আব্দুল মোমিত রোমেল, ফ্রান্স থেকে :
ফ্রান্সের সিভিল সার্ভিসে প্রশাসনিক ক্যাডার অফিসার বিভাগে চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কন্যা দিয়ান আশরাফ। ১৯শে ফেব্রুয়ারি প্যারিসের স্থানীয় একটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে দিয়ান আশরাফ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নৈশভোজে অংশ নেন।
দিয়ান আশরাফের পরিবার জানায়, মেধার চূড়ান্ত সাফল্য দেখিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দিয়ান আশরাফ উত্তীর্ণ হয়েছে। দিয়ানের বাবা আশরাফ ইসলাম বলেন, এটিই সম্ভবতঃ প্রথম ঘটনা যে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো সন্তান ফরাসী প্রশাসন বিভাগে চাকরি পেলো।
দিয়ান ইতিমধ্যে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তরুণ শিক্ষানবীশ অফিসার হিসেবে চাকরি করছেন। ২০১৭ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে বাক পাস করেন। এরপর ফ্রান্সের বিশ্ববিখ্যাত Université Paris 1 Panthéon-Sorbonne থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স-১, এরপর université paris saclay থেকে মাস্টার্স-২ পাস করেন। ফ্রান্সের মূলধারায় বাংলাদেশি বংশোভূত ফ্রান্কো-বাংলাদেশিদের সাফল্যের অগ্রযাত্রা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এখানে এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী অর্থাৎ সকলক্ষেত্রেই বাংলাদেশি অরিজিন সন্তানরা মেধা এবং শ্রম দিয়ে জায়গা করে নিচ্ছে। ফ্রান্সের মূলধারায় এখন তাদের দাপুটে উপস্থিতির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বলতর করে তুলছে।
দিয়ান সম্প্রতি ফ্রান্সের মর্যাদাপূর্ণ Accès aux instituts régionaux d’administration – (IRA) পরীক্ষায় উত্তীৰ্ণ হয়েছেন। বাংলাদেশে যেমন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সবচেয়ে মেধাবী -চৌকষ শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের গুরত্বপূর্ণ জায়গায় অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ঠিক তেমনি ফ্রান্সে Accès aux instituts régionaux d’administration – (IRA) পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়ে থাকে। দিয়ান ফরাসি সরকারের অধীনে Regional Institutes of Administration Lyon-এ বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে ‘administrative attachés’ অফিসার হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু করবে। উল্লেখ্য যে, ফ্রান্সে ৫টি Regional Institutes of Administration (IRA) রয়েছে- (১) Bastia, (২) Lille, (৩) Lyon, (৪) Metz (৫) Nantes।
দিয়ান আশরাফ মানবজমিনকে বলেন, তার এই সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান তার মায়ের। কারণ তিনি তার মাকে একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নারী হিসেবে স্ট্রাগল করতে দেখেছেন সেটাই তাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে আজকের এই জায়গায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। তিনি বলেন, একজন প্রবাসী দম্পতির সন্তান হিসেবে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি নেয়াটা সত্যিই আমার জন্য গর্বের। আমি বাংলাদেশি সত্তাকে কখনো ভুলতে পারবো না ।
প্যারিসে দীর্ঘদিন বসবাসরত রাজনীতিক ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশি আশরাফুল ইসলাম এবং প্যারিসের বিখ্যাত হাসপাতাল University Hospitals Pitié Salpêtrière কর্মরত হাবীবা জেসমীন এর সন্তান দিয়ান। জেসমিন বলেন, একটি সন্তানকে নিয়ে সবাই স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সবাই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সন্তানের পিছনে কাজ করে না।
কিন্তু আমি শেষদিন পর্যন্ত আমার সন্তানের এই সাফল্যের জন্য অনবরত আমার চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। প্রবাস জীবনে অনেক কষ্ট আমাকে সহ্য করতে হয়েছে, কিন্তু সন্তানের পেছনে শ্রম দিলে তা কখনো ব্যর্থ হয় না । এটাই আমার সন্তান প্রমাণ করেছে।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা ফ্রান্সে বাংলাদেশি মালিকানাধীন সর্ববৃহৎ সোশ্যাল অ্যান্ড প্রফেশনাল সেন্টার অফিওরাতে সার্ভিস দিয়েছেন এক সময় দিয়ান আশরাফ। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ) এর টিম মেম্বার হিসেবে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ শহরে অবস্থিত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ইভেন্ট EYE 2018-এ অংশ নিয়েছিলেন। শিক্ষাজীবনে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তিনবার তাকে মেধাবী শিক্ষার্থীর পদক দেয়া হয় সামাজিক সংগঠন বিসিএফ থেকে। বিসিএফ-এর প্রেসিডেন্ট এমডি নুর বলেন, দিয়ান আশরাফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন ফরাসি নাগরিক, তার এ সাফল্য অন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুপ্রেরণা দেবে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে।