সাজিদুর রহমান,
অনলাইন ডেস্কঃ বাংলাদেশ আগামী দুই বছরের জন্য অর্থনৈতিক তিনটি ঝুঁকিতে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্য। এ তিন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে চরম অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
রোববার (১৭ নভেম্বর) ঢাকায় মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার: অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা’ শীর্ষক একটি সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন।
সংলাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার (উপদেষ্টা) আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক লুৎফে সিদ্দিকী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আর সংলাপটি সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলী শামীম এহসান, ডিসিসিআই’র সভাপতি আশরাফ আহমেদ ও বিটিএমএ’র সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী ২ বছরের জন্য সামাজিক ঝুঁকি বিবেচনায় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে রয়েছে- বেকারত্ব, জ্বালানি ঘাটতি, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিকস রোগের প্রাদুর্ভাব অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা এবং সামজিক অবক্ষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ডুয়িং ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- দুর্নীতি, আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নীতির অস্থিতিশীলতা, দুর্বল শ্রমশক্তি, শিক্ষিত শ্রমশক্তির অপ্রতুলতা, উচ্চ কর হার, ট্যাক্স প্রবিধানের জটিলতা, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরাধ এবং চুরি, উদ্ভাবনের জন্য অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঝুঁকিপূর্ণ জনস্বাস্থ্য এবং শ্রমনীতির সীমাবদ্ধতা।
এ বিষয়ে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা মনে করি দুর্নীতি সর্বদাই প্রধান সমস্যা। যদিও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অদক্ষ আমলাতন্ত্র আর একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। মুদ্রাস্ফীতি সব সময় বড় চিন্তার কারণ। অন্যদিকে নীতির অস্থিতিশীলতা একটি মাঝারি স্তরের সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি। দুর্নীতি থেকেই মূল সমস্যা শুরু হয়। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ঘুষের ওপর ঘুষ চলে। বিশেষ করে করের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। এনবিআরকে ভিন্ন ভিন্ন পলিসি দিয়ে দুর্নীতি কমানো সম্ভব। এ বিষয়ে আর একটি প্রোগ্রাম করা যেতে পারে। দুর্নীতি কমানোর জন্য সৎ মানুষ থাকলেই হবে না। সততার পাশাপাশি ইতিবাচক মানসিকতা জরুরি।
সংলাপে আরও বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা, দুর্নীতি, প্রবৃদ্ধির হিসাবে গরমিলের কারণে অর্থনীতিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।