জগন্নাথপুর টাইমসবুধবার , ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে অন্যরকম একদিন – আবুল ফতেহ ফাত্তাহ

Jagannathpur Times BD
ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩ ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজে  বানানবিচিন্তা, গদ্যনির্মিতি ও আবৃত্তির অন্যরকম একদিন – আবুল ফতেহ ফাত্তাহ
::
সেদিন  ছিল শনিবার। নয়ই ডিসেম্বর ,দু-হাজার তেইশ।মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটা ছিল বিস্ময়, আনন্দ আর কৌতূহল-উদ্দীপক। যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার; কিন্তু তাতে কী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রাণচঞ্চল আগমন এবং তৎপরতা সকালের মধুময় পরিবেশটাকে আরও বেশি রমণীয় করে তুলেছিল। আমি যখন কলেজ-ফটকের সামনে, ওই সময় অধ্যক্ষ মহোদয়ের শকট ফটক ছুঁয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। আমিও প্রায় একই সময়ে অধ্যক্ষ-কক্ষে প্রবেশ করি। অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান আমার অত্যন্ত সুহৃদ। তিনিসহ আজির হাসিব,আলমগীর হোসেন,এনামুল হক চৌধুরী সোহেল আমাকে স্বাগত জানান। একটু পরে উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সূত্রধরও যুক্ত হন সবার সঙ্গে। ঠিক সকাল নটায় প্রথম অধিবেশন শুরু হবার কথা। তাই আয়োজকদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন। আমি যথাসময়ে এসেছি বলে তাঁরাও অনেকটা নির্ভার।
চা-পর্ব শেষে আমরা তিনতলায় হলরুমে পৌঁছি। বাংলা বিভাগের এই আয়োজনে বাংলা  ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্রীরা জড়ো হয়েছেন। তাঁদের চোখে মুখে জিজ্ঞাসার ছাপ দৃশ্যমান। অন্যবিভাগের দু’জন বিভাগ-প্রধান বিশেষত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক রহিমা বেগম ও হিসাববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সামিরা আক্তারও নির্ধারিত আসনে উপবিষ্ট। গদ্যনির্মিতি পর্বের বিশেষজ্ঞ বক্তা কথাশিল্পী  অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধাও মঞ্চে আছেন। বানানবিচিন্তা পর্বের বিশেষজ্ঞ বক্তা প্রফেসর ডক্টর জফির সেতু(শাবি) এবং আবৃত্তিবিষয়ের বিশেষ বক্তা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক  গাজি সাইফুল হাসান যথাসময়ে আসবেন বলে উদবোধন পর্ব শুরু হয়।
অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান এই পর্বের সভাপতি ।  সাহিত্য-সুহৃদ, প্রভাষক আলমগীর হোসেনের সঞ্চালনায় বাংলাবিভাগের প্রধান, গবেষক ও লেখক আজির হাসিবের স্বাগত ভাষণের পর কথা বলেন, শিক্ষকপর্ষদ সম্পাদক ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক এনামুল হক চৌধুরী সোহেল,আখ্যান-লেখক প্রশান্ত মৃধা,উপাধ্যক্ষ কৃষ্ণপদ সূত্রধর। অতঃপর আমার আহ্বান আসে।
ভাবছিলাম,’বানানবিচিন্তা,গদ্যনির্মিতি ও আবৃত্তি ‘ এই  তিন বিষয়ের নিরিখে কী বলা যায়। একজন  মানুষ তাঁর স্বপ্নের সমান বড়ো হতে চান।  প্রাত্যহিক সুখসমৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে ওই  মানুষ কর্মস্থলে যোগদান করেন। সংসারধর্ম পালন শেষে এক সময় ভবলীলা সাঙ্গ হয়, তাঁর। আমাদের জিজ্ঞাসা—এটাই কি জীবন? নাকি এর বাইরেও জীবনকে কাজে লাগানো যায়?
