মির্জা আবুল কাসেম :
অক্সফোর্ডের একটি গবেষণার অনুসন্ধানী তথ্যমতে বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র।
গত ১১ জুলাই ২০২৪, জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জনসংখ্যা সম্ভাবনা ২০২৪’ প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৮২০ কোটি।
এরিমধ্যে বিশ্বে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি মানুষ অতি দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করছেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই যুদ্ধ-দ্বন্দ্ব লেগে থাকা দেশের বাসিন্দা।
গত ১৭ অক্টোবর ২০২৪, এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা (ইউএনডিপি)।
বিশ্বের ১১২টি দেশের ৬৩০ কোটি মানুষের উপর যৌথ গবেষণা চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে। যারমধ্যে ৪৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ‘দ্বন্দ্বের ছায়ার মধ্যে’ বসবাস করছেন।
এছাড়া এই গবেষণায় উঠে এসেছে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের বাস ভারতে। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের মধ্যে ২৩ কোটি ৪০ লাখই অতি দরিদ্র।
এরপর যথাক্রমে রয়েছে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া এবং কঙ্গো। ভারতসহ এই পাঁচটি দেশেই ১১০ কোটি গরিবের অর্ধেক মানুষ বাস করেন।
জাতিসংঘের এই সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বে প্রায় ৫৮ কোটি ৪০ লাখ শিশু দারিদ্রতার মধ্যে রয়েছে। যা বিশ্বের মোট শিশুর ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অপরদিকে বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ গরিব।
আর যেসব দেশে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে আছে সেসব দেশে শিশু মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। যেখানে শান্তিপূর্ণ দেশগুলোতে শিশু মৃত্যুর হার ১ দশমিক ১ শতাংশ।
অক্সফোর্ড দরিদ্র এবং মানব উন্নয়ন উদ্যোগ (ওপিএইচআই) নামের আরেকটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণা চালিয়েছে ইউএনডিপি।
দারিদ্রতার নির্ণায়ক হিসেবে অপর্যাপ্ত বাসস্থান, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ, ভোজ্যতেল, পুষ্টি এবং স্কুলে যাওয়ার বিষয়টিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এগুলো যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষ অতি দরিদ্র। সূত্র: আলজাজিরা
লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসেও দারিদ্রতায় নিমজ্জিত সাধারণ মানুষের দেখা মেলে : এরকম সমস্যা হলো — অপর্যাপ্ত বাসস্থান, খাদ্য ও অন্যান্য সমস্যাগুলোর দিকে আলোকপাত করলেও দেখা যায় বিশ্বের আধুনিক ও উন্নত শহরগুলোতে অতি দরিদ্র মানুষগুলোর দেখা সহজেই মেলে।
তেমনি সম্প্রতি লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল এরিয়ার রাস্তার কাছে একটি ক্লথ ব্যাংকের পাশে একজন বৃদ্ধলোককে কাপড় খুঁজতে বা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি বললেন তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থ নেই গরম কাপড় কেনার মতো, তাই তিনি এভাবে খুঁজে নিচ্ছেন।
গত ২০ অক্টোবর রাত ১২.০১ মিনিটের সময় টাওয়ার হ্যামলেটের কমাশিয়াল রোডের পাশে একটি টেকওয়ের সামনে দিকে যাচ্ছিলাম তখন দেখা গেল সেখানে পরিত্যক্ত ময়লা ব্যাগ থেকে কিছু একটা সংগ্রহ করছেন একজন যুবক । জিজ্ঞেস করি— হোয়াট আর ইউ ডোয়িং হিয়ার? হি সেইজ আই এ্যাম হাঙ্গরি । এটি হলো আধুনিক শহরের বাস্তব দৃশ্য। এই রকম দরিদ্রতার পেছনে অনেক কাহিনী লুকিয়ে আছে, বাস্তবতাও আছে।
টাওয়ার হ্যামলেটসের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও বাস্তবতা নিয়ে গবেষক আনসার আহমদ উল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে জগন্নাথপুর টাইমসকে বলেন, আমি গুগলে একটি অনুসন্ধানী তথ্যে দেখেছি -টাওয়ার হ্যামলেটের ভাড়া সবচেয়ে খারাপ আয় বঞ্চনা, আবাসন ও পরিষেবা এবং অপরাধ দমনে বাধা, এই পরিমাপের উপর এবং লন্ডনে সর্বোচ্চ। উভয় শিশু ৩৯শতাংশ এবং বয়স্ক মানুষ ৫০শতাংশ ইংল্যান্ডে আয় বঞ্চিত পরিবারে বসবাস করে।
হ্যাঁ টাওয়ার হ্যামলেটসেও অনেক মানুষ অতি দরিদ্র। দরিদ্র মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের এথেকে পরিত্রান খুঁজতে হবে এখনই।
অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক, টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দা অধ্যাপক সাজিদুর রহমান বলেন – বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ উদ্বিগ্ন। ব্রিটেনে চরম ব্যয়বৃদ্ধি, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী মহল, সকলেই আতঙ্কিত। যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে। অতি দারিদ্র মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি হতে চলেছে।
লন্ডনের তরুণ সাংবাদিক ও কমিউনিটি এক্টিভিস্ট জুবায়ের আহমদ বলেন— খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে জ্বালানি, সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ মাসিক ব্যয়ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা প্রতিদিনই নতুন করে চাপে পড়ছে। সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তব সুফল দিতে পারেনি। সরকারকে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিতে হবে।
এজন্য স্থানীয় কাউন্সিলকে বাসিন্দাদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার পাশাপশি কাউন্সিল ট্যাক্স, ভ্যাট মওকুফ করা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ফান্ডিং এর মাধ্যমে সহযোগিতা করলে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করাসহ স্থানীয়দের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে ।