নিউজ ডেস্ক :
শিল্পকলায় দ্বিজেন্দ্র লাল রায়-খন্দকার নুরুল আলম স্মরণ, দুই গুণীর সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণের দাবি ।
কবি দ্বিজেন্দ্র লাল রায় এর নাম বললেই ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ কবিতাটির কথা মাথায় আসে। তিনি কেবলমাত্র কবিই ছিলেন না, ছিলেন একজন মহান বাঙালি নাট্যকার, লেখক, সমাজসেবী ও অভিনয়শিল্পী। একটি জমিদার বাঙালি নীল-রক্ত পরিবার থেকে আসা সত্ত্বেও, তিনি ১৮৯০ সালে প্রশাসনের কাজ করার সময় শ্রমিক শ্রেণির অধিকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে তৎকালীন বাংলার গভর্নরের সঙ্গে বিরোধের জড়িয়ে পড়েন।
তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, যদিও তিনি ব্রিটিশ রাজের সময় কাজ করছিলেন। তিনি একটি স্বাধীন ভারত দেখতে চেয়েছিলেন। তারপরও ব্রিটিশ ও ভারতীয় উভয় জাতির মধ্যে পছন্দের ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে বিবেচিত হন তিনি।
বরেণ্য এই বাঙালিকে নিয়ে সোমবার (২২ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তনে ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে বাংলাদেশের বরেণ্যে শিল্পী সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞদের নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনে এক স্মরণ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি, সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার খন্দকার নুরুল আলমকেও স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সঙ্গীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ নাসরিন ইলা ও খন্দকার নূরুল আলম স্মরণে মূল প্রবন্ধউপস্থাপন করেন সরকারি সংগীত কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. কমল খালিদ।
আলোচক ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন ও পরিকল্পনা) মো. শামীম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের প্রভাষক মেহফুজ আল ফাহাদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রাজীব কুমার সরকার। আলোচনায় বক্তারা বলেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুরোনো গান যেগুলো রেকর্ড করা আছে সেগুলোর স্বরলিপি করা হলে তা সংরক্ষিত থাকবে। এছাড়া হাসির গানগুলো সংরক্ষণ করা হলে তরুণ প্রজন্ম আগ্রহ নিয়ে গাইবে। বক্তারা বলেন, গানের মধ্যে প্রবল হাস্যরসের মাধ্যমেও যে বার্তা দেয়া যায় তা সৃষ্টি করেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়। তিনি গেয়েছেন- ‘এমন চাঁদের আলো মরি যদি সেও ভালো’। এসব সুর সংরক্ষণে তিনি কিছুটা উদাসীন ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। বক্তারা দুই গুণীর সৃষ্টিকর্ম সংরক্ষণের দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব সালাউদ্দিন আহাম্মাদ বলেন- এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। বরাবরই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এসব গুণী মানুষদের সৃষ্টি করা গান, নাটক ও সাহিত্য চর্চা এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। মুলত পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ও সৃষ্টিকর্ম তুলে ধরাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মরণে শুরুতেই সংগীত পরিবেশন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান পরিবেশন করেন ‘সে কেন দেখা দিলো’ ও ‘আজি নুতন রতনে’ গান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী অধ্যাপক ও সংগীতশিল্পী ড.অণিমা রায় পরিবেশন করেন ‘ধন ধান্য পুস্প ভরা’ ও ‘আজি এসেছি এসেছি’ গান। আফরোজা খান মিতা পরিবেশন করেন ‘মম মনের বিজনে’ ও আজি তোমার কাছে ভাসিয়া যায়’ ও হিমাদ্রী রায় পরিবেশন করেন ‘বেলা বয়ে যায়’ গান।
খন্দকার নুরুল আলম স্মরণে শিল্পী স্বরলিপি পরিবেশন করেন ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’; সাবরিনা নওশিন টুশি পরিবেশন করেন ‘জনম জনম গেল; ও ‘ওই রাত জাগে (ডুয়েট গান); এমএ মোমিন পরিবশেন করেন ‘তুমি এমন জাল পেতেছো সংসারে’ ও ‘এ আঁধার কখনও যাবে না মুছে’ এবং শিল্পী সোহনুর রহমান সোহানের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ ও ‘ওই রাত জাগে (ডুয়েট বা দ্বৈত গান)। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইমামুর রশিদ ও আযহারুল ইসলাম রনি।