মুহাম্মদ সালেহ আহমেদ :
বিশ্বব্যাপী আর্ত মানবতার সেবা ও ব্রিটেনের লোকাল কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে ২০২০ সালে ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি যাত্রা শুরু করে। সবার সহযোগিতায় অল্পদিনের ব্যবধানে ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। আগামিতে একটি মাল্টিপারপাস সেন্টার তৈরির লক্ষ্যে এবং বিগত দিনের সকল কার্যক্রম অবগতির জন্য ২৪ জুন শুক্রবার বেলা আড়াই টায় ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন অনুস্টিত হয় পূর্ব লন্ডনের অভিজাত গ্র্যান্ড রসোই রেস্তোরাঁয। ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সাংবাদিক নবাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক ও ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির সিইও আ স ম মাসুমের পরিচালনায় এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ট্রাভেলিং ওয়ার্ল্ডওয়াইড এর পরিচালক সামি সানাউল্লাহ, ব্যাংক অফ এশিয়ার সিইও এবিএম কামরুল হুদা আজাদ, সাবেক কাউন্সিলর আতাউর রহমান, টাওয়ার হ্যামলেটস ব্যাডমিন্টন ক্লাবের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির ট্রাস্টি বাবলুল হক, তাকওয়া ব্যাডমিন্টন ক্লাবের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জুবায়ের, সাবেক প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রহমান, সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদ, ট্রেজারার সাংবাদিক সালেহ আহমদ, সাবেক নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু, মাহি এন্ড কো এর প্রিন্সিপাল একাউন্টেট আবু তাহের, প্রতিভাবান খেলোয়াড় মাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ভলান্টিয়ার কোর্ডিনেটর রুমানা রাখি, তরুণ ও প্রতিভাবান ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষক সোহান খান, হাবিব রহমান, বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারন সম্পাদক মোঃ দেলওয়ার হোসেইন ও ইএলএম-এর সাবেক পরিচালক দেলওয়ার খান প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সাংবাদিক নবাব উদ্দিন বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গর্বের প্রতীক ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি ট্রাস্ট। প্রতি বছরের মতো এবছরও আপনাদের সাথে মিলিত হয়ে ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির গত ১ বছরের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আমাদের বিগত দিনের কার্যক্রম, অগ্রগতিতে আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ, অংশগ্রহণ আমাদের সংস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে। এজন্য আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, গত ১ বছরে আমরা বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার পাশাপাশি ব্রিটেনের লোকাল কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে কাজ করেছি। বাংলাদেশে গরীব ও অসহায় মানুষদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা ছাড়াও নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন এবং বৃদ্ধ ও চলতে অক্ষম এমন মানুষদের জন্য হুইলচেয়ার উপহার দেয়া হয়েছে। এই প্রজেক্ট নেতৃত্ব দিয়েছেন আমাদের এ্যাম্বসেডার পলি রহমান। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। একই সাথে নির্মিতব্য শমসেরনগর হাসপাতালে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। সিলেট ও বরিশালে অন্ধ, বোবা, বধির এমন শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে সহযোগিতা করা হয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে খাদ্য সহায়তা ও উপহার পৌঁছানো হয়েছে। বরাবরের মতো আফ্রিকার খরাপীড়িত দেশ সোমালীল্যান্ডে আমাদের নিরাপদ পানি বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে।
ইস্টহ্যান্ডস চেয়ারম্যান জানান, ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি তুর্কী ও সিরিয়া সীমান্তে ভয়াবহ ভূমিকম্পে হিউম্যান আপিলের সাথে পার্টনারশিপে প্রজেক্ট ডেলিভারি করেছে। চলমান ফিলিস্তিন সংকটে ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা আল খায়ের ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
নবাব উদ্দিন বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের পাশাপাশি গত ১ বছরে ব্রিটেনের লোকাল কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে কাজ করেছি। বিশেষ করে এনএইচএস নর্থ ইংল্যান্ডের ফান্ডে কস্ট অব লিভিংয়ে আক্রান্ত মানুষদের জন্য নিয়মিত সার্জারী চালু করে প্রায় ১শ পরিবারকে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে, নিউহ্যাম ও টাওয়ার হ্যামলেটসের ৩০ পরিবারের মধ্যে সবজি বাগান করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়েছে । এছাড়া ন্যাশনাল লটারীর কমিউনিটি ফান্ডে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সহায়তায় কার্বণ নিঃসরণ প্রজেক্টে অন্তত ৩০০ মানুষের মধ্যে দৈনন্দিন জীবনে কার্বণ কমানোর উপায় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই প্রজেক্টে অংশ নেয়ার জন্য লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব ও আপাসেনের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কর্মশালাটি নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ ড. জাকি রেজওয়ানা আনোয়ারের প্রতি। এই কর্মশালায় আরো সহযোগিতা করেছেন সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী। এছাড়া বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলের সহায়তায় পরিবেশ বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন ৫০ জন মানুষ।
আলবার্ট হান্টের সহায়তায় বাগানের মাধ্যমে স্বাস্থ্যরক্ষা ও ক্রেন ভ্যালীর সহায়তায় কার্বণ নিঃসরণ প্রজেক্ট পশ্চিম লন্ডনে করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছরের চ্যারিটিবল ব্যাডমিন্টন টূর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন মোট ২২০ জন খেলোয়াড়। তাদের সহায়তায় ইষ্টহ্যান্ড মোট ৫ হাজার পাউন্ড রেইজ করেছে। এই প্রজেক্ট সফল করার জন্য ট্রাস্টি বাবলুল হক, আতাউর রহমান, হাবিব রহমান, ফকরুল, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, মাহিদ চৌধুরীর ভূমিকার প্রশংসা করে নবাব উদ্দিন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এবছরও ২১ জুলাই, রবিবার চ্যারিটি ব্যাডমিন্টন আয়োজন করা হয়েছে রেডব্রীজ স্পোর্টস সেন্টারে। দিনব্যাপী আয়োজিত এ টুর্নামেন্টে ২ শতাধিক খেলোয়াড় অংশ নেবেন। এই টুর্ণামেন্টে অর্জিত ফান্ড আমরা ব্যয় করবো অন্ধ, বোবা , কালা ও ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য। এই মূহূর্তে গ্রেটার লন্ডন অথরিটির ফান্ডে ২ বছর মেয়াদী ৯ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য প্রতি সপ্তাহে ব্যাডমিন্টন, ফুটবল প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হচ্ছে। ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষন নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণ ও প্রতিভাবান প্রশিক্ষক সোহান খান। ফুটবল প্রশিক্ষন তত্বাবধানে রয়েছেন আহাদ চৌধুরী বাবু। এছাড়াও একই বয়সী শিশু-কিশোরদের জন্য সাইট সিয়িং প্রজেক্টও করা হবে।
ইস্টহ্যান্ডস চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, এই অল্প সময়ের মধ্যে ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটির কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা রয়েছে। চলতি বছর ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি সেক্টরে অবদান রাখার জন্য কিংস এওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পায়। যা আমাদের উৎসাহিত করেছে। এছাড়া আমাদের ভলান্টিয়ার কোর্ডিনেটর রুমানা রাখি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সেরা নারী স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে এওয়ার্ড লাভ করেছেন। আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য কাজ করার অংগীকার নিয়ে। আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশে ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ডে একটি সেন্টার তৈরি করা যেখানে ভিন্নভাবে সক্ষম শিশু, কিশোররা জীবনের নতুন স্বাদ পাবে। এমন একটি মাল্টিপারপাস সেন্টার তৈরির লক্ষ্যে আমাদের সকল প্রজেক্ট অব্যাহত আছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, গত ৪ বছরে এই স্বপ্নের প্রজেক্টের জন্য আমরা সংগ্রহ করেছি ৫০ লক্ষ টাকা। একই সাথে জেনে আনন্দিত হবেন যে, ব্রিটিশ বাংলাদেশী এক দানশীল পরিবার সিলেট শহরের সন্নিকটে, মেইন রাস্তার পাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পন্ন ২৫ শতাংশ জায়গা ডোনেশন করার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। এই জায়গার আর্থিক মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকার উপরে। আমরা এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। এই প্রজেক্টে যদি কেউ দাতা হিসাবে যুক্ত হতে চান তাহলে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো।ইস্টহ্যান্ডস চ্যারিটি ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের গর্বের প্রতীক হয়ে টিকে থাকবে আপনাদের সহায়তায়, এই প্রত্যাশা আমাদের।