গোবিন্দ দেব, অতিথি প্রতিবেদক, জগন্নাথপুর টাইমস :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি গ্রামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী কর্তৃক একের পর এক মামলা ও হুমকি ধমকির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন টমটম চালক আহমদ আলী।
গত ৯ বছরে হুমকির পাশাপাশি ১৬টি মামলার সম্মুখীন তিনি। মামলা ও হুমকির ভয়ে ৮ সদস্যের পরিবারের আয় রোজগারের উপার্জনক্ষম ওই ব্যক্তি বর্তমানে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছেন না। মামলা-মকদ্দমা চালাতে গিয়ে আহমদ আলী কয়েক লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্ত । উপায়ন্তর না পেয়ে ইতোমধ্যে তিনি জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এমন কি তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি ও প্রভাবশালীদের রোষানল থেকে রেহাই দিতে সম্পতি মানববন্ধন করেছে ইজিবাই মালিক ও শ্রমিক সমিতি।
টমটম চালক আহমদ আলী জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি মৌজায় আমার বাবার নামে ৩৩ শতাংশ বাড়ি রকম ভূমি রয়েছে। তার বাবা মরহুম ধন মিয়া জীবিত থাকাকালিন ১৯৮০ সালে আমার চাচী মালা বিবির নিকট ২২ শতাংশ ভূমি সাফ কাবালা মূলে বিক্রি করেন। কিন্তু এরপর থেকে আমার চাচী ওই ৩৩ শতাংশ ভূমি দখলে নিয়ে তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে ভোগদখল করে আসছেন। বিষয়টি জানার পর চাচীকে বললে তিনি কোনো সদুত্তর না দেওয়ায় গ্রামবাসীকে নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসেন। সালিশে তার প্রাপ্য জায়গা ১১ শতাংশের দখল ফিরে পেলেও তাদের নামে রেকর্ড রয়ে যায়। এতে সুনামগঞ্জ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুানালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যা বর্তমানে বিচারাধীন।
তিনি জানান এরপর থেকে তার উপর একের পর এক নানা অভিযোগ ও মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা শুরু হয়। মাত্র ১১ শতাংশ ভূমির জন্য তার মতো একজন টমটম চালক-কে গত ৯ বছরে ১৬টি মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ ও মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসব হয়রানিমূলক অভিযোগ ও মামলা চালাতে গিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।
তিনি বলেন, স্ত্রী সন্তান সহ আমার আট সদস্যের পরিবারের একমাত্র ভরণপোষণকারী। ওই জমিকে কেন্দ্র করে তার চাচী মালা বিবি গংদের মামলার কারণে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মেজর পরিচয় দিয়ে মুহিব খান নামের জনৈক ব্যক্তি প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে, এতে ভয়ে বাড়ি ছাড়া।
সর্বশেষ চলিত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চাচাত ভাই লন্ডন প্রবাসী রফিক আলীর স্ত্রী প্রবাসী সুমাইয়া ইসরাত বাদী হয়ে তিনি ও তার ভাতিজা আব্দুল সাহারের বিরুদ্ধে ২১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। উক্ত এজাহারে আহমদ আলীর বিরুদ্ধে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৬ লক্ষ টাকা রূপালি ব্যাংক পিন নাম্বার ৩১২৪৪৪৫৫৬৬৭০১সি- এর কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু উক্ত টাকা উত্তোলন হয়নি। তবে অপর ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ২০২৩ সালে দেওয়া হয়েছিল। যা তাঁহার কথা মতো সেলিমকে ঘর তৈরি বাবদ ৪০ হাজার, সেলিনা বেগমকে ২৫ হাজার এবং আহমদ আলীর ঘর তৈরির জন্য ৪৫ হাজার টাকা সাহায্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয় আর বাকি ২০ হাজার টাকা উনার কথা মতো গরিব অসহায়দের মধ্যে বাজার-সদাই করে দেওয়া হয।। বর্তমানে ওই মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে।
ভুক্তভোগি ওই টমটম চালক আহমদ আলী প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বাদী পক্ষের যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত ৩০ এর অধিক প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা তার ওই ১১ শতাংশ জায়গার জন্য মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা মোকদ্দমার অভিযোগ দিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানি করে আসছেন। এসব মিথ্যা মামলা মকদ্দমা চালাতে গিয়ে আহমদ আলী ও সাহার কয়েক লক্ষ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের হুমকিদামকি হয়রানিতে মেজর পরিচয় নামধারী মুহিব খান। পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এদিকে, তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে সম্প্রতি জগন্নাথপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন আহমদ আলী ও তার স্বজনরা। এছাড়া প্রবাসী সুমাইয়া ইসরাত কর্তৃক মামলার কারণে শ্রীরামসি রাস্তার মুখে মানবন্ধন করেছে একতা ইজিবাই মালিক ও শ্রমিক সমিতি।
প্রবাসীর সুমাইয়া ইসরাত এর পক্ষে আমমোক্তার খালেদ আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমার বাড়ি সিলেটেরওসমানী নগর থানায়, মামলার সকল ঘটনা কাগজ না দেখে বলতে পারবো না।
অভিযোগকারী প্রবাসী সুমাইয়া ইসরাতের সাথে মুঠোফোনে যুক্তরাজ্যে যোগাযোগ করলে গণমাধ্যমকর্মীদের আমি বক্তব্য দিতে বাধ্য নয় বলে ফোন কেটে দেন।
জগন্নাথপুর থানার এ এস আই রায়হান উদ্দিন বলেন, পিবিআই থেকে আহমদ আলীর চরিত্র প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আসে। আমি তদন্ত করে প্রতিবেদনটি পাঠাবো।