মির্জা আবুল কাসেম, জগন্নাথপুর টাইমস ডেস্ক :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
বাংলা একাডেমি আজ ২৩শে শ্রাবণ ১৪৩২/৭ই আগস্ট ২০২৫ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪:০০টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মোঃ সেলিম রেজা। ‘নববর্ষ’ প্রবন্ধের আলোকে রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ চেতনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও সমালোচক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ও লেখক ড. মাহবুব হাসান এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া’র বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রহমান হাবিব। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
ড. মোঃ সেলিম রেজা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির ভুবনে অনন্য রূপদক্ষতায় জড়িয়ে আছেন। তাঁর মানবমুখী—উদার চিন্তা—ভাবনা আমাদের জন্য আজও প্রাসঙ্গিক।
অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘নববর্ষ’ প্রবন্ধে অনেক জরুরি বিষয় তুলে ধরেছেন যা কাল ছাপিয়ে কালোত্তর প্রাসঙ্গিকতার অনুভব সঞ্চার করে। তিনি এখানে তাঁর পরিবেশচিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বৃহৎ শিল্পের পরিবেশবিধ্বংসী রূপ দেখে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। দেশীয় শিল্পের পরিবেশ—সংবেদী বৈশিষ্ট্য তাকে আকর্ষণ করেছে। এছাড়াও তিনি যুদ্ধ, হিংসা ও রক্তপাতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যা মানুষের শত্রু, ধরিত্রীর শত্রু। রবীন্দ্রনাথ মানুষের জীবন থেকে তরুলতার প্রাণস্পন্দনকেও গুরুত্ব দিয়েছেন যারা পৃথিবীকে সজীব রাখে, সবুজ রাখে। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের পরিবেশভাবনার আলোকে আমরা এখনও আমাদের সমাজ ও দেশের পরিবেশকে বিশুদ্ধ, নিরাপদ এবং মানুষের বসবাসোপযোগী করে তুলতে পারি।
আলোচকদ্বয় বলেন, রবীন্দ্রনাথ মানবজীবনের প্রতিটি শাখা সম্পর্কে তাঁর ভাবনা ও দর্শন ব্যক্ত করে গেছেন একজীবনে রচিত অসাধারণ সৃষ্টিসম্ভারে। ব্যক্তিগত মনোলোক থেকে জাতীয় জীবনের জটিল পরিসর- সবক্ষেত্রেই তাঁর চিন্তার দ্যুতি ছড়ানো। তারা বলেন, পরিবেশচিন্তা ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রিয় এক প্রসঙ্গ। রবীন্দ্রকবিতা থেকে গান, কথাসাহিত্য থেকে প্রবন্ধ, নাটক থেকে চিত্রকলা- সব সাহিত্যক্ষেত্রেই নানাভাবে পরিবেশপ্রসঙ্গ উদ্ভাসিত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যন্ত্রসভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের কালেও পরিবেশকে উপেক্ষা করে মানুষ যথার্থ অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে আলোচনা ও চর্চা অনবরত হচ্ছে। আজকের প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ—প্রসঙ্গকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, রবীন্দ্রনাথ কোনও বিষয়েই নির্দিষ্টতাবাদী নন বরং সর্বতোবাদী। ফলে পরিবেশের প্রসঙ্গ যখন আসে তখন গাছপালা বা জলবায়ুর কথাই আসে না বরং দার্শনিকভাবে তা আরও বৃহৎ বিষয়কে ধারণ করে। রবীন্দ্রচিন্তায় পরিবেশকে সম্যকভাবে বুঝতে তার এই সংক্রান্ত প্রবন্ধ থেকে শুরু করে কবিতা—গান—কথাসাহিত্যের মতো সৃজনশীল সৃষ্টির কাছেও আমাদের যেতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আমিরুল মোমেনীন মানিক ও সায়েরা হাবীব। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী ও শিল্পী শিমু দে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কাজী রুমানা আহমেদ সোমা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি