শামীম আহমদ, সুনামগঞ্জ থেকে :
৬ ডিসেম্বর ছাতক মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে ছাতক শহর শত্রুমুক্ত
হয়। মুক্তিবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে ওই দিন পাক—হানাদার বাহিনী
পিছু হটে ছাতক ছাড়তে বাধ্য হলে ছাতক হানাদার মুক্ত হয়।। মুক্তিযোদ্ধাদের
দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার কাছে পরাস্থ হয়ে পাক—হানাদার বাহিনী পিছু হটে
ঝাওয়া ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় চলে গেলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ছাতক
শহরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছাতকের সিমেন্ট কারখানা,
নোয়ারাই ও জয়নগর এলাকা ছিল পাকসেনাদের দখলে। ১৯৭১ সালে নভেম্বরের
প্রথমদিকে নোয়ারাই এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়
মুক্তিযোদ্ধাসহ যৌথ বাহিনীর।
যৌথবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে
পিছু হটে পাকসেনারা। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে নোয়ারাই
এলাকা। তবে বেশী সময় নোয়ারাই এলাকায় অবস্থান করতে পারেনি
মুক্তিযোদ্ধারা। রণ কৌশলগত কারণে তখন মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হঠে। এ সময়
পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধে নোয়ারাই গ্রামের অন্তত ৩০ জন
মানুষ হতাহত হন।
মুক্তিযুদ্ধের ৫নং (বাঁশতলা) সেক্টর হেডকোয়ার্টারের নেতৃত্বে পরিচালিত
যুদ্ধে ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই বিজয়ের সু—বাতাস বইতে শুরু করে। ৫
ডিসেম্বর ছাতকের সুরমা নদীর উত্তর পার নোয়ারাই ও জয়নগর এলাকায়
মুক্তিযোদ্ধারা শক্তিশালী অবস্থান নেয়।
এ সময় পাক—হানাদার বাহিনীর অবস্থান
ছিল নোয়ারাই ও ছাতক সিমেন্ট কারখানা এলাকায়। বিনা প্রতিরোধে ৬
ডিসেম্বর রাত এগারো টার দিকে ছাতক শহর ছেড়ে ঝাওয়া এলাকায় অবস্থান
নেয় হানাদার বাহিনী। ছাতক—সিলেট সড়কের ঝাওয়া ব্রীজ এলাকায় অবস্থান
নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় পাক—বাহিনী। পরে
জাউয়া ব্রীজ থেকে গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় অন্যান্য পিছু হটা হানাদার
বাহিনীর সাথে যোগ দেয় তারা। ওই দিন বিকেলে মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে
ভারতীয় মিত্র বাহিনী ছাতক সিমেন্ট কারখানার সুরমা নদীর পারে অবস্থান নেয়।
হানাদার মুক্ত হয় ছাতক। প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর ছাতক মুক্ত দিবস
আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে ছাতক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। আজ
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে ছাতক মুক্ত দিবস উপলক্ষে আনন্দ র্যালী,
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।