সাজিদুর রহমান :
যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক দাঙ্গা নিয়ে ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব রিলিজিয়ন এন্ড বিলিফ নামক সংগঠন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লন্ডন মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে “মেইনস্ট্রিমিং হেইট : ডানপন্থী গ্রুপ যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক দাঙ্গাকে উপলক্ষ করে যেভাবে কমিউনিটিকে বিভক্ত করছে” শীর্ষক প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয় ।
সেমিনারে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্ক অব রিলিজিয়ন এন্ড বিলিফ এর প্রেসিডেন্ট ড. আব্দুল্লাহ ফলিক।
বক্তব্য রাখেন সিভিল সোসাইটি কনসাল্টিং-এর পরিচালক ড. মার্ক এরিরা-গুয়ের, ইন্সস্টিটিউট অব রেস রিলেশনস-এর পরিচালক লিজ ফেকেতে, রেস অ্যান্ড ক্লাসের ডেপুটি এডিটর সোফিয়া সিদ্দিকী, রাজনীতি বিষয়ক সিনিয়র লেকচারার ডাঃ আমিনা ইসাত-দাসি ও ইউরোপীয়ান নেটওয়ার্ক এগেইনস্ট রেসিজম এর পলিসি এন্ড অ্যাডভোকেসি এডভাইজার ইমানুয়েল আচিরি।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, গোটা ইউরোপজুড়ে উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । মুসলমনরা অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব তাদের হাতে তুলে নেবে- সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ভীতি ছড়িয়ে দিচ্ছে । আর এ কারণে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছে ।
তারা বলছে, দিনদিন মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে । মুসলিমরা অভিবাসীর বেশে ইউরোপে প্রবেশ করছে । একদিকে ইউরোপিয়ানদের জন্মহার কমছে, অন্যদিকে মুসলমানদের জন্মহার বাড়ছে । যেভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে একসময় ইউরোপের কর্তৃত্ব ও আধিপত্য মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
বক্তারা বলেন, এই থিওরী দিয়ে ডানপন্থীরা ইসলাম বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে। এটা একটি ভ্রান্ত থিওরি। মুসমানরা চাকরি ও উন্নত জীবনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে ছুটে চলেছে । ধর্ম-কর্ম সাথে আসছে। ধর্মীয় দিক থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা অভিবাসী হচ্ছেনা। তাই মুসলিম-অমুসলিম, বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকল ধর্ম বর্ণের মানুষকে একীভূত হয়ে এই ঘৃণার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই স্থানীয় সময় বেলা ১১টার দিকে যুক্তরাজ্যের সাউথপোর্টের একটি হলে নাচের কর্মশালায় ছুরি হামলার ঘটনা ঘটে । এ ঘটনায় তিন শিশু নিহতের পাশাপাশি আহত হয় আরও সাতজন। এই হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে যে, হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন উগ্র ইসলামপন্থি অভিবাসী। অথচ ওই ব্যক্তি মুসলিম ছিলেন না । এরপর ৩০ জুলাই স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ শুরু করেন । অভিবাসন-বিরোধী স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা । সাউথপোর্টে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে । অনেক স্থানে ভাঙচুর এবং লুটপাটের খবরও পাওয়া যায়। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কা দেখা দেয় জনগণের মাঝে । যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ প্রায় ৭ শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৬২জনকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় ।