জগন্নাথপুর টাইমসবুধবার , ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্রামবাংলার আশাবাদী রূপান্তরের এক নিরলস কারিগর শাইখ সিরাজ

Jagannathpur Times BD
সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩ ৯:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গ্রামবাংলার আশাবাদী রূপান্তরের এক নিরলস কারিগর শাইখ সিরাজ

ড. আতিউর রহমান  ::

আমাদের চারপাশে কোলাহলে ভরা হতাশাজনক পরিবেশেও এমন অনেক মানুষের দেখা পাই, যাদের কথা ও কর্ম আমাদের সহসাই উজ্জীবিত করে, নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা মেলে। তারা উদ্ভাবনের কথা বলেন, শত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আশার কথা বলেন, সামনের দিকে এগিয়ে চলার কথা বলেন। এমন একজন পরিবর্তনের কথকের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। সেই কবে থেকে দেখছি কৃষি ও কৃষকের বদলে যাওয়া জীবন-জীবিকার নিবেদিত এক পালাকারকে শহরে বাস করেও তিনি গ্রামবাংলার নিত্যসারথি; বলেই চলেছেন ‘মাটি ও মানুষের গল্প’। প্রথম দেখা বাংলাদেশ টেলিভিশনে। আমরা দুজনেই তখন বয়সে তরুণ। প্রযুক্তির ব্যবহারে কী করে গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে দেওয়া যায়, সর্বক্ষণ সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন শাইখ সিরাজ। কত জায়গায় গিয়েছি একসঙ্গে গ্রামের আধুনিক কৃষির অভিযাত্রা দেখতে। তিনি কৃষককে শুধু উৎপাদক হিসেবে দেখেন না, দেখেন গ্রামীণ সমাজ ও সংস্কৃতির প্রধানতম ধারক-বাহক হিসেবে।

কৃষকরাও মানুষ। তাদেরও দুঃখ আছে; আছে আনন্দ। তাই তো তিনি তাদের ঈদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পান তাদের নৌকাবাইচ, হাডুডু খেলা কিংবা লাঠিখেলায়। দেশে ও বিদেশে তার সব কর্মের কেন্দ্রে থাকেন কৃষক। দেশ ছেড়ে বিদেশেও কীভাবে বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর ঘটাচ্ছেন, প্রবাসীদের সেই গল্প তার মুখ থেকেই শুনে থাকি। তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরে এসে বিরাট সব কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন- সেই সুখবরও পাই শাইখের মুখ থেকেই। সে এক অভাবনীয় কর্মযজ্ঞ। অফুরন্ত উদ্যাম ও প্রাণশক্তির বিস্ফোরণ ঘটে তার তৈরি ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এর প্রতিটি পর্বে। আমিও কৃষকদের দেখে থাকি সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে। তাদের সন্তানরাই মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। তারাই এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে প্রথম সারির যোদ্ধা। তাদের সন্তানরাই রপ্তানি ও প্রবাস আয় দিয়ে বাংলাদেশের বহির্অর্থনীতিকে এতটা চাঙ্গা রেখেছেন। এ করোনাকালে তারাই আমাদের অর্থনীতির প্রধান রক্ষাকবচ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। আর এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের কৃষক ও কৃষক সন্তানরা যন্ত্রকে গ্রহণ করেছেন বলে। আধুনিকায়নের ছোঁয়া যে লেগেছে গ্রামবাংলায়, সে গল্প তো আমরা নিরন্তর শাইখ সিরাজের মুখেই শুনে আসছি। সম্ভাবনাময় ও সমস্যাসংকুল গ্রামবাংলার এই বদলে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে দারুণ সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরেছেন ‘শাইখ সিরাজ’। বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান দিয়ে তার যাত্রা শুরু। শুরুতে তিনি যে আগ্রহ, নিষ্ঠা ও উদ্যম নিয়ে অনুষ্ঠানটির সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে দিয়েছিলেনÑ পরবর্তী সময়েও এই ধারা অব্যাহত রেখেছেন। প্রাইভেট টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এর তিনি মাত্র একজন উদ্যোক্তা পরিচালক নন, এই চ্যানেলের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ নামের অনুষ্ঠানে গ্রামবাংলার কৃষিভিত্তিক নানা উদ্যোগ এবং স”জনশীলতাকে সক্রিয় মদদ দিয়ে চলেছেন। শুধু গ্রামবাংলা কেন, শহরের নারী উদ্যোক্তাদের ‘ছাদকৃষি’ আন্দোলনের কথাও সমানতালে উঠে আসছে তার অনুষ্ঠানে। নিশ্চয় তিনি বাংলাদেশের মূল শক্তিটি কোথায়, তা ধরতে পেরেছেন। গার্মেন্টের পর কৃষিই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্চে, সে সম্ভাবনার সূত্রটি শাইখ ঠিকই ধরতে পেরেছেন। একই সঙ্গে দেশের ভেতরের সবচেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষমতা এ খাতেরই রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। কৃষিতে পাশের দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম কী করছেÑ তাও আমাদের জানতে সাহায্য করছেন শাইখ। তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে বীজ বপনের জন্য ‘ড্রাম সিডার’ ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করেছেন এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জনমত গড়ে তুলেছেন; লিফ কালার চার্ট ব্যবহার করে জমিতে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কী করে কমানো যায়, সে বিষয়ে জনমত গড়ে তুলেছেন।

শুধু বিদেশের সাফল্য কেন, দেশের ভেতরেও যেসব প্রযুক্তিগত সাফল্য দেখা যাচ্ছে- সেগুলোর কথাও তিনি তার অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছেন। যেমনÑ হরি ধানের উদ্ভাবনে এ দেশের সফল উদ্যোক্তা হরিবাবুকে শুধু টেলিভিশনের পর্দায় তুলে আনেননি, তাকে পুরস্কৃত করারও উদ্যোগ নিয়েছেন। এ দেশের সাধারণ মানুষ যেন কৃষি ও কৃষককে ভালোবাসে- সে জন্য রচনা প্রতিযোগিতা, কৃষকের বিশ্বকাপ নামের অনুষ্ঠানসহ নানা মাত্রার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। নীতিনির্ধারকদের মনবদলের নানামুখী তৎপরতাও শাইখের কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে দেখতে পাই। ‘কৃষকের বাজেট’ নামের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আমি একাধিক গ্রামে গিয়েছি তার সঙ্গে। এসব জনবাদ্ধব অনুষ্ঠান থেকে পাওয়া বাজেট প্রস্তাবনাগুলো অর্থমন্ত্রীকে বাজেট প্রণয়নের সুবিধার্থে আগেভাগেই দিয়ে দেন। এভাবে বাজেটকে কৃষিবান্ধব করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেন শাইখ সিরাজ। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে কতটা কৃষি এবং কৃষকবান্ধব, তা আমাদের মধ্যে কেউ কেউ জানতাম। কিন্তু শাইখ সিরাজ একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণভবনে তার কৃষিচর্চার এক অনবদ্য বিবরণ তুলে ধরেছেন। দেশে-বিদেশে এ অনুষ্ঠানটি আনেকেই গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখেছেন। শাইখের বয়স বাড়ছে। কিন্তু ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’-এর টানে তিনি সর্বক্ষণ গ্রামবাংলা চষে বেড়াচ্ছেন। এমন নিবেদিতপ্রাণ একজন মানুষের জন্য আমরা এ দেশে ঘরে ঘরে গাছ লাগানো, ছাদে বাগান করা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্য ও হাঁস-মুরগির খামার গড়ে ওঠার আন্দোলন প্রত্যক্ষ করছি। তার অনুপ্রেরণায় বিদেশ থেকে অনেক প্রযুক্তিপ্রেমী শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা দেশে ফিরে মাল্টা, ড্রাগন ফলের চাষ করছেন, বিদেশি ও দেশি ফুলের বাগান করছেন, অল্প জায়গায় শিল্প-কারখানার ভেতরেও দেশি মাছের আধুনিক চাষ করছেন।

নানা সংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষের মনকে বদলে দিতে পারলে, মানুষকে আরেকটু আশাবাদী ও উদ্যোগী করা গেলে দেশে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে বাধ্য- তার প্রমাণ শাইখ নিরন্তর রেখে যান। এই অকান্ত কর্মবীরকে সরকার স্বাধীনতা পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছে। ম্যানিলাভিত্তিক গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন। আরও অসংখ্য পুরস্কারে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। আজকাল একটি দৈনিকে উদ্ভাবনীমূলক এবং আধুনিক কৃষি ও কৃষকের সাফল্য নিয়ে প্রায়ই লিখছেন। ফলে আমরা নয়াকৃষির অনেক অজানা তথ্য পাচ্ছি। শাইখ সিরাজের কাছে অনুরোধ, লেখালেখির কাজটি ছাড়বেন না। তরুণ প্রজন্মের জন্য এসব লেখা খুবই প্রয়োজনীয় বলে আমার ধারণা।

আমার গভীরতম প্রত্যাশা- দীর্ঘদিন ধরে তিনি সক্রিয় থাকুন। বাংলাদেশ তথা গ্রামবাংলার দিনবদলের এই পালাকার আরও বহুদিন আমাদের এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিত্যসারথি হয়ে থাকুন। নিরন্তর জীবনকে উপভোগ করুন, আজীবন আশাবাদী সমাজ গড়ার কাজে লেগে থাকুন।

ড. আতিউর রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।