নিউজ ডেস্ক :
বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা- বেনের ২৫ বছর পূর্তি উৎসবে ড. রেহমান সোবহান ।
‘বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় রোধে চাই রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। রাজনীতিকেরা সোচ্চার হলেই জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে যে ভয়ংকর পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে জনগোষ্ঠী এবং জনপদকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’
এ অভিমত পোষণ করে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সমগ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আইন হচ্ছে না। অনেক সময়েই বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি/গোষ্ঠীর স্বার্থেও আইন তৈরি হচ্ছে। যাদের হাতে পয়সা আছে, যাদের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, ক্ষমতার এক্সেস আছে, প্রভাব আছে, তারা পরিবেশ দূষণের জন্যে দায়ী বা চিহ্নিত হলেও সত্যিকার অর্থে তাদের কিছুই করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় বেন/বাপার পরবর্তী কর্মসূচি হওয়া দরকার রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিবর্গকে এই আন্দোলনের সাথে আরো জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করা।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র ভোটের আগে যে ধরনের অঙ্গীকার করেছিলেন তার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এমন মনোভাবের পরিবর্তন ঘটাতে বেন এবং বাপাকে আরো জোরদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।’
রেহমান সোবহান সকলকে সরব হবার উদাত্ত আহ্বান জানান এ ইস্যুতে, ‘কারণ এটি হচ্ছে সমগ্র মানবতার সার্বিক কল্যাণে যথাযথ একটি প্রক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক’ তথা বেনের ২৫ বছর পূর্তি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহান আরো বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষায় নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের অফিস যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর সাথে ঢাকার মেয়রদের পরিচিত হওয়া দরকার। আমি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রকে নিউইয়র্কে দেখতে চাই। জানতে চাই যে, তারা নিউইয়র্কের মেয়রের অভিজ্ঞতার আলোকে রাজধানী ঢাকার পরিবেশ সুরক্ষায় ২/৩ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন। এরপর সেই পরিকল্পনার মেয়াদ ৫ বছর ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।’
সাবেক কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা রেহমান সোবহান উল্লেখ করেন, ‘বলবায়ু দূষণ রোধে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক একটি ধারণা নিতে হবে, এবং সে আলোকে বাংলাদেশেও কাজ করতে হবে।’
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরিব জনগোষ্ঠী এবং তাদের কন্যারা। বাস্তুচ্যুত হওয়ায় তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে। অপুষ্টিকর খাদ্য তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধা দিচ্ছে। এমনি অবস্থায় অনেক পিতা-মাতা অল্প বয়সে তাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই সন্তান ধারণ করায় সেসব তরুণী বধূরাও নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ সমাজ তথা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতির আলোকে জনসচেতনতা তৈরি করতে বাপার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণা টিমের প্রধান এবং বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে যদি বেনের আন্দোলনের পক্ষে না আনতে পারি তাহলে পরিবেশ সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং এই ইস্যুতেই ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আমরা একটি সমাবেশ করেছি।’
ড. নজরুল তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আরো বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি আনতে হলে আমাদের পরিবেশ আন্দোলনকে ব্যাপক জনগণের আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশে আমাদের সহযোগী সংগঠন ‘বাপা’কে (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) সাথে নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনার কাজ শুরু করেছি। যার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে এ বছরের ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটানো। এ ধরনের বড় সমাবেশ আমরা আগে কখনো করিনি।
তিনি বলেন, বেনের বয়স ২৫ বছর হলো। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানী, জাপান, ইউকে, সাউথ কোরিয়া, রাশিয়ার দেশপ্রেমিক প্রবাসীরাও এতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এখন বেনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ব্যাপকসংখ্যক প্রবাসীকে এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত করা। সামনের দিনগুলোতে সেটি হচ্ছে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
তিনি উল্লেখ করেন, বেনের দশক পূর্তির সমাবেশে আমরা সংকল্প গ্রহণ করেছিলাম প্রবাসের আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে আমাদের আন্দোলনে যুক্ত করার। তবে সে প্রয়াসে আমরা সফল হতে পারিনি কারণ, সে সময়েও পরিবেশের ইস্যুটি অনেক মানুষের মধ্যে পৌঁছেনি। এখন বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সে পরিস্থিতিতে এখন অনেকটাই পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষ অনুধাবনে সক্ষম হচ্ছেন জলবায়ু পরিবর্তণের ঝুঁকি কীভাবে মানবতাকে মুচড়ে দিচ্ছে। সকলেই পরিবেশের ইস্যুটি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা উপলব্ধি করছেন। বাংলাদেশে নিজ এলাকার নদীগুলো ধ্বংসের পথে, পানির প্রবাহ থমকে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় আমি আশা করবো বেনের সাথে যারা আছেন সকলকে সুসংগঠিত হয়ে বড় একটা ড্রাইভ দিতে হবে যাতে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের এসোসিয়েশনের কাছে সুস্পষ্ট বার্তা নিয়ে যেতে সক্ষম হই। আর এভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার সাথে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে সচেতন করা সম্ভব হবে দেশ ও প্রবাসেও।
উদ্বোধনী পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন বেনের বৈশ্বিক সমন্বয়কারী ড. খালেকুজ্জামান, জাকির হোসেন এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের পরিবেশ বিষয়ক প্রতিনিধি। এর আগে প্রবাস প্রজন্মের ছোট্টমণিরা ‘আমাদের সুন্দর পৃথিবী’ শীর্ষক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এ পর্বের সমন্বয় ঘটিয়েছেন রানু ফেরদৌস। তারও আগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায় পিএস ১৩১ এর বহিরাঙ্গনে শফিক মিয়ার ঢোলের সাথে একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন নজরুল কবীর, নুপুর চৌধুরী এবং উর্বি সাবিনা হাই। পরিবেশ ইস্যু আলোকে ‘তুমি নির্মল কর’ শীর্ষক একটি গীতি আলেখ্য ছাড়াও বেনজীর শিকদারের লেখা ‘পরিবেশ সুরক্ষা’র পুঁথি পাঠে অংশ নেন আনোয়ারুল হক লাভলু, সম্পা রহমান, কানিজ ফাতেমা পাপড়ি, সুমন শামসউদ্দিন ও লুসি হাসান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি