কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা :
বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে স্মরণকালের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের ১৯৬ তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপমহাদেশের বৃহত্তম এ শোলাকিয়া ঈদের জামাতের মোনাজাতের সময় আমিন, আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আশপাশের এলাকা।
বরাবরের মতো এবারো মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে সকাল-দুপুর আসা-যাওয়া করে দুটি স্পেশাল ট্রেন।
সব প্রকার রোগ-বালাই ও অশান্তি থেকে মুক্তিসহ জাতীয় অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করে এ ঐতিহাসিক জামাতে মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ কর্তৃক রেওয়াজ অনুযায়ী ১০ মিনিট পূর্বে শটগানের গুলি ছুঁড়ে সঙ্কেত জানানোর মাধ্যমে জামাতের সূচনা হয়।
বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রসিদ্ধ কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানটিতে প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে এবারের এ ঈদুল ফিতরের জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি পাঁচ লাখও ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ইসলামের ঐশী প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইয়ামেন থেকে এদেশে আগত স্থানীয় সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ আধ্যাত্মিক সাধক সূফী সৈয়দ আহমেদ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে এ ঈদগাহ ময়দানটি প্রতিষ্ঠা করেন।
কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে নরসুন্দা নদীর পাড়ে ইসলামের ঐশী বাণী ও ধর্ম প্রচারক কর্তৃক এমন বিশাল ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠার খবর এক সময় চারদিকে এমনকি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই প্রতি বছরই গাণিতিক হারে বাড়তে থাকে এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানের মুসল্লিদের সংখ্যা।
কথিত আছে, ঈদগাহ ময়দানের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মপ্রচারক আধ্যাত্মিক সাধক নিজেই ঈদের জামাতে ইমামতি করতেন। তার ইমামতিতে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গুণে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মিলে।
তখন থেকে এ ঈদগাহ ময়দানটিকে সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবে লোকজন ডাকতে শুরু করেন।
পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই এ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসতে থাকেন।
এবার এ ঈদগাহ ময়দানের ১৯৬ তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। আর এ জামাতে সমাগত লাখ-লাখ মুসল্লির সঙ্গে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এমএ আফজলসহ শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য লোকজনও অংশ নেন।