প্রাণ দেহ থেকে বের করে না ঠিক, কিন্তু আত্মাকে গোপনে মেরে ফেলে। কর্মে অবসাদ নিয়ে আসে। সব কিছুতে শূন্যতা ও একাকিত্ব অনুভব হয়। নেক আমলের নূর চলে যায়।
গোপন অপরাধ :
গোপন ইবাদত যেমন আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়, তেমনি গোপন অপরাধ আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ।
গোপন গুনাহর পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বলেন, তারা তোমাদের ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে লিপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ : ২/১৪১৮)
দৃষ্টি সংযত না রাখা :
অন্তরের নূর চলে যাওয়া ও অন্তর কলুষিত হওয়ার একটি কারণ হলো দৃষ্টি অবনত না করা। বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করলে শয়তান অন্তরে কুমন্ত্রণা সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে বড় গুনাহের দিকে যায়। এমনকি জিনার প্রতি প্রলুব্ধ করতে থাকে। এ জন্যই নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত তীর থেকে একটি তীর।’ (মুসনাদে আশ-শিহাব ১/১৯৫)
এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে নজর হেফাজত করতে হবে। অন্যথায় অগণিত নেক আমল করা সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। রাসুল (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমরা দৃষ্টিকে নত করো, নিয়ন্ত্রণ করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো। (তাবরানি, হাদিস : ৮০১৮)
পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্তি :
এটিও গোপন গুনাহের একটি ধরন। চোখের খেয়ানতই হলো এই আসক্তির মূল কারণ। আত্মাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলে এটি। লাখ লাখ তরুণ-তরুণী এর ভয়াল থাবায় আক্রান্ত। অনেকে চেষ্টা করেও বের হতে পারছে না। মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে এটি গ্রাম-গঞ্জেও। এর প্রতিক্রিয়া এতটাই ভয়াবহ যে দাম্পত্যজীবন নষ্ট করার পেছনেও এর প্রভাব বিদ্যমান। বিয়ের পরও অনেকে এর আসক্তি থেকে বের হতে পারছে না। ভেবে দেখেছেন, এই পর্নোগ্রাফি কতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে? অনেকে অজান্তেই নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
সমাজে অধিক হারে ধর্ষণের জন্য এই পর্নোগ্রাফি দায়ী। অথচ এটি চোখের জিনার অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে এসেছে, নিঃসন্দেহে দুচোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দুকানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া এবং হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৪৭)
ধ্বংসকারী অপরাধ থেকে মুক্তি লাভের উপায় :
গোপন গুনাহ থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে হয় তার কৌশল নিজেকেই আয়ত্ত করে নিতে হবে। কারো হিম্মতই পারে তাকে এখান থেকে বের করতে। একটু সৎসাহস ও ইচ্ছা থাকলেই আল্লাহ তাআলা উপায় বের করে দেবেন। এ ছাড়া কিছু বিষয় মেনে চলা অপরিহার্য। একাকী থাকা যাবে না। অলস সময় পার না করে যেকোনো ভালো কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’ ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকা চাই। পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে নিজেই প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতে হবে। লজ্জা তো ঈমানের অঙ্গ।
লজ্জাশীলতা বাড়াতে হবে। সৎ ও নেককার বন্ধুদের সঙ্গে চলতে হবে। হক্কানি আলেমদের সংস্রবে আসতে হবে। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিয়ের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বোঝার ও আমল করার তাওফিক দান করুন। যুবক ভাইদের বিয়েকে সহজ করে দিন, আমিন।
লেখক : এম কাউছার হামিদ পরিচালক, দারুস সুন্নাহ মডেল মাদরাসা, খিলক্ষেত, ঢাকা