হ্যাঁ,জীবনের বহুমাত্রিক সম্ভাবনা আমাদের হাতছানি দেয়।স্বপ্নডানা ছোঁয়ার দুর্নিবার ইচ্ছা, সততা,নিষ্ঠা,ধৈর্য,অনুশীলন আর আত্মবিশ্বাস একটা জীবনের জন্য অনিবার্য অনুষঙ্গ। আজকের এই কর্শালার কথাই ধরা যাক। তিনজন বিষয়-বিশেষজ্ঞ নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিপাদ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উপযোগী কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে লাগসই পাঠ-উপস্থাপন করবেন। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের আপাতসরল অভিব্যক্তি প্রত্যক্ষ করে প্রথমেই আমরা আকৃষ্ট হতে পারি। এরপর তাঁর কণ্ঠস্বর,উচ্চারণ,বাচনভঙ্গি,বিষয়জ্ঞান ও  ওজস্বিতায় আমরা মুগ্ধ হই। অতঃপর অংশীজনরূপে আমরাও ওই পাঠ উপস্থানার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অনুশীলন প্রক্রিয়ায় যু্ক্ত হই। আর এভাবেই আমরা নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টায় ব্রতী হতে পারি। এ কলেজের বাংলা বিভাগ এই আয়োজনের জন্য কৃতিত্বের দাবিদার। তাঁদের এই সময়োপযোগী উদ্যোগকে  প্রথমেই সাধুবাদ জানাই।
শিক্ষা বলতে আমরা অজানা থেকে জানায় উত্তরণের পথসন্ধানকে নির্দেশ করতে পারি। আবার, এটা এক জীবনভর সাধনা — যে মাধ্যমে এক ব্যক্তি অনন্য গুণ অর্জনে সক্ষম হন।  অন্য দশজন থেকে নিজেকে পৃথক ভাবতে পারেন —কৃতিত্বপূর্ণ ফললাভে কৃতার্থবোধও করতে পারেন। কিন্তু সেটা ব্যক্তিপর্যায়ে কেবল সীমিত থাকে।
আবার,ব্যক্তির অন্তর্নিহিত বিশেষ গুণ  শিক্ষা ও সাধনার যুগলমিলনে সংবেদন সৃষ্টি করে। ব্যক্তিকে সমষ্টির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে প্রণোদনা দেয়। ঘরকে বাহির আর বাহিরকে ঘর করার নিবিড় সাধনা কেবল শিল্পমাধ্যমে মূর্ত হয়ে ওঠে।
বলছিলাম,ব্যক্তিগত অর্জন সম্পর্কে। আমরা শিক্ষাজীবনে নির্দিষ্ট একধাপ পেরিয়ে উচ্চতর স্তরে শিক্ষালাভে ব্রতী হই। জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে আমরা যে-টুকু অর্জন করি বা করতে সক্ষম হই, এর মাধ্যমে ইতিবাচক বা কোনও রকম মানানসই পরিবেশে জীবনটা পার করে দিই। এটাকে সাধারণ গার্হস্থ্যজীবন বলাই ভালো। কিন্তু সবাইতো এই সীমিত জীবনে আটকে না-ও থাকতে চাইবেন।   ‘অন্য কোথা অন্য কোনওখানে ‘ তাঁর পদযাত্রা এগোতেই পারে।
তবে কোন শক্তিবলে?
দেহের শক্তি আর দেহের ভাষা একবস্তু নয়। (আর অন্তর্শক্তিতো আরও প্রবল) দৈহিক শক্তিবলে আমরা কলের চাকা ঘুরাতে পারি। সভ্যতার চাকায় যুগান্তর সৃষ্টি করতে পারি। এটাকে আমরা আর্থসামাজিক ও বস্তুগত উন্নতি বলে থাকি।
কিন্তু মানুষের ভেতরের সত্তা জাগাতে পারি না। ভেতরের সত্তা জাগানোর কৃৎকৌশল  তাহলে কী হতে পারে?
আজকের প্রতিপাদ্য ‘বানানবিচিন্তা,গদ্যনির্মিতি ও আবৃত্তি ‘ —এর মাধ্যমে অন্তরসত্তাকে উজ্জীবিত করার কোন কোন কৌশল বা উপায় আমরা অনুসরণ করতে পারি —এই বিষয়টি হয়তো চর্চা ও অনুধাবনের মাধ্যমে স্থিরীকৃত হতে পারে।
তবে আপাতদৃষ্টিতে প্রথমেই এটুকু বলা হয়তো অত্যুক্তি হবে না —এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনজন বিষয়-বিশেজ্ঞ তাঁদের প্রাজ্ঞচিন্তা,অভিনিবেশ,সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সক্ষমতাগুণ,অনুশীলন ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতার যথাপ্রয়োগ করে অন্তত স্বল্পকালীন নিবিষ্টতায় আমাদের সন্ধিৎসু শিক্ষার্থীমনে উজ্জীবন সৃষ্টি করবেন।
 আর এ ধরনের মহৎ গুণ অর্জনের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে মানুষের অধিক মানুষ,শিক্ষকের অধিক শিক্ষক,শিল্পীর অধিক শিল্পী, লেখকের অধিক লেখক, সাংবাদিকের অধিক সাংবাদিক,শিক্ষার্থীর অধিক শিক্ষার্থী,পেশজীবীর অধিক পেশাজীবী,নাগরিকের অধিক নাগলরিক হতে সক্ষম হই —সেই নান্দনিক গুণসম্পন্ন মহৎকর্মের অনুশীলন,অনুধাবন ও ধারণ করার সক্ষমতাগুণ যে মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় —সেটা হচ্ছে শিল্প বা সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন। আর এ জন্য এ ধরনের কর্মশালার রয়েছে বহুমাত্রিক বিস্তার এবং এর কোনও বিকল্প হতে পার না। আজকে যাঁরা এই প্রশিক্ষণে অংশ নিলেন,গতকাল থেকে তিনি বা তাঁরা ভিন্ন মানুষ।
মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগ মহৎ এই আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অন্তরসত্তার উজ্জীবন, অনুশীলন ও বিকশিত করার প্রায়োগিক এই কর্মশালার উদ্যোক্তা।অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকপর্ষদ ও বাংলাবিভাগকে সাধুবাদ জানাই।
::
লেখক : ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ
আকাশ-আঙিনা
সিলেট।
 ও
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির
মানবিক অনুষদের অধ্যাপক  এবং ডিন।
সাবেক অধ্যক্ষ- মদনমোহন সরকারি কলেজ, সিলেট।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।