মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান :
লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্রসিলের নতুন বাজেট পাশ হয়েছে। বাজেটে হাউজিং, শিক্ষা, অপরাধ দমন, তরুণ, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচিতে বিপুল বিনিয়োগ প্রস্তাব।
এ বাজেটে ১৫ হাজার পরিবারের গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সহায়তা দিতে মেয়রস্ এনার্জী ফান্ডে ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে।
এসেছে মাদক বিরোধী লড়াই জোরদার করতে ড্রাগ স্কোয়াড গঠনের ঘোষণা।
মহিলা এবং পঞ্চাশোর্ধ পুরুষদের জন্য ফ্রি সুইমিং (সাঁতার),
ব্রিটিশ-বাঙালি মহিলাদের জন্য উইমেন্স সেন্টার ও সোমালিদের জন্য বিশেষায়িত ‘সোমালি রিসোর্স সেন্টার,
‘কাউন্সিল ট্যাক্স কস্ট-অব-লিভিং রিলিফ ফান্ড’ গঠন,
৫০ – ৬০ শয্যার একটি স্বতন্ত্র অ্যাডাল্ট কেয়ার হোম এর জন্য ২০ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।
এ-লেভেলে ইএমএ ভাতা জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ পাউন্ডে উন্নীত এবং জনপ্রতি ১৫ শত পাউন্ড করে ইউনিভার্সিটি বার্সারি লাভকারীর সংখ্যা ৪০০ জন থেকে ৮০০ জনে উন্নীত
বিশ্বমানের এ-লেভেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য মূলধন বিনিয়োগ হিসেবে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।
মাদকাসক্তদের চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।
বর্জ্য পরিষেবা আধুনিকায়নে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ
তরুণদের জন্য অনুদান প্রদান অব্যাহত রাখা এবং ইয়ুথ সার্ভিসেস্ এ আরও ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ
দক্ষতার সাথে বাজেট পর্যালোচনার মাধ্যমে ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয়।
লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব সম্বলিত ২০২৪ – ২৫ অর্থবছরের বাজেট পাশ হয়েছে।
২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাতে টাউন হলে অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ কাউন্সিল মিটিংয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বিতর্কের পর বাজেট অনুমোদন লাভ করে।
নতুন বাজেটে হাউজিং ছাড়াও শিক্ষা, অপরাধ দমন, বয়স্ক ও মহিলাদের জন্য বিশেষায়িত কর্মসূচি অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই বাজেটে রয়েছে অসংখ্য নতুন উদ্যোগ ও কর্মসূচি, যা বারার বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ কল্যান নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্ভাবনী উদ্যোগ গুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সংকটে থাকা লোকজনকে অতিরিক্ত কস্ট-অফ-লিভিং ক্রাইসিস সাপোর্ট (জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটকালীন সহায়তা) প্রদান। এছাড়া বাজেট বক্তৃতায় নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বারার ১৫০০০ পরিবারকে তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সহায়তার জন্য ১০০ পাউন্ড করে অনুদান প্রদানের জন্য মেয়রস্ এনার্জি ফান্ডে অতিরিক্ত ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ, এবং মাদক বিরোধী লড়াই জোরদার করতে ড্রাগ স্কোয়াড গঠন করে এই খাতে ৪ লাখ ৩৩ হাজার পাউন্ড বরাদ্দের ঘোষণা দেন।
গত মাসেই, কাউন্সিল তার প্রস্তাবিত বাজেটে বর্জ্য ও ফ্লাইটিপিং (যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছুঁড়ে ফেলা) সমস্যা মোকাবেলা করে একটি পরিচ্ছন্ন বারা গড়ে তুলতে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলো।
