আহমাদুল কবির, নিজস্ব প্রতিবেদক, মালয়েশিয়া :
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর। আর মাত্র ১৯ দিন সময় হাতে রয়েছে। এর মধ্যেই বৈধতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
দেশটির সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে বলা হয়েছে, যারা অবৈধ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছেন এবং নথিভুক্ত নিশ্চিত করতে প্রোগ্রামের সঙ্গে নিবন্ধন করার জন্য এগিয়ে আসবেন সেসব নিয়োগকর্তাদের জন্য ওয়ার্কফোর্স রিক্যালিব্রেশন (আরটিকে ২.০) কর্মসূচি একটি সুযোগ। সরকারও চায় নিয়োগকর্তারা এ বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে দেখুক। কারণ অবৈধ শ্রমিক দেশে থাকলে সমস্যা তৈরি হবে।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আরটিকে ২.০, কর্মসূচির মাধ্যমে বৈধ হতে আবেদন করেছেন সাত লাখেরও বেশি অনথিভুক্ত অভিবাসী। করোনা পরবর্তী সময়ে দেশটির পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে জনবলের চাহিদা পূরণে সরকারের দেওয়া ওয়ার্কফোর্স রিক্যালিব্রেশন (আরটিকে ২.০) কর্মসূচির অধীনে বৈধ হতে নাম নিবন্ধন করেছেন তারা। ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাসিক অধিবেশন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মালয়েশীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন।
মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে রিক্যালিব্রেশন আরটিকে ২.০ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এটি শেষ হবে চলতি মাসের ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্যেই নিয়োগকর্তাদের বিদেশি কর্মীদের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
যারা নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন, তাদের নিয়োগকর্তাদের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে কর্মীদের যাচাই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন।
ওয়ার্কফোর্স রিক্যালিব্রেশন (আরটিকে ২.০) কর্মসূচির শেষ সময়ে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক রুসলিন জুসোহ বলেছেন, নিয়োগকর্তারা আরটিকে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করবেন না এবং নথিপত্র নেই এমন কর্মী নিয়োগ করছেন বলে প্রমাণিত হবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে এবং নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়স্থানে থাকলেও রিক্যালিব্রেশন প্রক্রিয়ার আওতায় প্রথম স্থানে চলে আসবে বলে জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক রুসলিন জুসোহ।
বৈধতার মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা এবং এ কর্মসূচির আওতায় কতজন বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা ৩১ ডিসেম্বরের সময়সীমা সম্পর্কে সচেতন। তবে আগের মতো এ সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে।
আমরা সাম্প্রতিক এ বিষয়টি ইমিগ্রেশন, স্বরাষ্ট্র এবং মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে উত্থাপন করেছি এবং তারা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তারা আরও সময় বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আরটিকে ২.০ কর্মসূচিতে কতজন বাংলাদেশি সুযোগ গ্রহণ করেছেন এবং নিয়মিত হয়েছেন তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে বৈধকরণ কর্মসূচি ‘রিক্যালিব্রেশন ২.০’ তে প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের নাম নিবন্ধন করতে পারেন বা সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন সেই লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পাসপোর্ট বিতরণ করছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
পোস্ট অফিসের পাশাপাশি কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার ও কুয়ালালামপুরের সিবিএল মানি ট্রান্সফার রেমিট্যান্স হাউস থেকে মিশনের পাসপোর্ট বিভাগ পাসপোর্ট বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেবাটি নিতে অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া বাধ্যতামূলক এবং অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে পাসপোর্ট নেওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করে হাইকমিশন থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
৪ ডিসেম্বর হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রথম সচিব বাণিজ্য প্রণব কুমার ঘোষ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৭, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের সিবিএল মানি ট্রান্সফার রেমিট্যান্স হাউস থেকে সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা। সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহকারীদের আগামী ১২ থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
এছাড়া ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার থেকে সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা। এক্ষেত্রে সরাসরি পাসপোর্ট সংগ্রহকারীদের যথাক্রমে আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট নির্ধারিত স্থান থেকে সংগ্রহে appointment.bdhckl.gov.bd/other এই লিংকে গিয়ে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যতীত পাসপোর্ট বিতরণ সম্ভব হবে না বিধায় নির্ধারিত তারিখের আগেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য বিদ্যমান পোস্ট অফিসের সার্ভিসটিও একইসঙ্গে চালু থাকবে। তবে একই সঙ্গে দুই প্রকার সার্ভিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে প্রবাসীদের অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।