শামীম আশরাফ, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্কঃ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে “বিশ্বায়নে নজরুল সাহিত্য” শীর্ষক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নবগঠিত “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কালচারাল সেন্টার ইউকে”। ১৫ জুন রবিবার পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি আর্টস সেন্টারে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের স্পিকার সুলুক আহমেদ ও লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের। অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট শাহ আলম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুহিব চৌধুরী, প্রফেসর মুসাদ্দিক হোসেন, শরীফুজ্জান চৌধুরী তপন প্রমুখ।
সংগঠনের আহ্বায়ক এমাদুর রহমান এমাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শিবলু রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের আকাশে ধ্রুবতারা। তার কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্পে বাঙালি জেনেছে বীরত্বের ভাষা, দ্রোহের মন্ত্র। বাঙালির সব আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে আছেন চিরবিদ্রোহী এ কবি। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান। কবি নজরুল তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছেন। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক। তিনি জুলাই গণঅভ্যুথ্থান ও বিপ্লবেও ভূমিকা রেখেছেন। তার গান ও কবিতা জুলাই বিপ্লবীদের প্রেরণা যুগিয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখনীর আবেদন চিরদিন নির্যাতিত মানুষকে প্রেরণা জোগাবে। তার কবিতা ও গানে ভালোবাসা, মানবতা ও সাম্যের বাণী বিধৃত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে নজরুলের সাহিত্য ও তার চেতনাকে বিশ্বব্যাপী লালনের মাধ্যমে এবং প্রবাসের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ হাইকমিশন ও টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং কমিউনিটির মানুষের মিলিত প্রয়াসে নজরুলের সাহিত্য কর্মের ওপর একযোগে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে কিশোয়ার মুনিয়ার উপস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন সঙ্গীত শিল্পী আলাউর রহমান, সাদিয়া আফরোজ,কাওছার হাবিব,বাপিতা রায়, পুনম ঘোষ, তাহমিনা শিপু, আরাত রনি, একে আজাদ, তানভির কাদের, ফারুকী মিজান, আবু শহীদ রুমান, তামিম আহমেদ পিয়াস বড়ুয়া, সম্রাট, মৃদুল, আরোয়া রশিদ ও নৃত্য পরিবেশন করেন সুপ্তি ও তার দল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবদুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, সাংবাদিক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন, ইকুয়্যাল রাইটস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর, সাংবাদিক আলাউর রহমান খান শাহীন, সাংবাদিক মুহাম্মদ মাসুদুজ্জামান, সাংবাদিক রেজাউল করিম মৃধা, তাজুল ইসলাম, কাজী দিলোয়ার, সোহেল আহমেদ সাদিক, মিছবাহুজ্জামান সোহেল, অধ্যাপক মহসিন আকবরী, মোঃ আরিফ আহমেদ, কামরুজ্জামান চৌধুরী, কামাল খান ও মোঃ মাহি প্রমুখ।
উল্লেখ্য, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। তিনি প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও বেশির ভাগই সুরারোপ করেছেন- যেগুলো নজরুলসংগীত নামে পরিচিত। তার ডাকনাম দুখু মিয়া। তিনি মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯০৮ সালে পিতৃহারা হন। এক সময় গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন। অল্প বয়স থেকেই তিনি সংগীত রচনা শুরু করেন। ১৯১৭ সালের শেষভাগ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত কর্মজীবনের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক করপোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদারের পদে উন্নীত হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু করেন। ১৯২২ সালে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটির মধ্য দিয়ে সাড়া ফেলেন। একই বছর ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় ও একইদিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে নেওয়া হয় কলকাতায়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে জবানবন্দি দেন। তার এ জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। কাজী নজরুল ইসলাম মধ্যবয়সে পিকস্ ডিজিজে আক্রান্ত হন ও বাকশক্তি হারান। ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি