মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার বেদীতে ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে শহীদ আলতাব আলী দিবস পালিত হয়েছে ।
রবিবার (৪ঠা মে ২০২৫) সন্ধ্যায় ইস্ট লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাঙালি যুবক শহীদ আলতাব আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাইকমিশন, রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও ব্রিটিশ বাংলাদেশী সচেতন নাগরিকদের উপস্থিতি ও তাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ আলতাব আলী দিবস পালন স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমান শহীদ মিনারে পাশে হার্টলার স্টিটে সত্তরদশকের শেষের দিকে বর্ণবাদী হামলায় নিহত ব্রিটিশ বাংলাদেশী যুবক শহীদ আলতাব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান- টাওয়ার হ্যামলেট্স কাউন্সিলের স্পীকারের অনুপস্থিতিতে ও কাউন্সিলের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেবিনেট মেম্বার আব্দুল ওয়াহিদ।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে প্রেস মিনিস্ট্রার আকবর হুসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর যৌথভাবে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না ও সাবেক স্পিকার, কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর শাফি আহমেদ।
অন্যান্যের মধ্যে আরো শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন আলতাব আলী মেমরিয়াল ট্রাস্ট ও আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের সদস্যবৃন্দ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ও সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ আলতাব আলীর রুহের মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত স্বরণসভা পরিচালনা করেন কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না।
এতে শহীদ আলতাব আলী স্বরণে বক্তব্য রাখেন কেবিনেট মেম্বার আব্দুল ওয়াহিদ, কেবিনেট মেম্বার শাফি আহমেদ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি প্রেস মিনিস্ট্রার আকবর হুসেন, আলতাব আলী মেমরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষে হামিদা ইদ্রীস ও আলতাব আলী ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি সহ আরো অনেকে।
তবে টাওয়ার হ্যামলেট্স লেবার পার্টির বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলরদের কেউ কেউ স্বরণ সভায় উপস্থিত থাকলেও বক্তব্যের সুযোগ পাননি এতে কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য আলতাব আলী (১৯৫৩– ৪ মে ১৯৭৮) একজন বাংলাদেশী নাগরিক ছিলেন, যিনি ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের পূর্ব লন্ডনের হার্টলার স্টিটে বর্ণবিদ্বেষীদের হামলায় নিহত হয়েছিলন। পেশায় তিনি একজন বস্ত্র শ্রমিক ছিলেন।
১৯৭৮ সালের ৪ঠা মে বৃহস্পতিবার, সন্ধ্যা অণুমানিক ৭.৪০ মিনিট কাজ শেষে হানবারি স্টিট থেকে শেডওলে বাসস্থানে ফেরার পথে পূর্ব লন্ডনের এডলার স্ট্রিটে বর্ণবাদীদের হাতে খুন হন।
তার মৃত্যুর পর লন্ডনের বাঙালি সম্প্রদায় বর্ণবাদবিরোধী প্রতিবাদে নামেন। এসময় বাঙ্গালিদের সাথে লন্ডনে বসবাসকারী আফ্রিকান এবং এশীয়রা প্রতিবাদে যোগ দেন।
ফলে অল্পদিনের মধ্যেই আন্দোলন মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রশাসনের তরফে আলতাব আলীর তিন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বিচারের পরে আদালত ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসে এদের একজনকে ছুরিকাঘাতের জন্যে সাত বছরের জেল এবং বাকি দুইজনকে সাহায্য করার জন্যে তিন বছর করে জেল দেয়।
এরপর থেকে ১৯৯৮ সালে আলতাব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পূর্বলন্ডনের সেন্টমেরী পার্ক যেখানে আলতাব আলীকে খুন করা হয়েছিল, সেই পার্ককে আনুষ্ঠানিকভাবে আলতাব আলী পার্ক হিসেবে নামান্তর করা হয়।
আলতাব আলীর বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগন্জ জেলার ছাতক উপজেলায়।