নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাংলা একাডেমির ৪৬তম বার্ষিক সভা ও সাম্মানিক ফেলোশিপ, পুরস্কার ২০২৩ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে ।
শনিবার (১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০/২৫শে নভেম্বর ২০২৩)
বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৬তম বার্ষিক সভা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও বাংলা একাডেমির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রয়াত গুণী ব্যক্তিদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং একাডেমির সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মোঃ হাসান কবীর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট অবহিত করেন। একাডেমির সদস্যবৃন্দ বার্ষিক প্রতিবেদন ও বাজেট সম্পর্কে সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন।
মহাপরিচালক সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং উত্থাপিত প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য প্রদান করেন। সভায় ২৩শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৪৫তম বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যবিবরণী সারাদেশ থেকে আগত একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য ও সদস্যদের সম্মতিক্রমে অনুমোদন ঘোষণা করা হয়।
সাধারণ সভার বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে শুরু হয়। তিনি অসুস্থ বোধ করায় সাধারণ সভার পরবর্তী
কার্যক্রমে পর্যায়ক্রমে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির ফেলো ড. নূহ-উল-আলম লেনিন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার।
সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৭ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ ২০২৩ এবং বাংলা একাডেমি পরিচালিত- মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার-২০২৩, অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার-২০২৩, আবু রুশদ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, সাহিত্যিক
মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার-২০২৩, সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ এবং হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হয়।
বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০২৩’প্রাপ্তরা হচ্ছেন : মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু (সাংবাদিকতা), এ কে শেরাম (আদিবাসী গবেষণা), মো. আলম দেওয়ান
(ফোকলোর), তানভীর মোকাম্মেল (চলচ্চিত্র), আক্কু চৌধুরী (মুক্তিযুদ্ধ), ফালগুনী হামিদ (সংস্কৃতি) এবং ডা. হালিদা হানুম আখতার (চিকিৎসাবিজ্ঞান)।
কবি নির্মলেন্দু গুণ ‘মযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কার’-২০২৩, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার’-২০২৩, অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ‘আবু রুশদ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩’, ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ‘মেহের কবীর বিজ্ঞানসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, ড. অনুপম সেন ‘সাহিত্যিক মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩, কবি ওমর কায়সার ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’-২০২৩ এবং ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট : বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান’ গ্রন্থ রচনার জন্য আবদুল গাফফার ‘হালীমা-শরফুদ্দীন বিজ্ঞান পুরস্কার-২০২৩’-এ ভূষিত হয়েছেন।
পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজণদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা তুলে দেন অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। কবি নির্মলেন্দু গুণের পক্ষে তাঁর কন্যা মৃত্তিকা গুণ এবং আক্কু চৌধুরীর পক্ষে রামেন্দু মজুমদার পুরস্কার ও ফেলোশিপ গ্রহণ করেন।
বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক-প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি প্রায় সাত দশক ধরে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বাতিঘর হিসেবে বিশ্ব-দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে গোটা জাতির কাছে তুলে ধরতে আমরা নিবিষ্টভাবে কাজ করে চলেছি।
তিনি বলেন, সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলা একাডেমির ফেলো, জীবনসদস্য এবং সাধারণ সদস্যবৃন্দের প্রদত্ত মতামত ও বক্তব্য ধারণ করে আমরা আগামী দিনের বাংলা একাডেমির রূপরেখা প্রণয়নে কাজ করে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালি জাতিসত্তাকে ধারণ করে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে চলেছে। সাধারণ পরিষদের সভায় সারাদেশ থেকে আগত ফেলো, জীবনসদস্য এবং সাধারণ সদস্যদের মতামত ধারণ করে একাডেমি তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।
সাধারণ সভার কার্যক্রম সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি