জগন্নাথপুর টাইমসশনিবার , ২৯ জুন ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. খেলা
  3. গ্রেট ব্রিটেন
  4. ধর্ম
  5. প্রবাসীর কথা
  6. বাংলাদেশ
  7. বিনোদন
  8. বিশ্ব
  9. মতামত
  10. রাজনীতি
  11. ল এন্ড ইমিগ্রেশন
  12. লিড নিউজ
  13. শিক্ষাঙ্গন
  14. সাহিত্য
  15. সিলেট বিভাগ
 
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচন ৪ জুলাই : ৩৩ বাংলাদেশী বাঙালি প্রার্থী

Jagannathpur Times Uk
জুন ২৯, ২০২৪ ৮:০০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান :

আগামী ৪ জুলাই ২০২৪ খ্রি, বৃহস্পতিবার, ব্রিটেনে জাতীয় নির্বাচন। বরাবরের মতো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবারও বাঙালি প্রার্থীরা বিভিন্ন দল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য মতে ৩৩ জন বাঙালি প্রার্থী লড়ছেন আসন্ন এই নির্বাচনে। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ থেকে ২ জন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি থেকে একজন, লিবডেম থেকে একজন ও ৮জন লেবারপার্টি থেকে নির্বাচন করছেন এবং অন্য ৮জন স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। বাকি ৫জন নির্বাচন করছেন ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন, রিফর্ম ইউকে এবং গ্রিন পার্টি থেকে।

তবে মূল ধারার রাজনীতিতে বাঙালিদের সম্পৃক্ততা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি ব্রিটেনে অবস্থান করছেন সেই অনুপাতে মূল ধারায় বাঙালিদের অংশগ্রহণ খুবই অপ্রতুল।

লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নুরুল হক আলী (গর্ডন এবং বুকান), রুশনারা আলী (বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো), আপসানা বেগম (পপলার ও লাইমহাউস), ড. রূপা হক (ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টন), টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক (হ্যাম্পস্টেড এবং হাইগেট), রুমি চৌধুরী (উইথাম), রুফিয়া আশরাফ ( দক্ষিণ নর্থহ্যাম্পটনশায়ার) এবং নাজমুল হোসাইন (ব্রিগ ও ইমিংহাম)।

লিবড্যাম থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন রাবিনা খান (বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি), তিনি রুশনারা আলীকে বেশ চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন। একই আসন থেকে গাজা ইস্যুকে সামনে নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন আজমল মাসরুর (বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি), ব্যারিস্টার শাম উদ্দিন (বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি) ও মো. সুমন আহমেদ (বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি )।

অন্যদিকে পপলার লাইম হাউসে বর্তমান লেবার এমপি আপসানা বেগমকে স্বতন্ত্র হিসেবে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তারি একসময়ের ঘনিষ্টজন এহতাশামুল হক। দেখা যাক ভোটারের রায় কোনদিকে যায়।

বর্তমান লেবার লিডার, সব জরিপে যিনি ভবিষ্যৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সেই স্যার কিয়ার স্টারমারকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি ওয়াইস ইসলাম (হলবর্ন এবং সেন্ট প্যানক্রাস)। এখানে গাজা ইস্যু নিয়ে কথা বলে ভোটারদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন ওয়াইস ইসলাম।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আতিক রহমান (টটেনহ্যাম), সৈয়দ শামীম আহসান (ইলফোর্ড দক্ষিণ), (স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন নাজ আনিস-মিয়াহ (ডানফার্মলাইন এবং ডলার)।

বাংলাদেশি অধ্যুষিত বো-স্ট্রাটফোর্ড আসনে ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও হালিমা খাতুন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এই দুই ব্রিটিশ বাংলাদেশি গাজা ইস্যু এবং হালিমা লেবার পার্টির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন।

এ ছাড়া ইলফোর্ড সাউথ থেকে গ্রিন পার্টির মনোনয়ন পেয়েছেন সৈয়দ সিদ্দিকী। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নূর জাহান বেগম। একই আসনে জর্জ গ্যালওয়ের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে নির্বাচন করছেন গোলাম টিপু। একই পার্টি থেকে হ্যাকনি সাউথ শোরডিচে মোহাম্মদ শাহেদ হোসেন নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেডফোর্ডে নির্বাচন করছেন প্রিন্স সাদিক চৌধুরী। এর আগে তিনি লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করেছিলেন ২০১৫ সালের নির্বাচনে। হঠাৎ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে চরম রক্ষণশীল দল রিফর্ম ইউকে থেকে ইলফোর্ড সাউথ থেকে প্রার্থী হয়েছেন রাজ ফরহাদ। ওল্ডহাম ওয়েস্ট, চ্যাডারটন এবং রয়স্টন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রাজা মিয়া, স্ট্রাটফোর্ড এবং বো থেকে নিজাম আলী ( স্বতন্ত্র) , বেক্সহিল এবং বেটল থেকে আবুল কালাম আজাদ ( স্বতন্ত্র) , ফয়সাল কবির (ওয়ার্কার্স পার্টি, আলট্রিনচাম এবং সেল ওয়েস্ট) থেকে, সৈয়দ সামসুজ্জামান (শামস) (গ্রীন পার্টি, ওল্ডহ্যাম ওয়েস্ট, চ্যাডারটন এবং রয়স্টন), মোহাম্মদ বিলাল (ওয়ার্কার্স পার্টি, ম্যানচেস্টার রুশোলমে), হাবিব রহমান (স্বতন্ত্র, নিউক্যাসল সেন্ট্রাল এন্ড ওয়েস্ট ) এবং মমতাজ খানম (সমাজবাদী, ফোকস্টোন) ।

বেশির ভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন মূলত গাজা ইস্যুকে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকাকে সমালোচনা করে। এতে বেশ চাপে আছেন চারবারের নির্বাচিত এমপি রুশনারা আলী। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ইস্যুতে পার্লামেন্টে ভোটদান থেকে বিরত থাকায় তার এলাকার ভোটাররা বেশ নাখোশ। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্পেইনে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি।

আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, যুক্তরাজ্যের হাউস অফ কমন্সে সংখ্যালঘু জাতিগত পটভূমি থেকে আনুমানিক ৬৫ জন সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এশিয়ান বংশোদ্ভূত। এই পরিসংখ্যানে লেবার এবং কনজারভেটিভ উভয় দলের এমপিরা অন্তর্ভুক্ত।

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বৃহত্তর বৈচিত্র্যের দিকে বৃহত্তর প্রবণতা প্রতিফলিত করে এশিয়ান এমপিদের প্রতিনিধিত্ব বিশেষভাবে কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। এর মধ্যে ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি পটভূমির মতো দক্ষিণ এশীয় ঐতিহ্যের এমপিরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সব প্রধান রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে এবং ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা শুরু করেছে। প্রতিটি দল বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, ঘরে ঘরে প্রচারণা থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার পর্যন্ত, বিভিন্ন ভোটার জনসংখ্যার সাথে জড়িত থাকার লক্ষ্যে এবং ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সমাধান করার লক্ষ্যে।

গত সাধারণ নির্বাচনে মাত্র চারজন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশি জনসংখ্যার আকারের তুলনায় এই প্রতিনিধিত্ব তুলনামূলকভাবে ছোট। বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, পার্লামেন্টে তাদের কণ্ঠস্বর পর্যাপ্তভাবে শোনার জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব এবং সম্পৃক্ততার প্রয়োজন ।

১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের প্রথম দিকের উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, তাদের অংশগ্রহণ ছিল আরও সম্প্রদায়-ভিত্তিক, রাজনৈতিক পদে থাকার পরিবর্তে স্থানীয় সমস্যায় মনোনিবেশ করেছিল।

ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের জন্য প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি স্থানীয় সরকার পর্যায়ে এসেছিল। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে, বেশ কিছু ব্রিটিশ বাংলাদেশি স্থানীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত হন, বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের মতো উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি জনসংখ্যা সহ এলাকায়। এই স্থানীয় রাজনীতিবিদরা তাদের সম্প্রদায়ের সাথে প্রাসঙ্গিক সমস্যা যেমন আবাসন, শিক্ষা এবং বর্ণবাদ বিরোধী প্রচেষ্টার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) হলেন রুশনারা আলী। তিনি ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো-এর জন্য লেবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন।

রুশনারা আলীর সাফল্যের পর, অন্যান্য ব্রিটিশ বাংলাদেশীরাও ব্রিটিশ রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্নের লেবার এমপি হিসেবে ২০১৫ সালে নির্বাচিত টিউলিপ সিদ্দিক এবং একই বছর ইলিং সেন্ট্রাল এবং অ্যাক্টনের লেবার এমপি হিসেবে নির্বাচিত ড. রূপা হক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। উভয় সংসদ সদস্যই সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা এবং সম্প্রদায়ের সংহতির জন্য সক্রিয় ছিলেন।
এছাড়াও, আফসানা বেগম ২০১৯ সালে পপলার ও লাইমহাউস আসনের এমপি নির্বাচিত হন।

এই এমপিদের বাইরে, ফয়সল হোসেন চৌধুরী এমবিই ২০২১ সালের মে থেকে লোথিয়ান অঞ্চলের স্কটিশ সংসদের (এমএসপি) সদস্য।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ব্রিটিশ বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে তাদের চিহ্ন তৈরি করে চলেছেন, সংসদীয় কমিটি এবং ছায়া মন্ত্রিসভার ভূমিকা সহ বিভিন্ন পদে কাজ করছেন, তাদের প্রভাব এবং দৃশ্যমানতা আরও বাড়িয়েছেন। তাদের সম্পৃক্ততা শুধুমাত্র বাংলাদেশী সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এমন সমস্যাগুলিকে হাইলাইট করেছে, বরং বৃহত্তর সামাজিক উদ্বেগগুলিকেও প্রভাবিত করেছে, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে অবদান রেখেছে।

যুক্তরাজ্যের মূলধারার রাজনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের যাত্রা স্থানীয় সক্রিয়তা থেকে জাতীয় বিশিষ্টতার দিকে ধীরে ধীরে কিন্তু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রতিফলন ঘটায়। এই গতিপথ ব্রিটিশ রাজনৈতিক জীবনের ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তিকে আন্ডারস্কোর করে, আরও প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের দিকে একটি স্থানান্তরকে চিহ্নিত করে।

এ পর্যন্ত আমরা ৩৩ জন প্রার্থীকে জানতে পেরেছি । এমন আরও প্রার্থী থাকতে পারে যা আমরা এখনও সন্ধান করতে পারিনি। এর মধ্যে লেবার পার্টির আটজন, কনজারভেটিভ পার্টির দুইজন, এসএনপির একজন এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের একজন প্রার্থী রয়েছেন। বাকি প্রার্থীরা স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল থেকে লড়ছেন।

প্রধান দলগুলোর সীমিত প্রতিনিধিত্ব, বিশেষ করে লেবার পার্টি, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বাঙালি সম্প্রদায়ের কম প্রতিনিধিত্বের একটি বিস্তৃত ইস্যুকে তুলে ধরে। এই বৈষম্য একটি বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল জুড়ে আরও অন্তর্ভুক্ত প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি।