মুহাম্মদ সাজিদুর রহমান,
(অনলাইন ডেস্ক ) :
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ওআইসিকে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সরকার জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের সভায় বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। খবর- বাসস।
রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ছয় বছর ধরে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, জনসংখ্যা এবং পরিবেশের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনে ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রত্যাবাসন ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে রোহিঙ্গা জনগণ হতাশায় ভুগছে এবং ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এটি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সমর্থন কমে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের জন্য রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ৩০ শতাংশ পাওয়া গেছে। ফলে তাদের জন্য খাদ্য রেশন কমে গেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি সদস্য দেশগুলোর মানবিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। ড. মোমেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের মাধ্যমে মিয়ানমারের জবাবদিহির জন্য গাম্বিয়ার উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
কানাডা, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশ এই মামলায় অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সভায় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সভাকে অবহিত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবে ওআইসিকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভা পরিচালনা করেন ওআইসির মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম তাহা। তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, গাম্বিয়া, জিবুতি, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রুনাই ও সেনেগাল আলোচনায় অংশ নেয়।
বাংলাদেশ-সিয়েরা লিওন সম্পর্ক গভীর করতে আগ্রহ প্রকাশ: বাংলাদেশ ও সিয়েরা লিওন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সিয়েরা লিওনের পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী তিমোথি মুসা কাব্বা দু’দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার সম্ভাব্য বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
সিয়েরা লিওনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের কৃষি খাতে সার্বিক উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ সময় এসব খাতে তাঁর দেশের উন্নয়নের জন্য তিনি বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি সিয়েরা লিওনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা বাহিনীর অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাকে সিয়েরা লিওনের অন্যতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সিয়েরা লিওনের জনগণের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের আন্তরিক ভালোবাসা রয়েছে। সিয়েরা লিওনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর দেশে বাংলাদেশের মিশন স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানান। ড. মোমেন সিয়েরা লিওনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলসহ বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান।