জগন্নাথপুর টাইমসসোমবার , ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গ্রিসের কারপাথোস দ্বীপে ভ্রমণ, অনন্য অভিজ্ঞতা

Jagannathpur Times Uk
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪ ৪:৩৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ভ্রমণ কথা  /বিনোদন :

গ্রিসের কারপাথোস দ্বীপে ভ্রমণ, অনন্য অভিজ্ঞতা

রহমান মৃধা ::

সুইডেনের গ্রীষ্মকাল ও প্রকৃতিকে পৃথিবীর প্যারাডাইস বললেও বাড়াবাড়ি হবে না, তবুও সুইডিশরা নিজ দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই আমি একজন ভ্রমণপ্রেমিক, আর চাকরির সুবাদে বিশ্বের নানা দেশে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার স্ত্রীর বাবা স্প্যানিস এবং তার মা সুইডিশ, ছেলে-মেয়ে টেনিস খেলার সুবাদে বিশ্ব ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে—সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো আমাদের পরিবারের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

আমাদের ছেলে জনাথান এ সময় ডেনমার্কে টেনিস খেলায় ব্যস্ত, আর মেয়ে জেসিকা তার কাজে। হঠাৎ করেই জেসিকা বলল, ‘চলো, কয়েক দিনের জন্য গ্রীস হতে ঘুরে আসি। ‘ আমার স্ত্রী মারিয়া সঙ্গে সঙ্গে অফিস থেকে ছুটি নিল এবং মেয়েরও ছুটি হয়ে গেলো। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

সুইডেন থেকে গ্রীসে ফ্লাইটের দূরত্ব মাত্র ৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। আমাদের যাত্রা শুরু হয় ভোর ৬টায়, এবং দুপুরের মধ্যেই আমরা গ্রীসের কারপাথোস দ্বীপে পৌঁছে গেলাম। কারপাথোস (Karpathos) গ্রীসের দোদেকানিস দ্বীপপুঞ্জের একটি মনোরম দ্বীপ, যা ভূমধ্যসাগরের এজিয়ান সাগরের অংশে রোডস এবং ক্রিটের মধ্যে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য এই দ্বীপটি বিশ্বের নানা প্রান্তের পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

দ্বীপে পৌঁছে আমরা হোটেলে চেক-ইন করলাম এবং সাগরের নীল জলে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সাঁতার কাটা ও গোসলের পর, আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও সমুদ্র সৈকতে ফিরে গেলাম। কারপাথোসের সৈকতগুলোর পরিবেশ অপূর্ব এবং রোমাঞ্চকর। অধিকাংশ সৈকতই বালু এবং পাথরে ঘেরা, যেখানে ডুবে যাবার কোনো ভয় নেই। লবণাক্ত পানির কারণে দেহ সহজেই ভাসমান থাকে, যা সাঁতার কাটা ও গোসলের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করে তোলে। সারাদিন গোসল করলেও ক্লান্তি আসে না, বরং সাগরের নীল জল এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনকে প্রশান্তি দেয়।

সাঁতার এবং গোসলের পাশাপাশি আমরা দ্বীপের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেছি যেমন; পিগাদিয়া (Pigadia), যা দ্বীপের প্রধান শহর এবং বন্দর। এরপর ঐতিহ্যবাহী গ্রাম অলিম্পোস (Olympos) পরিদর্শন করেছি, যা পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এবং স্থানীয় উৎসব ও নাচের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া, আমরা অমোপি (Amoopi) এবং লেফকোস (Lefkos) সৈকতগুলোতে সময় কাটিয়েছি, যা নীল জল এবং জলক্রীড়ার জন্য পরিচিত।

দ্বীপের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন;

–  দ্বীপে নিজস্ব একটি বিমানবন্দর রয়েছে, যা যাতায়াতকে সহজ করে তোলে।

–  দ্বীপে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই ঘুরে দেখা যায় এবং প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পৌঁছানো যায়।

–  স্থানীয় বোট ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে, যা দ্বীপের বিভিন্ন সৈকত এবং অদ্ভুত প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার অন্যতম মাধ্যম।

কারপাথোসের মানুষ অত্যন্ত বন্ধুসুলভ এবং অতিথিপরায়ণ। তাদের আন্তরিকতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা আমাদের দ্বীপের অভিজ্ঞতাকে আরও আনন্দদায়ক করেছে।

কারপাথোসে ভ্রমণের খরচ মূলত বাজেট এবং ভ্রমণের সময়ের ওপর নির্ভর করে।

–  হোটেল বা রিসোর্টের রুমের ভাড়া প্রতি রাতে ৫০ থেকে ২০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। বিলাসবহুল হোটেলের জন্য খরচ ৩০০ ইউরোরও ওপরে হতে পারে।

–  স্থানীয় রেস্টুরেন্টে একবেলা খাওয়ার খরচ সাধারণত প্রতি জনের জন্য ১৫-২৫ ইউরো। বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে এই খরচ ৩০-৫০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।

তবে এ দ্বীপে খাদ্যের দাম বেশ চড়া। কারণ, অধিকাংশ খাদ্য আমদানি করা হয় মূল ভূখণ্ড থেকে এবং বেশিরভাগই ফ্রোজেন। স্পেনের দ্বীপগুলোর মতো যদি কারপাথোসও স্থানীয় উৎপাদনের ওপর জোর দেয়, তাহলে খাদ্যের মান উন্নত করা যেতে পারে।

–  দ্বীপে গাড়ি ভাড়ার খরচ প্রতিদিন গড়ে ৩০-৫০ ইউরো। বোট ট্যুরের জন্য জনপ্রতি ২০-১০০ ইউরো খরচ হতে পারে।

–  অনেক আকর্ষণীয় স্থান বিনামূল্যে দেখা যায়, তবে কিছু ঐতিহাসিক স্থান বা প্রদর্শনীতে প্রবেশ ফি ৫-১৫ ইউরো।

দ্বীপের স্যানিটেশন ব্যবস্থায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। গাইডের মতে, দ্বীপের বাড়ি এবং হোটেলগুলোর ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। টয়লেটে টিস্যু ফেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।

এই ভ্রমণে আমি লক্ষ্য করেছি, গ্রীসের দ্বীপগুলোর রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল কোম্পানিগুলোতে কাজ করা কর্মীদের বেশিরভাগই বিভিন্ন দেশ থেকে আসে এবং মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করে। তাদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়, এবং সামান্য গ্রীক ভাষা এবং ইংরেজী জানলেই এখানে কাজ পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য এটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা হতে পারে। তাছাড়া, বাংলাদেশের কূটনৈতিক দায়িত্বে যারা বিশ্বের নানা দেশে কাজ করেন, তাদের টু-ডু লিস্টে এ ধরনের চিন্তাভাবনা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এর ফলে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ তাদের মেধা এবং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নতুন সুযোগ পেতে পারে।

যাইহোক সবকিছু মিলিয়ে, কারপাথোস দ্বীপ একটি স্বর্গীয় স্থান। তবে খাবারের মান এবং স্যানিটেশনের দিকগুলোতে উন্নতির প্রয়োজন। গ্রীস যদি আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে চায়, তাহলে তাদের উচিত স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং খাদ্যের মান উন্নত করা। একইসঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থায় নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো প্রয়োজন।

এ ভ্রমণ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, আমি আশা করি এ ধরনের ভ্রমণ অন্যদেরও নতুন ভাবনার সুযোগ করে দেবে।

তবে ভূমধ্যসাগরের আমোপি সৈকত আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে এর হাজার বছরের ইতিহাসের কারণে। নিকোস নামের এক স্থানীয় ব্যক্তি একবার তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে শোনা একটি রহস্যময় গল্প শোনালেন। ছোট্ট এক পাহাড়ের পাশে সাগরের জল ঘুর্ণিমান। জিজ্ঞেস করলাম, ওখানে ঢুকলে কেউ কি ফিরে আসতে পারে? নিকোস বলল, যারা একবার ঢুকেছে, তারা আর ফিরে আসেনি। হাজার বছর ধরে এই ভয়ে কেউ এখানে সাঁতার কাটত না। ইতিহাসকে অস্বীকার না করেই ভ্রমণের এই মধুময় সময়টিকে উপভোগ করেছি। যদি কখনও কেউ এখানে আসেন, হয়তো এই রহস্যের আসল সমাধান বের করবেন।

লেখকঃ রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Email : rahman.mridha@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।