রিয়াজ রহমান :
বাংলা লোকসংগীতের পুরোধা লোককবি রাধারমণ দত্ত। তার রচিত ধামাইল গানের জন্য সিলেট ও ভারতের বাঙ্গালীদের কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। রাধারমণ নিজের মেধা ও দর্শনকে কাজে লাগিয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছেন তিনি। ধামাইল গানের জনক বৈঞ্চব কবি রাধারমন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের কেশবপুর এলাকায় রাধারমণ দত্তের জন্মস্থান, সমাধিস্থল, রাধারমণ কমপ্লেক্স এর নির্দিষ্ট স্থান পরিদর্শন করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সচিব সত্যজিত কর্মকার।
শনিবার (৯সেপ্টেম্বর) পরিদর্শনকালে তিনি রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজের আশ্বাস প্রদান করেন। পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের সচিবের এমন আশ্বাসে রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী আনন্দিত হয়েছেন।
এসময় জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: সাজেদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভুমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভুইয়া, রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি জিলু মিয়া, সহ-সভাপতি আছকির আলী, সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলার তাজিবুর রহমান রহমান, যুগ্ম সম্পাদক রমজান আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন মিয়া, নির্বাহী সদস্য টুনু মিয়া, সদস্য তেরাই মিয়া, তৈয়ব আলী,মখলিছ মিয়া, মিজানুর রহমান সহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
গুনী এ বৈঞ্চব কবি রাধারমণ দত্তকে নতুন প্রজন্মের কাছে স্মরনীয় ও বরনীয় করে রাখতে রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদ গঠন করা হয়। রাধারমণ কমপ্লেক্সটি নির্মিত হলে দেশ বিদেশে অবস্থানরত রাধারমণ ভক্তরা কমপ্লেক্স এ এসে সাংস্কৃতিক চর্চাসহ রাধারমনের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষনা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য রাধারমণ দত্ত, পুরু নাম রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ, (১৮৩৪ – ১৯১৫) একজন বাংলা সাহিত্যিক, সাধক কবি, বৈঞ্চব বাউল, ধামালি নৃত্য-এর প্রবর্তক। সংগীতানুরাগীদের কাছে তিনি রাধারমণ বলেই সমাধিক পরিচিত।
রাধারমন দত্ত দেহতত্ত্ব, ভক্তিমূলক, অনুরাগ, প্রেম, ভজন, ধামাইলসহ নানা ধরনের কয়েক হাজার গান রচনা করেছেন। কবি রাধারমণের পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উপাসনার প্রধান অবলম্বন সংগীতের সংগে তার পরিচয় ছিল শৈশব থেকেই। খ্যাতিমান লোককবি জয়দেবের গীতগৌবিন্দ এর বাংলা অনুবাদ করেছিলেন তার পিতা রাধামাধব দত্ত। পিতার সংগীত ও সাহিত্য সাধনা তাকেও প্রভাবিত করেছিল।১২৫০ বঙ্গাব্দে রাধারমণ পিতৃহারা হন এবং মা সুবর্ণা দেবীর কাছে বড় হতে থাকেন। ১২৭৫ বঙ্গাব্দে মৌলভীবাজারের আদপাশা গ্রামে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দ বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর কন্যা গুণময়ী দেবীকে বিয়ে করেন। পিতার রচিত গ্রন্থ গুলো সে সময় তার জন্য পিতা আদর্শ হয়ে অন্তরে স্থান করে নিল। কালক্রমে তিনি একজন স্বভাবকবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রচনা করেন হাজার হাজার বাউল গান । লিখেছেন কয়েক শ ধামাইল গান। ধামাইল গান সমবেত নারীকন্ঠে বিয়ের অনুষ্ঠানে গীত হয়। বিশেষত সিলেট, কাছাড়, ত্রিপুরা ও ময়মসিংহ অঞ্চলে একসময় এর প্রচলন খুব বেশি ছিল। রাধারমণ দত্ত একাধারে গীতিকার, সুরকার, ও শিল্পী ছিলেন। জানা যায়, সাধক রাধারমণ দত্ত ও মরমি কবি হাসন রাজার মধ্যে যোগাযোগ ছিল। অন্তরের মিল ছিল খুব বেশি। তাদের মধ্য বিভিন্ন সময় পত্রালাপ হতো কবিতায়। একবার হাসন রাজা রাধারমণের কুশল জানতে গানের চরণ বাঁধেন : রাধারমণ তুমি কেমন, হাছন রাজা দেখতে চায়। উত্তরে রাধারমণ লিখেনঃ- কুশল তুমি আছো কেমন – জানতে চায় রাধারমণ। রাধারমণ একজন কৃঞ্চপ্রেমিক ছিলেন। কৃঞ্চবিরহে তিনি লিখেছেন অসংখ গান।