্ত গবেষণাধর্মী বাংলা বইয়ের জন্য ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত নর্থ ইস্ট ফেস্টিভাল অব ল্যান্গুয়েজ এ আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেন।
বর্তমানে তিনি টর্নহিল ও সাউথমোরr উভয় প্রতিষ্ঠানে বাংলার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সৈয়দ সামাদ আলীর এ অর্জন সফলতায় আমরা আনন্দিত, গর্বিত। শুভকামনা ও অভিন্দন জগন্নাথপুর টাইমস পরিবারের পক্ষ থেকে।
লেখক :
অধ্যাপক মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান
এক্টিং এডিটর-
জগন্নাথপুর টাইমস।
www.jagannathpurtimes.co.uk