মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান :
‘শেখ রাসেল দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডন বুধবার বাঙ্গালি-অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনে এক বিশেষ স্মারক অনুষ্ঠানে আয়োজন করে। এবছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক, নির্মল দুর্জয়’। স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড গওহর রিজভী।
তিনি তাঁর বক্তব্যে “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে শিশু শেখ রাসেলের জীবনের বিভিন্ন ঘটনার প্রাণস্পর্শী বর্ণনা দিয়ে বলেন, “শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষ আজ আরেকজন দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব লাভ করতো।
তিনি আরো বলেন, “শেখ রাসেলের স্মৃতি ধারণ করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এই স্মারক অনুষ্ঠানের সভাপতি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বঙ্গবন্ধু ও শহীদ শেখ রাসেলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “দশ বছর বয়সী শেখ রাসেলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড জাতিসংঘের শিশু অধিকার কনভেনশনসহ সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
হাইকমিশনার ফিনিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিপীড়িত শিশুদের প্রতি সহমর্মিতা এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিহত শিশুদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে নিরীহ শিশুদের নির্যাতন ও হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানান। তিনি ব্রিটিশ-বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে বিশ্বব্যাপী শিশু-কিশোর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দেন।
শিশু রাসেলের জীবন বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের কাছে তুলে ধরতে ২০২২ সাল থেকে প্রতি বছর তাঁর জন্মদিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণার ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি পালন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শেখ রাসেল হত্যার মতো পরিকল্পিত শিশু হত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
এপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি কার্যকর আইনি কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, “এসব আইন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শিশুদের বাঁচার অধিকার সুনিশ্চিত করাসহ বর্বরতা, অপব্যবহার ও বৈষম্য থেকে তাদের সুরক্ষা করছে।”
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হাসান এমবিই এবং শেখ রাসেল মেমোরিয়েল এসোসিয়েশন, ইউকে-র প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট আবদুল আহাদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনার আগত অতিথি এবং হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শেখ রাসেল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সকল সদস্যদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলের জীবনের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। শেখ রাসেলকে উৎসর্গ করে বাংলাদেশের বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপক ও সঙ্গীত শিল্পী নবনীতা চৌধুরী, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী হাসান তারিক, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি বিশিষ্ট শিল্পী গৌরী চৌধুরী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশী নৃত্য শিল্পী সৌমি চৌধুরী ও তার দল এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ও হাই কমিশন পরিবারের শিশু-কিশোররা একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
—