শোকাবহ জেলহত্যা দিবসে জাতীয় চার নক্ষত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি-
মকিস মনসুর :
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ও ৩রা নভেম্বর প্রতিবছর আমাদের শোকাবহ স্মৃতিকে আরো শোকার্ত করে তোলে। বাংলার আকাশ-বাতাস মাটি ও স্বাধীনতাকামী মানুষ এ বিষাদ স্মৃতি কোনোদিন ভুলতে পারবে না। যে কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত অর্জনের পথে বাধা তৈরি করেছে, তার মধ্যে অন্যতমটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের এই দিনে।কিছু কিছু হত্যাকাণ্ড জাতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে “জেল হত্যা’ সেইরকমই একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা পর চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগষ্ট জাতির জনককে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে যে কলংকময় অধ্যায় এর সূচণা করছিলো সেই ঘাতকচক্র বাঙালী জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ জাতির চার মহান সন্তানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করে জাতির ইতিহাসে দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায়ের জন্ম দেয়। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় এমন জঘন্য,কলঙ্কিত,হৃদয়বিদারক নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকান্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। স্বাধীন বাংলাদেশের যে কয়টি দিন চিরকাল কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, তার একটি ৩ নভেম্বর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, একনিষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহচর,মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতা বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমেদ. সৈয়দ নজরুল ইসলাম.ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী. ও ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান ছিলেন৷
জাতির চার উজ্জ্বল নক্ষত্র. যারা বারবার জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারারুদ্ধ থাকাকালে বা তাঁর অবর্তমানে ও নিদর্শিত পথে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী অন্যতম পরিচালক হিসাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় চার নেতাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অপূর্ব দক্ষতার সাথে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার পরিচালনা করেন ও বিজয় ছিনিয়ে আনেন।
’৭১-এর ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠন করে, সেই পরিষদে ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অনুমোদন করে তারই ভিত্তিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠন করেন। প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং উপ-রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করেন এবং পরম নিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ দান ও দু ‘লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর আমরা পেয়েছিলাম বিজয়ের লাল বৃত্ত সবুজ পতাকা তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এখানে উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচাইতে ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করেন। এ কাজের জন্য তারা আগে ভাগে একটি ঘাতক দলও গঠন করে। এ দলের প্রধান ছিল রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন। সে ছিল ফারুকের সবচেয়ে আস্থাভাজন অফিসার। ১৫ আগস্ট শেখ মনির বাসভবনে যে ঘাতক দলটি হত্যাযঞ্জ চালায় সেই দলটির নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলেহ উদ্দিন।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক অ্যান্থ’নী মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরেই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমন ভাবে নেয়া হয়েছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে যাতে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়।
এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে কোন নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে।
পচাঁত্তরের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জাতির জনককে তাঁর ঐতিহাসিক ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের সমধিক পরিচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ একটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর অপর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এএইচএম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গোলাম মুরশিদ তার ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে’ লিখেছেন মোশতাক জেল হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন কেবল ফারুক আর রশিদকে নিয়ে। তিনি ঠিক করেছিলেন, যে কোন পাল্টা অভ্যুত্থান হলে কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী এবং কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হবে। যাতে নতুন সরকার গঠিত হলেও এই নেতারা তাতে নেতৃত্ব দিতে না পারেন।
অন্যদিকে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা হত্যার তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল লন্ডনে।
এসব হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে সমস্ত কারণ বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলোর তদন্ত করার জন্য ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্তকমিশন গঠন করা হয়। তবে, সেই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের অসহযোগিতার কারণে এবং কমিশনের একজন সদস্যকে ভিসা প্রদান না করায় এ উদ্যোগটি সফল হতে পারেনি। সে সময়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।
অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডুকমেন্টস’ গ্রন্থে এই কমিশন গঠনের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা, মনসুর আলীর পুত্র মোহাম্মদ সেলিম এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ. সি. এমপি’র নেতৃত্বে এই কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময় বাংলাদেশ ও বিদেশে অনুষ্ঠিত জনসভাসমূহে এ আবেদনটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছিল।
জেল হত্যা দিবসের এই শোকাবহ বিশেষ দিনে প্রতিটি বাঙালীর কাছে অনুরোধ আমরা যেন ত্যাগের ইতিহাস ভুলে না যাই। ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহত্তর স্বার্থকে যেন জলাঞ্জলি না দেই। আমাদের মনে রাখতে হবে খুনী মোশতাক এবং খুনী জিয়া চক্র বাংলাদেশকে আবার পাকিন্তান বানানোর লক্ষ্যে ও জাতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে দেওয়া মানসে ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ও ৩ রা নভেম্বরে জেলের অভ্যন্তরে জাতীয় চারনেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। ৭৫-এর পর থেকে বছরের পর বছর বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা চলে। বঙ্গবন্ধু ও জেল হত্যাকান্ডের নেপথ্যের কুশীলব হিসেবে জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জড়িত থাকার প্রমাণ আত্মস্বীকৃত ঘাতকদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে।
জেল হত্যাকান্ডের পর ওই সময়ই লালবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর এ হত্যাকান্ডের তদন্ত ও বিচার-প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার জেলহত্যা মামলার প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে। এর পর দীর্ঘ পরিক্রমায় জেল হত্যা মামলার রায় হয়েছে। আজ ও স্বাধীনতা বিরোধীরা ও স্বাধীনতার শত্রুরা ও খুনী মোস্তাক জিয়ার উত্তরসুরীরা এখন ও নানাভাবে চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
এদিকে বর্তমান অবৈধ-অসাংবিধানিক সরকার কর্তৃক ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, ১৭ই মার্চ, ১৫ই আগস্ট ও ৪ঠা নভেম্বর সহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে, বাঙালি জাতির সকল সংগ্রামের সারথি বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অর্পিত প্রজ্ঞাপন এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে দেশে বিদেশে চলছে প্রতিবাদ, সভা- সমাবেশ। এই সব সভায় বক্তারা
বলেছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ অত্যন্ত কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অসাংবিধানিক সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে নির্বিচারে মানুষ হত্যার মহোৎসব চলছে, যা গণহত্যার শামিল। নির্বিঘ্নে মানুষের বাসা-বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই চলছে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে সমগ্র জাতিকে একটা চরম সংকটে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল মানুষ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকলের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সারা দেশে চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা চলছে। একদিকে অপরাধী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিচ্ছে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাছ-বিচার হীনভাবে গণহারে গ্রেফতার করে দিনের পর দিন আটক করে রাখা হচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর এমনই প্রতিকূল সময় এসেছিল বাংলাদেশে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আদর্শের প্রতি আপসহীন মানুষেরা তারপরও মাথানত করেনি। আমাদের জাতীয় ৪ নেতা এই পথের প্রদর্শক। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তাঁরা ছিলেন হিমালয়ের মতো অনঢ়। মৃত্যুভয়ও তাঁদের টলাতে পারেনি। তাই তাঁরা জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠা বোধ করেননি। আজ দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে লগ্নে জাতীয় ৪ নেতা আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হিসেবে ধরা দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তাদের নিরাপস মনোভাব আমাদের জন্য চিরস্মরণীয় ও অনুকরণীয়। তাঁদের আত্মত্যাগ যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের চেতনার শিখাকে প্রজ্জ্বলিত রাখতে জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে।
“জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রেরিত বিবৃতি এই লেখার সাথে তুলে ধরছি, ৩রা নভেম্বর, জেলহত্যা দিবস। আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দ্বিতীয় কলঙ্কজনক অধ্যায় ৩রা নভেম্বর। আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাত্র তিনমাসের মধ্যে এইদিনে জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে এইদিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কারাগারের অভ্যন্তরে এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমি জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় চারনেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও দেশবিরোধি চক্র বাংলার মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল রাজনীতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। ’৭৫-এর সেই ষড়যন্ত্রকারী ও হত্যাকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদদাতারা বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেও রক্ষা করতে পারেনি। হত্যাকারীদের বিচারের বদলে দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে এবং রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে।
স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বরাবরই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা ব্যাহত করতে এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে বারবার হামলা করেছে। কিন্তু দিনশেষে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি এবং ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির যে কোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকবে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ধারা সমুন্নত রাখবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় চারনেতার জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।
আজকের অবরুদ্ধ বাংলাদেশ কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, শোক পালনের অধিকার নেই। পঁচাত্তরের পরেও কুচক্রিমহল একই পরিবেশ তৈরি করেছিল। আজ প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিল? ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো, সময়ের পরিক্রমায় একদিন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের চেতনা চির জাগরূক থাকবে এবং জাতীয় চারনেতার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। শহীদ জাতীয় চারনেতার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
এখানে উল্লেখ্য যে, জাতির চার উজ্জ্বল নক্ষত্র.জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর ছিলেন তাঁদের আত্মার আত্মীয়।
আসুন বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নক্ষত্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে , উনাদের আত্মত্যাগের মত আসুনকায়েমী স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রকারীদের সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরে আনার মাধ্যমে আমাদের প্রাণের বাংলাদেশকে নিয়ে যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে তাহা মোকাবিলা করতে হবে এই হোক আমদের সবার দীপ্ত শপথ, জয় বাংলা. জয় বঙ্গবন্ধু. জয় শেখ হাসিনা. বাংলাদেশ চিরজীবী হোক. জয় হোক মানবতার।
**
লেখক ও সাংবাদিক,
মোহাম্মদ মকিস মনসুর,
৩রা নভেম্বর ২০২৪ ইংরেজি,
চেয়ারম্যান, ইউকে বিডি টিভি
জগন্নাথপুর টাইমস —
পুনশ্চ- মতামত বিভাগে লেখার যেকোন দায় লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। সম্পাদনা পরিষদ এরজন্য দায়ী নয় ।