২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার টাউন হলে আয়োজিত বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান তাঁর প্রশাসনের উদ্ভাবনী ও জনকল্যাণমুখী বহু কর্মসূচি সহ নতুন অর্থ বছরের বাজেট অনুমোদন লাভ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি তাঁর গণমুখি বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এসময় ডিপুটি মেয়র কাউন্সিলর মাইযুম মিয়া, লিড মেম্বার ফর রিসোর্সেস কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ এবং হেড অব মেয়র অফিস এ্যামি জ্যাকসন সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের বাজেটকে “জনকল্যানমুখি সুষম বাজেট” হিসেবে আখ্যায়িত করে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ এই বাজেটের কেন্দ্রে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের জন্য কাউন্সিল হিসেবে যা যা করা দরকার, তা করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেজন্যই বাজেটে যেমন জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চলমান সংকট মোকাবেলায় মানুষকে যেভাবে যতটুকু পারা যায়, ততটুকু সহায়তার নানা উদ্ভাবনী কর্মসূচি রয়েছে, তেমনি রয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনামূল্যে সুইমিং সহ নানা খাতে বিপুল বরাদ্দ। তরুণদের জন্য যেমন সেরা মানের ইয়ূথ সার্ভিস আমরা দিচ্ছি, তেমনি তাদেরকে উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করতে প্রণোদনার পরিমাণ ও সংখ্যাও নতুন বাজেটে বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, আমি হচ্ছি জনগণের সার্ভেন্ট, তাদেরকে সার্ভ করতেই তারা আমাকে নির্বাচিত করেছেন।
বাজেট মিটিংয়ে ঘোষণা দেয়া মেয়রের এনার্জী ফান্ড সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আমি মেয়রের এনার্জী ফান্ড (জ্বালানি তহবিল) চালু করেছিলাম, যা জ্বালানীর দাম অর্থাৎ গ্যাস—বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং জীবনযাত্রার খরচের সর্বোচ্চ সংকটের সময় হাজার হাজার পরিবারকে সাহায্য করেছিল। এই তহবিলের জন্য আরও ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত। এর ফলে বারার ১৫,০০০ পরিবার তাদের গ্যাস এবং বিদ্যুৎ বিলের পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০০ পাউন্ড পেমেন্ট পাবে, যা কিছুটা হলেও তাদেরকে সাহায্য করবে।”
তিনি বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটসে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করতে মেয়রের ড্রাগ স্কোয়াডে ৪৩৩,০০০ পাউন্ড বিনিয়োগের বিধান বাজেট মিটিংয়ে ঘোষণা করতে পেরেও আমি আনন্দিত। এই বিনিয়োগের ফলে মাদক অপরাধের মোকাবেলায় সহযোগিতা ও আইনের প্রয়োগ করার জন্য ৭ জন স্পেশাল থিওস (টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসার) এর একটি দল পুলিশ, ভিসিএস এবং এনএইচএস-এর সাথে গোটা বারা জুড়ে কাজ করবে। আমরা কীভাবে বাসিন্দাদের জন্য আমাদের রাস্তাগুলোকে নিরাপদ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাব, এটি হচ্ছে তারই আরেকটি উদাহরণ।
বাজেট বক্তৃতায় মেয়র স্পেশাল এডুকেশনাল নিডস্ এন্ড ডিজেবিলিটিজ, সংক্ষেপে সেন্ড বাচ্চাদের জন্য প্রদেয় সার্ভিস সমূহকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে অতিরিক্ত ১ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দেরও ঘোষণা দেন। এসম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র লুৎফুর বলেন, “একটি কাউন্সিল হিসাবে, আমরা সেই সেন্ড (স্পেশাল এডুকেশনাল নিডস্ এন্ড ডিজেবিলিটিজ) বাচ্চাদের জন্য পরিষেবার ঘাটতি চিহ্নিত করেছি যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যাচ্ছে, এবং এই পরিবর্তনটি তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের উপর চাপ দিতে পারে। যেমন, আমরা ট্রানজিশনাল কেয়ার প্যাকেজগুলিতে বছরে ১ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট করেছি যাতে তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা সমর্থিত, যত্নশীল এবং ব্যাঘাতের ভয় ছাড়াই যৌবনে প্রবেশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে।
উল্লেখ্য, ২০২৪/২৫ অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে অনেকগুলো খাতে বিপুল বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছেঃ
— এ-লেভেলে এডুকেশন মেইনটেনেন্স এলাউন্স বা ইএমএ প্রাপ্ত ১,২৫০ জন ছাত্র—ছাত্রীর জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড বরাদ্দ, এবং এখন থেকে তারা প্রতি বছর ৪০০ পাউন্ডের পরিবর্তে ৬০০ পাউন্ড করে আর্থিক অনুদান পাবে।
— মেয়রস্ ইউনিভার্সিটি বার্সারি গ্রান্ট এর জন্যও বরাদ্দ বাড়িয়ে ১.২ মিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে ৪০০ জনের স্থলে এখন থেকে ৮০০ জন শিক্ষার্থী প্রতি বছর ১৫০০ পাউন্ড করে অনুদান পাবে।
— স্বাস্থ্যের উন্নতি ও একাকীত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে লোকজনকে বের করে আনতে বছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার পাউন্ড বিনিয়োগ প্রস্তাব করা হয়েছে, যার আওতায় বারার ১৬ বছরের বেশি বয়সী মেয়ে ও মহিলাদের পাশাপাশি ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে সুইমিং (সাঁতার) এবং একুয়াটিক সেশন প্রদান করা হবে।
— বিভিন্ন কমিউনিটির বাসিন্দাদের সম্পর্কে জানতে এবং কাউন্সিল কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ত করার একটি প্রকল্প সহ পরিদর্শন, কাজ এবং বিনিয়োগের দুর্দান্ত জনপদ হিসাবে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রচার।
— বারার ব্রিটিশ—বাঙালি মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পরামর্শ এবং সুবিধা প্রদানের জন্য একটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল উইমেন্স রিসোর্সেস্ সেন্টার স্থাপনের জন্য ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ।
— কালো এবং জাতিগত সংখ্যালঘু (বিএএমই) এবং অন্যান্য গ্রুপগুলোর জন্য সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল ড্রাগের অপব্যবহার অর্থাৎ মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ। ড্রাগ সমস্যার সমাধানে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ।
— ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন বিনিয়োগে একটি বিশ্বমানের এ—লেভেল প্রতিষ্ঠান “একাডেমিক এক্সিলেন্স ইন্সটিটিউট” প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের অর্জনের উন্নতির দিকে নজর দেবে, এবং আরও বেশি সংখ্যক স্থানীয় শিক্ষার্থী যাতে অক্সব্রিজ, রাসেল গ্রুপ এবং বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি হতে পারে, সেই লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
— বিএএমই কমিউনিটির বয়স্ক বাসিন্দাদের স্বাধীনভাবে বসবাস ও সুস্থতা নিশ্চিত করতে একটি সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল অ্যাডাল্ট কেয়ার হোম (অতিরিক্ত যত্ন), এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য একটি স্বতন্ত্র ৫০—৬০ শয্যার আবাসিক কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য ২০ মিলিয়ন পাউন্ড মূলধন বিনিয়োগ।
— টাওয়ার হ্যামলেটসে ক্রমবর্ধমান সোমালি জনসংখ্যার জন্য একটি বিশেষায়িত কেন্দ্র “সোমালি রিসোর্স হাব”—এ বিনিয়োগ।
উল্লেখিত উদ্যোগ ও কর্মসূচিগুলো হচ্ছে গত অর্থবছরের বাজেটে কাউন্সিল কর্তৃক প্রবর্তিত কর্মসূচি গুলোর অতিরিক্ত এবং আগের কর্মসূচিগুলোও ২০২৪/২৫ অর্থবছরে অব্যাহত থাকবে। গত অর্থবছরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, বারার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য সর্বজনীন বিনামূল্যের স্কুল খাবার সরবরাহ, যা কিশোর—তরুণদের জন্য গৃহিত ২১ মিলিয়ন পাউন্ডের বিস্তৃত বিনিয়োগের অংশ, স্বেচ্ছাসেবী এবং কমিউনিটি খাতে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ এবং বিনামূল্যে প্রাপ্তবয়স্ক হোম কেয়ারে ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড (যা কার্যকর হবে ২০২৫ সালে)।
মেয়র লুৎফুর রহমান আরো বলেন, আমরা যে শক্তিশালী আর্থিক অবস্থান তৈরি করেছি তা আমাদের কমিউনিটিগুলিতে আরও বিনিয়োগ করতে আমাদের সক্ষমতা প্রদান করে। মাত্র ১২ মাসে আমরা একটি চ্যালেঞ্জিং আর্থিক পরিস্থিতিকে শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক অবস্থানে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা আমাদের আর্থিক সঞ্চয় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি, একটি সুষম বাজেটের সাথে আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং আমাদের নিরীক্ষিত অ্যাকাউন্টগুলি স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং আমরা এতদসত্বেও বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত খাত খুঁজে পেয়েছি।
মেয়র বলেন, আমাদের আর্থিক অবস্থাকে এমন সঠিক এবং টেকসই অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য আমি কাউন্সিল অফিসার ও সদস্যদের এবং আমাদের বাজেট পরামর্শে অংশ নেওয়া ১,৯৩১ জন বাসিন্দা এবং ব্যবসায়িদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।
কাউন্সিলের বর্জ্য অপসারণ সার্ভিসে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ প্রসঙ্গে মেয়র লুৎফুর বলেন, এই বিনিয়োগের ফলে বর্জ্য অপসারণের মূল পরিষেবাগুলি অধিকতর শক্তিশালী হবে, এবং এই সার্ভিসে আরো অতিরিক্ত ৭২ জন ফ্রন্টলাইন কর্মী নিয়োগ করা হবে৷ এই বিনিয়োগের ফলে অতিরিক্ত ড্রাইভার, ক্লিনার এবং লোডার সহ নতুন যানবাহনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি গত বছর কাউন্সিল ঘোষিত বর্জ্য জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করা হবে। বিনিয়োগকৃত তহবিল গুলি বর্ধিত সুইপিং বিটগুলিকে সক্ষমতা প্রদান করবে — যার মধ্যে রয়েছে বারার ব্যস্ততম এলাকাগুলিতে দিনে ন্যূনতম ১৫ ঘন্টার সাথে রাতের সময় এবং সপ্তাহান্তেও পরিষ্কারকরণ রাউন্ড বা টহল বৃদ্ধি করা, পার্ক, রাস্তা এবং খোলা জায়গায় বর্জ্য সমস্যাগুলি সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করার জন্য নতুন দ্রুত প্রতিক্রিয়া দল নিয়োগ; দক্ষতা বাড়াতে পরিষেবার প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণ; এবং বর্জ্য হটস্পট গুলি চিহ্নিত করা ও মোকাবেলায় কাউন্সিলকে সহায়তা করতে বাসিন্দাদের উৎসাহিত করার জন্য একটি নতুন ‘স্ট্রিট লিডারস্’ স্কিম গ্রহণ।
মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, আমি গর্বিত যে এই কাউন্সিল এই বারার মানুষের জন্য টেকসই বিনিয়োগ করে চলেছে। আমি লীড মেম্বার কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ, আমাদের সেকশন ১৫১ অফিসার, সহ সকল কর্মকর্তা যারা এই রূপান্তরমূলক বাজেটকে বাস্তবে পরিণত করতে সাহায্য করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।
কাউন্সিলের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক বার্ষিক রেসিডেন্টস সার্ভে অর্থাৎ বাসিন্দাদের মতামত জরিপে দেখা গেছে যে, বাসিন্দারা জীবনযাত্রার খরচ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাই এই বাজেটের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা হয়েছে বাসিন্দাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়টি।
১৭ মিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব বিনিয়োগ প্যাকেজের অংশ হিসেবে লন্ডনের আবাসন সংকটে থাকা লোকদের সাহায্য করার জন্য অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা; বাসিন্দাদের আরও স্বাস্থ্যকর ও অর্থনৈতিক সুযোগ দেওয়ার জন্য কাউন্সিলের অবকাশকালীন পরিষেবাগুলির বীমা করা; এবং দুর্বল ব্যক্তিদের সহায়তা করার ব্যবস্থা, যেমন বিশেষ শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তা (এসইএন) তথা ডিসেবিলিটি সংশ্লিষ্ট শিশুদের জন্য নানা সুবিধা ও পরিবহনের ব্যবস্থা করা।
হাউজিং অর্থাৎ ঘর—বাড়ির ব্যবস্থা করাটা হচ্ছে কাউন্সিলের জন্য একটি শীর্ষ অগ্রাধিকার। বিদ্যমান স্টকের (কাউন্সিল মালিকানাধীন বাড়ি—ঘর) গুণগত মান বা অবস্থার উন্নতি করার পাশাপাশি কাউন্সিলের নেতৃত্বে এবং বিভিন্ন অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যের, পারিবারিক আকারের (সাইজের) বাড়ি—ঘরের ব্যবস্থা করতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। এই মেয়াদে ৪,০০০টি বাড়ি সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা শুরুতেই ঘোষণা করা হয়েছিলো। একইভাবে, গ্রেনফেল ট্র্যাজেডির প্রতিক্রিয়ায় বিল্ডিং কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিনিয়োগের ফলে বারাতে বিদ্যমান বাড়িগুলির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা উন্নত করব ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় যে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক সংকোচন, বিদ্যুত—গ্যাসের ক্রমবর্ধমান দাম বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয়—সংকট, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্থানীয় সরকারের অর্থব্যবস্থা গুরুতর চাপের মধ্যে রয়েছে। গত অর্থবছরে কাউন্সিল ট্যাক্স উপাদান স্থিতাবস্থায় রাখা হয়েছিল, কিন্তু ২০২৪/২৫ অর্থবছরে এটি ২.৯৯ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে বর্তমানে লন্ডনের ষষ্টতম সর্বনিম্ন কাউন্সিল ট্যাক্স বারা এবং যারা কম সচ্ছল তাদের জন্য সবচেয়ে উদার কাউন্সিল ট্যাক্স হ্রাস কাউন্সিলগুলির মধ্যে একটি।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সংকোচন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বার বার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম অর্থ প্রাপ্তির পাশাপাশি বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতি এবং ইউটিলিটি খাতে (গ্যাস—বিদ্যুৎ—পানি) খরচ বৃদ্ধির কারণে বাধ্য হয়েই ট্যাক্স সামান্য বাড়াতে হচ্ছে। তবে এতে করে বারার বেশির ভাগ বাসিন্দার উপর বাড়তি কোন আর্থিক চাপ পড়বে না বলে মেয়র সাংবাদিকদের জানান।
এ প্রসেঙ্গ কাউন্সিলের ফিন্যান্স বিষয়ক ক্যাবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ বলেন, “২০২২ – ২৩ অর্থবছরের বাজেটে, যেখানে লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলগুলো তাদের কাউন্সিল ট্যাক্স ১৪.৯৯% বৃদ্ধি করেছিল, সেখানে টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিল ট্যাক্স ছিল সম্পূর্ণরূপে ফ্রোজেন অর্থাৎ ট্যাক্স বাড়ানো হয়। সে সময়, মুদ্রাস্ফীতি চলছিল ১০%—এরও বেশি। ২০২৩ – ২৪ অর্থবছরে বাজেটে, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি থেকে বারার সবচেয়ে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবার গুলোকে রক্ষা করার জন্য মেয়র লুৎফুর রহমান এবং কাউন্সিল তাদের প্রতিশ্রুতিকে সম্মান করে চলেছেন।”
তিনি বলেন, “যদিও কাউন্সিল সর্বনিম্ন অনুমোদিত থ্রেশহোল্ড, ২.৯৯% কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়াবে, তারপরও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর জন্য নির্বাহী মেয়রের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশেষ সুবিধাদি রাখা হয়েছে।” তিনি দাবি করেন, “দেশের কিছু কিছু লেবার ও টোরি নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল ১০% থেকে ১৫% এবং, লন্ডন মেয়র ৮% কাউন্সিল ট্যাক্স বাড়িয়েছে।
কাউন্সিলর সাঈদ আহমদ নতুন বাজেটে বারার বাসিন্দাদের আর্থিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে যেসকল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তার বিস্তারিত তুলে ধরেন বলেন, ‘কাউন্সিল ট্যাক্স কস্ট-অব-লিভিং রিলিফ ফান্ড’ হচ্ছে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই ফান্ড বা তহবিল হাজার হাজার পরিবারকে ২.৯৯% কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করবে। যদি কোনো পরিবারের বার্ষিক আয় ৪৯,৫০০ পাউন্ড (ট্যাক্স এবং ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কর্তনের আগে যা প্রতি মাসে ৪,১২৫ পাউন্ড) এর কম হয়, তাহলে তাদেরকে ২.৯৯% বর্ধিত ট্যাক্স প্রদান করতে হবে না। বারার ১৯,০০০ পরিবার (১৪%) এই সুবিধা পাবে (আবেদন করা সাপেক্ষে)। উল্লেখ্য যুক্তরাজ্যের পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ৩২,৩০০ পাউন্ড।
“এছাড়া কাউন্সিল ট্যাক্স মোটেই ৫% বাড়ছে না। সরকার নির্দেশিত এবং সকল কাউন্সিলের জন্য জরুরী সোশ্যাল কেয়ার —এ প্রতি পরিবারে ২% কন্ট্রিবিউশন বাড়বে, যা কাউন্সিল ট্যাক্স নয়” বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কাউন্সিল ইতিমধ্যেই “কাউন্সিল ট্যাক্স ডিসকাউন্ট স্কিম” এর মাধ্যমে বারার ২৮ হাজার পরিবারকে (মোট ২০%) আর্থিক সুরক্ষা করে আসছে। এই স্কিম কাউন্সিল ট্যাক্স বিলের উপর ১০০% পর্যন্ত ছাড় প্রদান করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধির একটি হিসাব তুলে ধরে বলা হয় যে, ব্যান্ড ‘এ’ প্রোপার্টির জন্য বর্তমান বার্ষিক চার্জ হচ্ছে ৭৬৪.৫৯ পাউন্ড, প্রস্তাবিত ২.৯৯% ট্যাক্স বাড়লে এক্ষেত্রে সপ্তাহে বাড়বে মাত্র ৪৪ পেন্স, যা বছরে বাড়বে ২২.৮৬ পাউন্ড। একইভাবে ব্যান্ড ‘বি’ প্রোপার্টির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৫১ পেন্স (বছরে ২৬.৬৭ পাউন্ড) এবং এভাবে ব্যান্ড ‘এইচ’ প্রোপার্টির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ১ পাউন্ড ৩২ পেন্স (বছরে ৬৮.৫৮ পাউন্ড) বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলের অর্থ সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে জানানো হয় যে, গত বছর কাউন্সিল পরবর্তী তিন আর্থিক বছরে ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয় করা সহ একটি কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। যথাযথ বাজেট প্রণয়ন ও পর্যালোচনার ফলস্বরূপ, কাউন্সিল ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত যে, পরিষেবা (সার্ভিসসমূহ) পুনর্গঠন, আয় বৃদ্ধি এবং রূপান্তর সহ বিভিন্ন খাত থেকে সঞ্চয়ের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪৩.৪ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় বা সঞ্চয় করতে পেরেছে। এর মানে হলো, বর্তমান প্রশাসনের সুদক্ষ নেতৃত্বে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ৬.৪ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রদানের পাশাপাশি কাউন্সিল নিরীক্ষা, নিশ্চয়তা এবং গভর্নেন্স বা পরিচালনাধীন আর্থিক সমস্যা সমাধানেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
গত কয়েক মাসে, ২০১৬/১৭, ২০১৭/১৮, ২০১৮/১৯ এবং ২০১৯/২০—এর অ্যাকাউন্টগুলি স্বাধীন অডিটরদের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে, অবশিষ্ট খসড়া অ্যাকাউন্টগুলির জন্য জনসাধারণের পরিদর্শনের সময়কাল এখন চলছে এবং ২০২০/২১, ২০২১/২২ এবং ২০২২/২৩ সবই ২০২৪ সালের মার্চ মাসে অডিট কমিটির কাছে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে।
অক্টোবরে, ২০২০/২১, ২০২১/২২ এবং ২০২২/২৩—এর জন্য কাউন্সিলের অসামান্য বার্ষিক গভর্নেন্স স্টেটমেন্টগুলি অডিট কমিটি দ্বারা অনুমোদিত হওয়ার পরে কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।