পহেলা বৈশাখ ও বাংলা সনের ইতিকথা
মুহাম্মদ চন্দন মিয়া
অত্যন্ত ঝাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হলো পহেলা বৈশাখ। বাঙালি সংস্কৃতির এই সার্বজনীন উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে । বাংলা সালের প্থম মাসের প্রথম দিন এই পহেলা বৈশাখের উৎযাপন হয় ।
এই সালের উদ্ভাবন নিয়ে দুটি মত রয়েছে—
একটি হচ্ছে প্রাচীন রাজা শশান্ক বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রবর্তক । গুপ্ত সাম্রাজ্যের এই সামন্ত রাজা ৫৯৩ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা সন চালু করেন । দ্বিতীয় মত হচ্ছে তৃতীয় মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তক। মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী সাল অনুসারে খাজনা আদায় করতেন । কিন্তু হিজরী সন চাঁদের উপড় নির্ভর্শীল বিধায় কৃষি ফসলের সাথে পার্থক্য দেখা দেয় ।
তাই সম্রাট আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধা এবং ভারতীয় উপমহাদেশের বহুজাতি, ধর্ম,বর্ন নির্বিশেষে সবার সার্বজনীন সন হিসাবে তাঁর আদেশে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী গ্রেগরীয় সৌর সন ও হিজরী সনের উপড় ভিত্তি করে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সন তৈরী করেন ।এই মতটি সর্বাপেক্ষা গ্রহন যোগ্য ।
পহেলা বৈশাখের উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানাতে চারুকলা অনুষদ মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং ছায়ানট রমনা পার্কে অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে । নব্বই দশকে এটিকে আনন্দ শোভা যাত্রাও বলা হতো। মঙ্গল শোভা যাত্রায় বহু পশু পাখির প্রতীক বহন করা হয় । কিন্ত এই শোভা যাত্রায় কিছুটা বিতর্ক দেখা দেয় । অনেক পোষ্টারে দেব দেবীর ছবি ও পেঁচার ছবি বহন করা হয় । পেঁচা হলো হিন্দু ধর্মের দেবী লক্ষীর বাহন । একটি বিশেষ ধর্মের প্রতীক বা দেবীর বাহন প্রদর্শনের বাহুল্যতা আমাদের এই সাংস্কৃতিক , লৌকিক ও সার্বজনীন উৎসবের চরিত্রকে কুলষিত ও ম্লান করে । এতে উৎসবমূখর সার্বজনীন পহেলা বৈশাখের পরিবেশটি ধর্মনিরপেক্ষ রূপটি হারায়।
ঐক্য, সাংস্কৃতিক গর্ব ও মহামিলনের প্রতীক এই শোভাযাত্রা। এটি ঐতিহ্যবাহী শৈল্পিক সৃস্টি ও চেতনার মন্ত্রমুগ্ধকর প্রদর্শনী।তাই সবাই এতে অংশ গ্রহন করে ।সবার বহুমাত্রিক অংশ গ্রহনে উৎসবটি হয় সার্বজনীন। বর্ণীল পোশাকে সজ্জিত ও প্রতীকী সম্বলিত শোভা যাত্রা আমাদের লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে ,আনন্দ ও উল্লাসে সবাই নতুন বছরের উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানায়।উৎসবের বহুমাত্রিক রূপ ও বিশেষত্ব বিশেষ সেলেকটিব প্রতীকে যেন হারিয়ে না যায়।
লেখক :
মুহাম্মদ চন্দন মিয়া –
কলামিস্ট , প্রাক্তন প্রভাষক
যুক্তরাজ্য প্রবাসী।