তুহিন মাহামুদ:
স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গে ‘ক্রস পার্টি গ্রুপ অন বাংলাদেশ’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতামূলক সভা। সম্প্রতি স্কটিশ পার্লামেন্টে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিজি সদস্য ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিতি হওয়া এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পরিচয় পর্বের মধ্য দিয়ে এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা শুরু হয়। স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য ফয়সাল আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা এবং সম্পর্ক জোরদারের লক্ষে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, সাহিত্য ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন। ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী পুনরায় গ্রুপের আহ্বায়ক নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন সফরে যান এবং ১৯৭১ সালে মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এই ঐতিহাসিক সফর ছিল একটি বড় পদক্ষেপ। এর সাধারণ মূল্যবোধের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য এবং স্কটল্যান্ডের সাথে মহান বন্ধুত্বে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা বিষয়সমূহের দিকগুলো কথা বলেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিগত ৫২ বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
হাইকমিশনার ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সংগ্রহ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলগত স্বার্থসহ নানা বিষয়ে স্কটল্যান্ডের সাথে বিশেষ সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি স্কটল্যান্ডের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদারসহ স্কটল্যান্ডে বিনিয়োগের জন্য আরও উৎসাহিত করেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ফোকাসসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকবে বলেও জানান।
বিএইচসি (বাংলাদেশ হাইকমিশনার) বাংলাদেশে সরকারের উদার নীতি ও মানবিক মূলবোধের কথা উল্লেখ্য করে বলেন, শেখ হাসিনা ১.৩ মিলিয়ন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এর কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন নির্যাতিত, নিপীড়িত শরণার্থী। শেখ হাসিনা সে ব্যথা নিজে অনুভব করেন। বিএইচসি বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ জন্য যে, শরণার্থীদের সাহায্য সঙ্কুচিত হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং প্রতি বছর ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সেবা বাবদ খরচ হচ্ছে।
বিএইচসি নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব, জলবায়ুর ন্যয়বিচার, সমুদ্রের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আইন, তৈরি পোষাক কারখানা, পরিবহন কাঠামো, টেকসই উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভোক্তা বাজারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন।
বিএইচসি ক্রস-পার্টির প্রতি কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেন, যেমন:
১) বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে সংসদে আলোচনা করা ও ১৯৭১ সালকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি সাধারণ পদ্ধতির আহ্বান।
২) রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার জন্য স্কটিশ পার্লামেন্টের আহ্বান উদ্বাস্তু সংকট।
৩) স্কটল্যান্ড এন্টারপ্রাইজের সাথে একটি ইএমইউ (EMU) সই উৎসাহিতকরণ।
৪) ডিজিটাল উদ্ভাবন: বাংলাদেশের ৬৫% তরুণ জনসংখ্যা। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এন্টারপ্রাইজ অনুসরণ করছে এবং ডিজিটাল উদ্ভাবন ও আশা করে, তারা স্কটল্যান্ডের সাথে কাজ করতে পারবে এই সম্প্রসারণশীল খাতে।
৫) স্মার্ট সিটির প্রস্তাব
অনুষ্ঠানে ড. ইব্রাহীম রশিদ বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার উপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। যার ফলশ্রুতিতে ইউকেতে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ আরও সম্প্রসারিত হবে, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। এছাড়া আজরিনা আফরিন স্কটিশ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শেষে স্কটিশ পার্লামেন্ট সদস্য, শ্যাডো কালচারাল মিনিস্টার ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, সাঈদা মুনা তাসনিম (বিএইচসি), ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার কাজী জিয়াউল হাসানসহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানানো হয়।